News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

শুল্কমুক্ত আমদানি ও নতুন ধান উঠার পরও আমন মৌসুমেই অস্থির চালের বাজার

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খাদ্য 2024-12-17, 8:02am

img_20241217_075918-f299bf32411c26f2fd3a1a4115206c521734400932.jpg




দেশজুড়ে আমনসহ বেশ কয়েকটি জাতের নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি শুল্ককর প্রত্যাহার করে নেওয়ার সরকারি ঘোষণার পর শুল্কমুক্ত চাল আমদানিও হয়েছে। তবু খোদ আমন মৌসুমেই বাড়ছে চালের দাম! অস্থির এই চালের বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় বেড়েছে প্রায় দুই থেকে আড়াইশত টাকার বেশি। যা প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে দেশজুড়ে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চাল আড়তদার-ব্যবসায়ীরা বর্তমানেও সক্রিয় বিগত সরকারের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন আর সরকারি কর্মকর্তারা উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত দিচ্ছেন। আমনের ভরা মৌসুমে চালের এমন দামের কারণে ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। মূলত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ধান মজুতের কারণে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে এবং বাজারে দাম বেড়েছে বলে দাবি তাদের। তবে আমন ধান কাটার মৌসুমে চালের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে রহস্যজনক বলেছেন সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতা ও ভোক্তারা।

দুই সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে চালের দাম বৃদ্ধির মধ্যে দেশের বিভিন্ন মোকাম ও স্থলবন্দরে খোঁজ নিয়ে সোমবারও (১৬ ডিসেম্বর) এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের খাদ্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুর, সরু চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়া, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা থেকে প্রায় অভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৩৫ ভাগ চাল খাদ্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুর থেকে সরবরাহ হয়। জেলার প্রধান চালের মোকাম বাহাদুর বাজারের এনএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) জানান, হঠাৎ করে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়, মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৭২ ও ৭৪ টাকায়, গুটি স্বর্ণা প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকায়। এছাড়াও কাটারি সিদ্ধ ১১০ টাকা দরে, নাজিরশাইল ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা, ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ২শ থেকে ২৫০ টাকা। তবে মোটা জাতের দাম ব্যাপক বাড়লেও সেই তুলনায় চিকন চালের দাম বেড়েছে সামান্য।

এদিকে, শুল্ককর প্রত্যাহার করে নেওয়ার সরকারি ঘোষণার পর ২৫ দিনে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। তবে এই সময়ে ৩ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যদিও আমদানির শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)। কিন্তু লক্ষ্যমাত্র পূরণ হয়নি। এছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২৯ দিনে ৯৬৯ ট্রাকে ৩৫ হাজার ৪৩ টন চাল আমদানি করা হয়েছে।

তবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আনা হলেও সাতক্ষীরা জেলা সদরের বৃহৎ মোকাম সুলতানপুর বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, চিকন বাসমতি চাল প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, চিকন আটাশ জাতের চাল কেজি প্রতি ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা এবং মোটা জাতের চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা। এ ছাড়া আমদানিকৃত মোটা স্বর্ণা ও জামাইবাবু জাতের চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারতীয় চাল আমদানিতে দেশি চালের বাজারে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে, কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত পৌর বাজার এবং বড় বাজারে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবধরনের চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিনিকেট (সরু) চাল ৭০ টাকা থেকে ৭৪ টাকা, বাসমতি চাল ৯২ টাকা, কাজললতা ৭০ টাকা, আঠাশ (মোটা) চাল ৫৮ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় সব ধরণের চালে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং মধ্যবিত্ত ও উচ্চ শ্রেণির সবচেয়ে বেশি পছন্দের মিনিকেট চালের সবচেয়ে বড় মোকাম হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত কুষ্টিয়ার খাজানগর মিলগেটেও সবধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। এই মোকামে এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত দুই দফায় চালের এই দাম বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান জানান, ডিসেম্বরের প্রথম দিক থেকেই কুষ্টিয়ায় চালের দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যে মিনিকেট চাল ১৫ দিন আগে ৫০ কেজির বস্তা ছিল ৩৪০০ টাকা। এখন ৩৫০০ থেকে ৩৫৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য চালের মধ্যে বাসমতি চাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে। আঠাশ চাল কেজিতে ২ টাকা এবং স্বর্ণাসহ অন্যান্য চালের দামও ১৫ দিনের ব্যবধানে ২ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ বাজারে মোটা স্বর্ণা এবং আঠাশ মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়েছে। মিনিকেটের মৌসুম আসতে আরও তিন মাস সময় লাগবে, কিন্তু এরই মধ্যে মিনিকেট ধান প্রতিমণে ২০০ টাকা করে বেড়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রামে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে আমন ধান থেকে চট্টগ্রামের চালকলগুলোতে যেসব চাল উৎপাদন হয়, সেগুলোর দাম বেড়েছে। এসব চালের মধ্যে কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ থেকে ৮ টাকা। চট্টগ্রাম নগরে চালের আড়তগুলোর মধ্যে অন্যতম পাহাড়তলি বাজার। বন্দরনগরীর চাক্তাই এলাকায় চালের বৃহৎ আড়ত ও চালকলগুলো রয়েছে। বহদ্দারহাট বাজারের চালের পাইকারি দোকানগুলো থেকেও নগরে চালের সরবরাহ হয়। এসব বাজারে গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চালের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়।

এর মধ্যে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে প্রতি কেজি কাটারি ৭০ টাকা, জিরাশাইল ৬৫, নাজিরশাইল ৭৬, মিনিকেট আতপ ৬৪, মিনিকেট সেদ্ধ ৫৭, স্বর্ণা ৫৩ ও গুটি স্বর্ণা ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে গত শুক্রবার বাজারে কাটারি ৭৬, জিরাশাইল ৭৩, নাজিরশাইল ৮০, মিনিকেট আতপ ৬৮, মিনিকেট সেদ্ধ ৬১ ও স্বর্ণা ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হয়।

অন্যদিকে, সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিকেজি ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। মিনিকেট চালের মানভেদে প্রতি কেজি ৭২-৮০ টাকা, নতুন আটাইশ ৫৫-৬০ টাকা, পুরাতন আটাইশ ৬০-৬৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬-৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে চাল সংগ্রহ করতে চেয়ে কুষ্টিয়ায় চাল কেজিতে ৪৭ টাকা, আর ধান ৩৪ টাকা নির্ধারণ করে দেো হয়। কিন্তু কুষ্টিয়ায় এখনও কৃষক ও ব্যবসায়ীর মাঝে সরকারি গুদামে ধান-চাল দেয়ার আগ্রহ দেখা যায়নি। চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ১৯ হাজার ১০০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল, ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আতপ এবং ৬ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ধান প্রতি কেজিতে সরকার ৪৭ টাকা বেঁধে দিলেও খরচ হচ্ছে ৫২ টাকার ওপরে। এতে ঘাটতি হবে ৫ টাকার মতো বলে জানান কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা।

অন্যদিকে, হঠাৎ চালের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে কুষ্টিয়ার খাজানগরের একাধিক চাল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খাজানগরে ১০-১২ জন ব্যবসায়ী দীর্ঘ প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে মিনিকেট চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের অতি ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিন্ডিকেট করে দফায় দফায় চালের দাম বাড়িয়েছেন তারা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর এসব ব্যবসায়ীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলে জানান তারা। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি অনুরোধও করেছেন কুষ্টিয়ার ওই ব্যবসায়ীরা।

আরটিভি