News update
  • Hurricane Melissa displaces thousands across Caribbean     |     
  • Trump’s Nuclear Test Directive Sparks Global Alarm     |     
  • Bangladesh Lost $24B in 2024 as Extreme Heat Hits Economy     |     
  • Remittance Surpasses $10b in Four Months of FY 2025-26     |     
  • Dhaka residents struggling with ‘unhealthy’ air quality     |     

চালের দাম কেন বাড়ছে, কীভাবে সামাল দেবে সরকার?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খাদ্য 2025-01-10, 8:26pm

ertwtert-f5169540f9512f298ccd4705b37e70251736519249.jpg




বাংলাদেশের বাজারে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে হুট করে বেড়ে যায় চালের দাম। এর পেছনে 'মজুতদারি'কে দায়ী করে চাল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

বাজার ভেদে গত এক মাসে চিকন চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে সাত এবং মোটা চালের দাম দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রি ধান-২৮ এর মতো মধ্যম মানের চাল পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৫২ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারে ৬০ টাকার নিচে ব্রি-২৮ বা ২৯ পাওয়া যাচ্ছে না।

আমন ধান হেমন্তের শেষ বা শীতের শুরুতে কাটা হয় বলে চালের বাজারে এই সময়টা আমনের মৌসুম নামে পরিচিত।

এমন সময়ে চালের মূল্যবৃদ্ধিকে 'অযৌক্তিক' বলে উল্লেখ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

"আমাদের কাছে মনে হচ্ছে একটা সাময়িক মজুতদারির ঘটনা ঘটছে," বলেন তিনি।

গত বছর দেশের কয়েকটি জেলায় অকাল বন্যার কারণে আমনের উৎপাদন কম হয়েছে উল্লেখ করে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, চাল আমদানির ওপর থেকে শুল্ক, কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে চালকল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের নেতাদের দাবি, মজুতের দায় বড় কর্পোরেট বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর। মিল মালিক বা সাধারণ ব্যবসায়ীরা এর জন্য দায়ী নয়।

"এবার কোনো মিলারই অতিরিক্ত চাল মজুত করেননি। অধিকাংশ মিলারের কাছে সরকার নির্ধারিত যে মজুত তাও নেই," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এ এম লায়েক আলী।

খুচরা পর্যায়ে দাম

চড়া হওয়ার কারণে গত বছরজুড়ে একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে চালের দাম।

গত নভেম্বরে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, "আমন ধান বাজারে আসলে দাম কমবে।"

তবে বাস্তবে তা হয়নি।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানভেদে মোটা চাল কেজিতে ৫২ থেকে ৫৮ টাকা, মাঝারি চাল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা এবং সরু চাল ৭০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মোটা ও মাঝারি মানের চালের ক্রেতা মূলত স্বল্প আয়ের মানুষ।

এই মানের চালের দাম খুব একটা বাড়েনি বলে দাবি ঢাকার বাদামতলী-বাবুবাজার চাল মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিনের।

"মোটা চাল খুব একটা বাড়ে নাই। আমন চাল মোটা আছে। এইটা কেজিতে দুই টাকার মতো বাড়ছে। তাও পাবলিক কম কিনে," বলছিলেন মি. উদ্দিন।

মধ্যবিত্তের তালিকায় থাকা মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম ৭৫ টাকা থেকে ওপরের দিকে।

তবে দাম বাড়লেও এখন পর্যন্ত সরবরাহ স্বাভাবিক আছে বলে জানান নিজাম উদ্দিন।

একটু ভালো মানের মিনিকেট নিতে হলে অন্তত ৮০ টাকা গুণতে হবে বলে জানালেন ঢাকার লালবাগ এলাকার নবাবগঞ্জ বাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. আব্দুল আলীম।

"আড়ৎ থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। রশিদ দেখলেই বুঝতে পারবেন," বলছিলেন তিনি।

এদিকে, দ্রব্যমূল্যের কারণে আগে থেকে চাপে থাকা ক্রেতাদের খরচের পাল্লা বাড়িয়েছে চালের দর বৃদ্ধি।

সীমিত আয় ও খেটে খাওয়া মানুষের তরফে ভোগান্তির অভিযোগ শোনা গেলো।

নবাবগঞ্জ বাজারে নিত্যপণ্যের কেনাকাটা করতে আসা রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, "সবজির দামটা একটু নাগালে আসতে না আসতে চালের দামটা বাইড়া গেলো। আমাদের চাপ আর কমলো না।"

'সাময়িক মজুতদারি' ও আমদানি

চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেন, "আমাদের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। সরকারের নিজস্ব যে মজুত সেখানেও ঘাটতি নেই। স্থানীয় উৎপাদনেও ঘাটতি নেই।"

"আমরা আমনের ভরা মৌসুম পার করছি এই মুহূর্তে। কাজেই এই মুহূর্তে বাজারে এই মূল্যস্ফীতিটার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ আমরা দেখছি না," যোগ করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, "ভোক্তা পর্যায়ে বিশেষ করে নাজিরশাইল ও মিনিকেট, এই দুটি চালের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।"

পাইকারি পর্যায়ের সঙ্গে খুচরা পর্যায়ের মূল্যবৃদ্ধি সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন মি. বশিরউদ্দীন।

"দুটো ঘটনা, আমরা দেখলাম যে হোলসেল লেভেলে যে ধরনের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তার থেকে রিটেল লেভেলে দামের বৃদ্ধিটা অনেক বেশি হয়েছে। এটার কারণ আমরা বোঝার চেষ্টা করছি। কারণ এটা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে আমাদের কাছে," বলেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাল আমদানির ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণের কথা ভাবছে। উদাহরণ হিসেবে আলুর দামের কথা বলেন মন্ত্রণালয়টির উপদেষ্টা।

"আলুর ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি। আমরা উদারীকরণ করেছি, একটা পর্যায়ে আলুর দাম ব্যাপকভাবে নেমে এসেছে। বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য আপাতত আমদানিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যাপক আমদানির প্রস্তুতি চলছে। আমাদের ধারণা, এর ফলে স্থানীয় বাজারে মূল্যের হ্রাস ঘটবে," যোগ করেন তিনি।

নেপথ্য কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন আরো বলেন, "আমাদের কাছে মনে হচ্ছে একটা সাময়িক মজুতদারির ঘটনা ঘটছে।"

চালের দরে রাশ টানতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যে ব্যাপক আমদানির কথা বলেছেন তার পরিমাণ সম্পর্কে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হবে।

এছাড়া, মিয়ানমার থেকে জিটুজি বা সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এক লাখ টন চাল আমদানি চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান মি. মজুমদার।

পাকিস্তান থেকেও ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করতে আলোচনা চলছে।

উপদেষ্টা বলেন, এ মাসে মোট এক লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আসবে। মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল জিটুজি এর মাধ্যমে এবং উন্মুক্তভাবে ৭৫ হাজার টন চাল আসবে।

ভারত থেকেও জিটুজি'র মাধ্যমে চাল আমদানির আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

চাল

চাল ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ চাল উৎপাদন হয় চার কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন।

তবে এবার আমন মৌসুমে প্রত্যাশিত মাত্রায় চাল পাননি বলে দাবি চাল ব্যবসায়ীদের।

"ধানের চাহিদাটা এবার বেশি। এবার আমনের আবাদ তুলনায় ফলনের রেশিওটা (অনুপাত) কম হয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন চাল ব্যবসায়ী মো. নিজাম উদ্দিন।

ব্যবসায়ীরাও অন্যতম কারণ হিসেবে গত অগাস্টের আকস্মিক বন্যার কথা বলছেন।

জুলাই থেকে অগাস্টের মাঝামাঝি সময় হলো রোপা আমনের রোপনের সময়। অগাস্টের শেষ ভাগে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে। এতে জনজীবনের মতোই বিপর্যস্ত হয় কৃষি উৎপাদনও।

তবে মজুত নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে মতভেদ আছে ব্যবসায়ীদের।

"অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রত্যেকটা মিলারের কাছে মজুত কম," দাবি চালকল মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ লায়েক আলীর।

"একজন মিলারের ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) কতটুকু, সেই তথ্য সরকারের কাছে আছে। এখন যদি উপদেষ্টা মহোদয় মনে করেন কেউ মজুতদারি করতেছেন, প্রত্যেকটা উপজেলায় তার লোক আছে তাদের দিয়ে অনুসন্ধান করে দেখুন," বলেন মি. আলী।

মি. আলীর দাবি, যারা অন্যান্য কনজ্যুমার গুডস্ এর সঙ্গে চালটাকেও প্যাকেট করে বিক্রি করে তাদের কাছে মজুত থাকতে পারে।

যদিও এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়া, সাধারণ মানুষ সংকটের আশঙ্কায় বেশি করে কিনে রাখছে কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন এই চালকল মালিক।

ধান কেনার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায়, দাম বেশি পড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ঢাকার বাবু বাজার চাল মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, এখন বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ধান কিনতে হয়, আগে এমনটা ছিল না।

"সেই প্রতিযোগিতার প্রভাব পড়ে চালের দামে," যোগ করেন তিনি।

তবে এখনো বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক আছে জানিয়ে মি. উদ্দিন বলেন, ধানের দাম ভালো না পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে এই প্রতিযোগিতারও একটা ইতিবাচক দিক আছে।

আমদানি করা চালের ক্ষেত্রে ডলারের হারের কারণেও দামে তারতম্য দেখা দেয় বলে দাবি তার।

চাল

এদিকে, পাইকারির সাথে খুচরা বাজারে দামের অসঙ্গতির যে অভিযোগ বাণিজ্য উপদেষ্টা তুলেছেন তার সঙ্গে দ্বিমত করছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী।

মো. আল আমিন নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী জানালেন, পাইকারী বাজারেই সাত থেকে আট টাকা দাম বেড়েছে। তারা অতটা বাড়াননি।

"আমরা আগেও কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা লাভ করতাম। এখনো তাই করি," যোগ করেন মি. আল আমিন।

নবাবগঞ্জ বাজারের চাল বিক্রেতা আব্দুল আলীম এক পর্যায়ে ক্রয় রশিদ বের করে দেখালেন যে তিনি ৭৯ টাকা দরে যেই চাল কিনেছেন, সেটা ৮১ টাকায় বিক্রি করছেন।

তার দাবি, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে ব্যবসা করতে হয় বলে খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত দাম রাখা সহজ নয়।