News update
  • “BD cannot compromise with the ‘zero tolerance’ approach to terrorism”      |     
  • Lightning strike in Germany’s Dresden injures 10     |     
  • “US decision against former army chief Gen Aziz not under visa policy”      |     
  • Police foil ‘Ganosamhati Andolon’s bid to siege Bangladesh Bank     |     
  • Iranian President’s death: BD announces state mourning on Thursday     |     

লোকসভা নির্বাচন: মোদি কি ৪০০ আসন জিততে পারবেন?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2024-04-18, 7:56am

73dbcf7fa059d91ada3f7ef6eb996a21b301cac452beaafb-5a00d0a0b0581a467a778c4a277726d11713405396.jpg




একদিন বাদেই ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) শুরু হবে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। ছয় সপ্তাহব্যাপী এই নির্বাচনে এবার প্রায় একশ’ কোটি ভোটার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। যার মধ্যদিয়ে এ নির্বাচন হতে চলেছে বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় নির্বাচন।

প্রথম ধাপের নির্বাচন সামনে করে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যেতে চাইছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

অন্যদিকে বিজেপিকে উৎখাত করে ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (আইএনসি)।

এবারের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স তথা এনডিএ জোটের জন্য চারশ’ আসন জেতার লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

সবশেষ তথা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি) এককভাবে ৩০৩টি আসন জিতেছিল। যার ফলে এনডিএ জোটের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৩৫২টিতে। 

নির্বাচনী প্রচারণায় ‘আব কি বার ৪০০ পার’ এই স্লোগানটি বারবার আওড়াচ্ছেন মোদি। তার দাবি, এবারের লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ ৪০০টির বেশি আসন পেতে যাচ্ছে। 

এর মধ্যে বিজেপি এককভাবে জিতবে ৩৭০টি আসন। কিন্তু বিজেপি ও এর নেতারা স্লোগান তুললেও বিষয়টি তাদের জন্য ততটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতের নির্বাচনের ৭৭ বছরের ইতিহাসে কোনোদল একবারই ৪০০টির বেশি আসন পেয়েছিল। ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বর্তমান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ৪০০টির বেশি আসন পেয়েছিল।

এবার লোকসভা নির্বাচনে মোদির চারশ’ আসন জেতার প্রত্যাশা সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, তার এই আশা পূরণ হবে কি হবে না তা নির্ভর করছে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপর। আ সেটা হলো ভারতের দক্ষিণাঞ্চল। অঞ্চলটি বিজেপির জন্য বহু আগে থেকেই দুর্ভেদ্য বলে পরিচিত।

ভারতের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের আবাস এই দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যে। সেগুলো হলো–তামিল নাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা ও তেলেঙ্গানা। এছাড়া কেন্দ্রীয় শাসনাধীন পন্ডিচেরী ও লাক্ষাদ্বীপ রয়েছে এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলটিকে অর্থনৈতিকভাবে ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই দক্ষিণাঞ্চল ভারতের জিডিপিতে অবদান রাখে ৩০ শতাংশের বেশি। তবে ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কৃতিত্বের দাবিকারী নরেন্দ্র মোদির দল ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই অঞ্চলের ১৩১টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩০টিতে জয় পেয়েছিল। 

যার বেশিরভাগই এসেছিল কর্ণাটক থেকে। তামিল নাড়ু, কেরালা ও অন্ধ্র প্রদেশে ছিল ‘বিগ জিরো’। এবারও এমনটাই হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

গত নির্বাচনে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৩০৩টি, যার সিংহভাগই ছিল উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে। তাই ২০১৯ সালের হিসাবকে মাথায় রেখে এবারের লক্ষ্যপূরণে বিজেপিকে দক্ষিণের দিকেই জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির সঙ্গে জোট বেধে অংশ নেয়া দলগুলো এই অঞ্চলে মোটেও ভালো ফলাফল করতে পারছে না। এ বিষয়ে ভারতের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামণের স্বামী পারাকালা প্রভাকর বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভারতের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভেদই প্রতিফলিত হবে।

ভারতের দক্ষিণে বিজেপির এমন অবস্থা নতুন নয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে উত্তরের রাজ্যগুলোর চেয়ে এগিয়ে থাকা দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না, যা বিজেপির রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রভাকরের মতে, হিন্দু জাতীয়তাবাদ বা হিন্দুত্বের দর্শন দক্ষিণের রাজ্যগুলোকে আকর্ষণ করতে পারছে না।

উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় প্রতি ১ হাজার জনের মধ্যে শিশু মৃত্যুহার মাত্র ৬। যা যুক্তরাষ্ট্রের সমান। অন্যদিকে বিজেপি-শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশে এই সংখ্যা ৪৮, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মৃত্যুহারের কাছাকাছি। 

এই আপেক্ষিক উন্নয়ন সূচকগুলোর কারণে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আদর্শ খুব একটা নিচ্ছে না দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ, বলেছিলেন প্রভাকর।অন্ধ্র প্রদেশের আঞ্চলিক শক্তি তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সাবেক নেতা ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক মন্ত্রী কিশোর চন্দ্র দেও। টিডিপি এবারের নির্বাচনে বিজেপির সাথে জোট গড়ার সিদ্ধান্ত নিলে ফেব্রুয়ারি মাসে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

পারাকালা প্রভাকরের কথার সাথে সহমত পোষণ করে কিশোর চন্দ্র দেও। তিনি বলেন, ‘উত্তর ভারতে ধর্মীয় জিগির তুলে ফায়দা লোটা সম্ভব। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে সেটা সম্ভব নয়। 

তার কথায়, এখানে রামমন্দির কোনো ইস্যু নয়। নির্বাচন সামনে করে সম্প্রতি মোদি উত্তর প্রদেশের অযোদ্ধায় রামমন্দির উদ্বোধন করেন মোদি। যা ষোড়শ শতকে নির্মিত বাবরি মসজিদের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। যে মসজিদ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর গুড়িয়ে দেয় উগ্র হিন্দুরা।

সেক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি এবার কৌশল নিয়েছেন তামিল নাড়ু রাজ্যকে লক্ষ্য করে। লোকসভায় রাজ্যটির ৩৯টি আসন রয়েছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) যে রাজ্যগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার মধ্যে এটাও রয়েছে।

নির্বাচন সামনে করে এরই মধ্যে ছয়বার তামিল নাড়ু সফর করেছেন মোদি। এছাড়া বিজেপির এখানকার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন অ্যাপ, যেগুলোর মাধ্যমে রাজনৈতিক বক্তব্য অনূদিত হচ্ছে হিন্দি থেকে তামিল ভাষায়। 

দেশটির উত্তর ও দক্ষিণ অংশের এই বিভেদ আবেগের কোনো বিষয় নয়। বিষয়টি নির্ভর করছে দেশটির উত্তর ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোর উন্নয়নের সত্যিকার তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর। 

আল জাজিরা থেকে সংক্ষেপে অনূদিত। সময় সংবাদ।