News update
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     
  • China calls for implementation roadmap for new finance goal     |     
  • New gas reserve found in old well at Sylhet Kailashtila field     |     
  • Revenue earnings shortfall widens in October     |     

ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা নিয়েও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পাকিস্তান-ভারত

বিবিসি বাংলা ঘৃনা-প্রচারণা 2025-03-14, 6:08pm

y565634-96c808000df836f6627cc4872743109d1741954097.jpg




বেলুচিস্তান অঞ্চলে চারশোরও বেশি যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা এবং যাত্রীদের জিম্মি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে জড়িয়েছে পাকিস্তান এবং ভারত। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে।

ওই ঘটনার সঙ্গে ভারতের যোগ রয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছিল পাকিস্তান। সেই অভিযোগ খারিজ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাল্টা পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, পাকিস্তানের এই অভিযোগ 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন'। ভারতের সঙ্গে এই হামলার কোনও যোগ নেই।

শুধু তাই নয়, নাম না করে পাকিস্তানকে 'সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র' বলেও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি অন্য কোনও দেশের দিকে আঙুল তোলার আগে পাকিস্তানকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবেলার কথাও বলেছেন।

এর আগে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফাকত আলি খান অভিযোগ করেন, পাকিস্তানে 'সন্ত্রাসবাদ' চালাচ্ছে ভারত।

তিনি দাবি করেন, চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসে যে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলা চালিয়েছিল, তাদের সঙ্গে আফগানিস্তানের যোগ রয়েছে। ভারতের মতো আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পাকিস্তানের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে সাম্প্রতিক এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনওরকম যোগ নেই। একইসঙ্গে পাকিস্তানকে আভ্যন্তরীণ 'নিরাপত্তা এবং সমস্যার' দিকে মনোযোগ দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে আফগানিস্তান।

চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় পৌঁছানোর পর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার মুখ পড়ে। হামলার সময় ট্রেনে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর শতাধিক সদস্যসহ কমপক্ষে চারশোজন যাত্রী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। উপস্থিত যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষকেই জিম্মি নেয় আক্রমণকারীরা।

ক্রমে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। জিম্মিদের উদ্ধার করতে শুরু হয় বিশেষ অভিযান। প্রায় দুইদিন ধরে চলা এই অভিযানে নিহতদের সংখ্যা সঠিকভাবে এখনও জানানো না হলেও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছে যে জিম্মি যাত্রীদের উদ্ধারের অভিযান সম্পূর্ণ হয়েছে এবং এতে ৩৩জন আক্রমণকারীর মৃত্যু হয়েছে।

এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই তার দায় স্বীকার করে বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এর আগেও এই গোষ্ঠী ওই এলাকার বিভিন্ন অংশে আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ। সেই তালিকায় সেনা ছাউনি, রেলওয়ে স্টেশন এবং ট্রেনও রয়েছে। তবে এই প্রথম তারা কোনও ট্রেন হাইজ্যাক করে।

ওই ট্রেন জিম্মি করে বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি জানায় বালোচ লিবারেশন আর্মির সদস্যরা।

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযোগ

মঙ্গলবার থেকেই বিশ্বস্তরে খবরের শিরোনামে ছিল জাফর এক্সপ্রেসে এই হামলার ঘটনা। উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা এবং ঘটনার সাক্ষী থাকা পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের অনেকে আক্রমণের অভিজ্ঞতার কথা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এই অভিযানের বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য বা নিহতদের সঠিক সংখ্যার বিষয়ে সরকারিভাবে এখনও কোনও ঘোষণা করা হয়নি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার এই ঘটনার সঙ্গে আফগানিস্তান এবং ভারতের যোগের বিষয়ে অভিযোগ তোলে পাকিস্তান।

ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফাকত আলি খান তার সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে মন্তব্য করেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, "পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারত জড়িত।"

এরপর তিনি জাফর এক্সপ্রেসে হামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন এবং তার সঙ্গে আফগানিস্তানের যোগের উল্লেখও করেন।

তিনি বলেছেন, "নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে জাফর এক্সপ্রেসে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আফগানিস্তানে থাকা তাদের হ্যান্ডলার এবং চক্ররের নেতাদের যোগাযোগ ছিল।"

প্রসঙ্গত, এর আগেও ভারতের বিরুদ্ধে এই জাতীয় অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, এর আগে, ভারতীয় এজেন্টদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মাটিতে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগও তুলতে শোনা গিয়েছিল পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের। সেই সময় ওই অভিযোগ খারিজ করে তার তীব্র প্রতিবাদ জানায় ভারত।

অন্যদিকে, সীমান্ত সংঘর্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়কে ঘিরে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কে উত্তেজনা নতুন নয়। এর আগেও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান।

ভারত কী বলেছে?

জাফর এক্সপ্রেসে হামলা এবং ওই ট্রেনটিকে হাইজ্যাক করার অভিযোগ নস্যাৎ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলার পাশাপাশি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের তোলা অভিযোগকে সরাসরি খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, "পাকিস্তানের তোলা অভিযোগ আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে খারিজ করছি।" এরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলেন মি. জয়সওয়াল।

তিনি বলেছেন, "গোটা পৃথিবী জানে বিশ্বের সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু কোথায়। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও ব্যর্থতার জন্য অন্যদের দিকে আঙুল না তুলে এবং দায় অন্যদের কাঁধে দায় না চাপিয়ে পাকিস্তানের উচিৎ নিজেদের দিকে তাকানো।"

আফগানিস্তানের বক্তব্য

জাফর এক্সপ্রেসে আক্রমণ এবং যাত্রীদের জিম্মি করার ঘটনার সঙ্গে আফগানিস্তানের যোগের যে অভিযোগ তুলেছিল পাকিস্তান, তার বিরোধিতা করেছে আফগানিস্তান। ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বলখি ওই অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে দাবি জানিয়ে, পাকিস্তানকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, "পাকিস্তানের এই জাতীয় অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা এই অভিযোগকে খণ্ডন করছি। বেলুচিস্তানের ঘটনার সঙ্গে আফগানিস্তানের কোনও যোগ নেই।"

পাকিস্তানের তরফে তোলা অভিযোগকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য' বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আব্দুল কাহার বলখি বলেছেন, "পাকিস্তানকে অনুরোধ করব এই জাতীয় দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য না করে তারা বরং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং দেশের সমস্যায় নজর দিক।"

জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাক

বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবি জানানো একাধিক গোষ্ঠী বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠী হলো বিএলএ অর্থাৎ বালোচ লিবারেশন আর্মি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক পশ্চিমা দেশই বালোচ লিবারেশন আর্মিকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানে বালোচ লিবারেশন আর্মিকে নিষিদ্ধ।

এই গোষ্ঠীটি বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কয়েক দশক ধরে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। ওই প্রদেশের সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদকে অবহেলা করার পাশাপাশি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেলুচিস্তানকে শোষণের অভিযোগও তুলে এসেছে ওই গোষ্ঠী।

বেলুচিস্তানের অনেকেই মনে করেন ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় তাদের জোর করে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। নিজেদেরকে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে দেখতে চেয়েছিল তারা। যদিও তা হয়নি।

ধারণা করা হয়, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে এই গোষ্ঠী অস্তিত্ব লাভ করে।

বেলুচরা জুলফিকার আলি ভুট্টোর সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে, কিন্তু জিয়া-উল-হকের ক্ষমতা দখলের পরে বেলুচপন্থী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। এরপর সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসানের পর বালোচ লিবারেশন আর্মি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। পরে ২০০০ সালে আবার সক্রিয় হয় তারা।

বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলের সামরিক শিবির, রেলস্টেশন এবং ট্রেনে হামলা চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বিএলএ-র। তবে এই প্রথম ট্রেন ছিনতাই করে তারা। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলে যাত্রী বোঝাই জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালায় তারা। কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় পৌঁছানোর পর হামলা শুরু হয় বলে অভিযোগ।

ওই ট্রেনে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক যাত্রীর পাশাপাশি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বহু কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

কোয়েটার এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, "হঠাৎ রেললাইনে একটি বিস্ফোরণ ঘটে, যার পরে ট্রেনটি থেমে যায়। ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চার (রকেট) নিক্ষেপ শুরু করে এবং আমরা বুঝতে পারি (এখন আমাদের) সময় ঘনিয়ে এসেছে।"

তিনি জানিয়েছেন, ট্রেন থামার পর সেখানে আক্রমণকারীদের একটা বড় অংশ এসে উপস্থিত হয়। ওই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, "ওরা পাহাড়ের দিক থেকে আসছিল এবং আমাদের চাইতে এগিয়ে ছিল। সংখ্যাতেও আমাদের চেয়ে অনেকটাই বেশি ছিল ওরা, প্রায় শতাধিক।"

আক্রমণকারীদের তরফে পাকিস্তানের প্রতি দাবি জানানো হয় যে বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হোক। এর জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রেল ও পুলিশ বাহিনী মিলে অভিযান চালায় বলে জানানো হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় দুইদিন ধরে চলা এই অভিযান শেষ হয়েছে বলে জানায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়, আক্রমণকারীদের হত্যার কথাও।

প্রসঙ্গত মঙ্গলবারের আক্রমণ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করেছে বালোচ লিবারেশন আর্মি।