News update
  • Gaza Begins Mass Cleanup to Restore Dignity and Normal Life     |     
  • BNP weighing review of some nominations amid grassroots unrest     |     
  • US presses for Gaza resolution as Russia offers rival proposal     |     
  • 35 crude bombs, bomb-making materials found in Geneva Camp     |     
  • 8 Islamic parties want referendum before polls, neutral admin     |     

তাজরীনে আগুনের ১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ শ্রমিকদের

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক দূর্ঘটনা 2022-11-24, 12:56pm




বাংলাদেশের পোশাক খাতের অন্যতম বড় দুর্ঘটনা তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১২ সালের এই দিনে সাভারের এই পোশাক কারখানাটিতে যে অগ্নিকাণ্ড হয়, তাতে কারখানার মধ্যে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১১০ জন শ্রমিক। আহত হয়েছিলেন অনেক মানুষ।

অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানাটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল।

শ্রমিকেরা বলছেন, গত ১০ বছরে তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

কিন্তু সরকার এবং বিজিএমইএ দাবি করেছে, বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর দুর্দশা কমেনি এখনো।

সাভারের নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানায় সরেজমিনে গিযে দেখা যায় সেখানে তালা ঝুলছে, ভেতরে সাধারণ মানুষজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

এলাকার সাধারণ মানুষেরা জানিয়েছেন, বছরের কেবল নভেম্বর মাসেই কারখানায় তালা মারা হয়। বাকি সময় কারখানা চত্বরে মালিকের অন্য প্রতিষ্ঠানের ট্রাক-ভ্যান বা লরি রাখা হয়। সাথে স্থানীয় মানুষেরা মৌসুমে ধান শুকান। সবই যেন স্বাভাবিক।

‘আমার এই বাম হাতটা ভাঙা, এখনো বাঁকা আছে’

অগ্নিকাণ্ডের সময় সুইং অপারেটর নাসিমা বেগম তিনতলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

কারখানার সামনে তিনি হেটেই এসেছিলেন, কিন্তু বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ১০ বছরেও আঘাতের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন শরীরে , যে কারণে কোন কাজকর্মও করতে পারেন না, ফলে আয় রোজগারও নেই।

তিনি বলেন, “আমার এই বাম হাতটা ভাঙা, এখনো বাঁকা আছে, সোজা হয় নাই। হাঁতের এই মাংসটুকু কাইট্যা পইড়া গেসিলো ওয়ালের ঘষা লাইগ্যা, মেরুদণ্ডের হাঁড় ফাইট্যা গেসে, ঘাঁড়ের হাঁড়টা ফাটা আছে, মাথায় আঘাত পাইসিলাম, আমি কিন্তু ঠিকমতো দেখতে পাই না।”

মিজ বেগম জানান, চিকিৎসক জানিয়েছেন সারা জীবনই এসব আঘাতের চিকিৎসা করিয়ে যেতে হবে তাকে।

কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসের সামনে বুধবার প্রায় শ’খানেক আহত শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন। যাদের একজন ছিলেন নাসিমা বেগম।

সেখানে আসা শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করছিলেন।

‘এইটারে জীবন বলে না’

অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হওয়া আলেয়া বেগম বলছিলেন, ১০ বছর পার হয়ে গেলেও কোন নিহত বা আহত ব্যক্তির পরিবার এখনো কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি।

জীবন যুদ্ধে টানাপোড়েনের কাহিনী বলতে গিয়ে হতাশার কথা জানান আলেয়া বেগম।

আলেয়া বেগম বলেন, “১০ বছর হয়ে গেছে, হয়তো তাজরীনের আগুন নিভে গেছে, আমাদের মনের আগুন নিভে নাই। কারণ আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরার চাইতে, ওইখানে মরলে তাও আমরা শহিদী মরা হইতাম।”

“এখন যে জীবনটা কাটতেসে এইটা মানুষের করুণার জীবন, এইটাকে জীবন বলে না। না কোন কাজ করতে পারতেসি, পোলাপান লেখা-পড়া করতে দিতে পারতেসি না, কোন কিছুই করতে পারতেসি না, এইটারে জীবন বলে না।”

ক্ষতিপূরণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মত

রানা প্লাজা ধসের কয়েক মাস আগে ঘটা তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ড ছিল বাংলাদেশের শিল্পকারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।

ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের কয়েক দফায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে ২০১২ সালেই অগ্নিকাণ্ডের ১০দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত ও আহত সব শ্রমিকের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন।  

নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ছয় লাখ টাকা আর আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।

২০১৩ সালে তাজরীন এবং রানা প্লাজা ধসে নিহত ও আহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে জেনেভায় ইন্ডাস্ট্রি-অল আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে একটি বৈঠক ডেকেছিল।

তাতে শ্রমিকদের ৩ মাসের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছিল। সে বৈঠক সফল না হলেও, কয়েকটি ব্র্যান্ড মিলে ২০১৬ সালে শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা দিয়েছিল।

এদিকে, তৈরি পোশাক মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, তারা দুর্ঘটনার পর পরই শ্রমিকদের সহায়তা করেছেন।

বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, “না না, যা করার তখনই করা হইছে, সবাইকে দেয়া হইছে।”

“নিয়ম অনুযায়ী সবাইকে দেয়া হইছে, শ্রম আইন অনুযায়ী সবাইকে দেয়া হইছে,” বলেন তিনি।

ওই দুর্ঘটনায় সেদিন বেঁচে যাওয়া অনেক শ্রমিক নতুন করে জীবন শুরু করেছেন।

তবে যারা আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বা কর্শক্ষমতা হারিয়েছেন, তারা বলছেন, এ পর্যন্ত যা অর্থসাহায্য পেয়েছেন, সেটি ক্ষতিপূরণ নয়।

তারা যা পেয়েছেন সেটি অনুদান এবং চিকিৎসা খাতে সাহায্য।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, নতুন করে এই শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার সুযোগ নেই, কারণ তাদের ইতিমধ্যে যথেষ্ঠ অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “ক্ষতিপূরণ, কয়েক দফা ক্ষতিপূরণ। লেবার মিনিস্ট্রি দিসে এক কোটি, শেখ হাসিনা দিছেন একেক জনকে পাঁচ লাখ করে, মালিকরা দিছে দুই লাখ করে।” তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।