News update
  • Rail link with Khulna cut off as train derails in Chuadanga     |     
  • 3 killed, 10 injured in Pabna Bus-truck collision     |     
  • UN Chief Appalled as Gaza Crisis Deepens, Aid Blocked     |     
  • Dhaka’s air quality ‘moderate’ also on Friday morning     |     
  • Russia 1st country to recognize Taliban rule in Afghanistan     |     

পাটুরিয়ায় যানবাহন নিয়ে ফেরি 'রজনীগন্ধা' ডুবে যাওয়ার বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক দূর্ঘটনা 2024-01-17, 3:24pm

c1a5c620-b4f8-11ee-9f31-1daee69916ff-5003f4084824c76225722546da6cffaf1705483478.jpg




বেশ কিছু যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের একটি ফেরি ডুবে গেছে। বুধবার ভোরে ডুবে যাওয়া ফেরিটির নাম রজনীগন্ধা।

বাংলাদেশের নৌ পরিবহন সংস্থা বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাট কার্যালয়ের সহকারী ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উদ্ধার কাজে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত তাদের কয়েকটি ইউনিট যোগ দিয়েছে।

ঘটনার পর সকাল ১১টা পর্যন্ত ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে, এখনো পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি কর্মকর্তারা। তবে এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

দুর্ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে

আরিচা ঘাট কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে ছেড়ে আসে রজনীগন্ধা ফেরিটি।

ভোর রাতে মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পৌঁছালেও ঘন কুয়াশায় পথ দেখতে না পাওয়ায় মাঝ নদীতে অনেকক্ষণ নোঙ্গর করে ছিল ফেরিটি।

সকালে কুয়াশা কিছুটা কাটলে তীরে ভেরার চেষ্টা করে ফেরিটি। তখন পাশ থেকে যাওয়া একটি বাল্কহেড ফেরিটিকে ধাক্কা দিলে ফেরিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, মূলত ঘন কুয়াশার কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে ফেরিটি ছেড়ে আসার সময় এতে বেশকিছু যানবাবহন ছিল। যার মধ্যে বেশিরভাগই পণ্যবাহী ট্রাক।

তবে, নিজস্ব ক্রু ও যানবাহনসহ ফেরিটিতে ঠিক কতজন ছিল সেই তথ্য কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের উদ্ধারকারী দল। সকাল আটটায় দুর্ঘটনার পর সাড়ে ৯টায় পুরোপুরি ডুবে যায় ফেরিটি।

তার আগ পর্যন্ত কিছুটা অংশ পানির ওপরে দেখা যাচ্ছিলো বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেই ডুবে যায় আমানত শাহ নামের একটি ফেরি।

ডুবে যাচ্ছে ফেরি রজনীগন্ধাছবির উৎস,ফায়ার সার্ভিস

কী বলছে ফায়ার সার্ভিস

ফায়ার সার্ভিস বলছে, দুর্ঘটনার পর সকাল ১১টা পর্যন্ত ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার সময় ফেরিতে কত মানুষ ছিলেন সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জানাতে না পারলেও অন্তত ৯টি পণ্যবাহী ট্রাক ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও জানাচ্ছে, ডুবে যাওয়ার আগে ফেরিটিতে সাতটি ছোট ট্রাক ও দুইটি বড় ট্রাক ছিলো। এতে অন্য কোনো যাত্রীবাহী পরিবহন ছিল না।

ফায়ার সার্ভিস ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা আটটার সময় প্রথম সংবাদ পাই। সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ২৫-৩০ জনের একটা টিম সংবাদ রওনা দেয়। যার মধ্যে ১০ জনের ডুবুরি দল রয়েছে। এসেই দেখি নয়টি ট্রাক নিয়ে ফেরিটি ডুবে যাচ্ছিলো। তখন আমরা স্পিডবোড নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই।”

বিআইডব্লিউটিসি’র বরাত দিয়ে তিনি জানান, ফেরির দুই জন চালকের মধ্যে একজনের নাম হুমায়ুন, এখন পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

“ফেরিঘাটে দুটি স্পিডবোড ও একটি লঞ্চ বাঁধা ছিল। পরে আমরা ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে প্রাথমিকভাবে ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করি”, বলেন মি. হোসেন।

ফেরিটি ডুবে যাওয়ার আগে একটি বয়া ফেরির সাথে এটিকে বেঁধে দিয়েছিলো ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

মি. হোসেন জানান, “উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। তখন আমরা সমন্বিতভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালাবো।”

এদিকে, ফেরিডুবির ঘটনায় মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে নৌ দুর্ঘটনা

বাংলাদেশে পদ্মা নদীকে তার উত্তাল ঢেউ এবং দুর্ঘটনা প্রবণতার কারণে এক সময় 'প্রমত্তা পদ্মা' বলে অভিহিত করা হতো।

কিন্তু, গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে পদ্মার সেই নাম এখন অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে।

তা সত্ত্বেও এখনো প্রতি বছরই পদ্মায় এ ধরনের ছোটবড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।

এর আগে ২০২১ সালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন নিয়ে একটি ফেরি কাত হয়ে পদ্মা নদীতে আংশিক ডুবে যায়।

সে সময় ফেরিতে থাকা অন্তত ১৭টি ট্রাক পানিতে ডুবে যায় বলে কর্মকর্তারা জানান। ফেরিতে শুধুমাত্র পণ্যবাহী ট্রাক ছিল বলে জানান কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে এক সময় প্রায় ১ হাজার ৩০০-র মতো নদী ছিল, যে কারণে দেশটিকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। কিন্তু নাব্য সংকট, দূষণ এবং দখলের কারণে ক্রমশ নদীর সংখ্যা কমে গেছে।

কমতে কমতে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন মাত্র ২৩০টিতে ঠেকেছে।

নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম বিভিন্ন ধরনের নৌযান।

অন্য যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় নিরাপদ এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের একটি বড় অংশ এখনো নৌপথেই হয়ে থাকে।

যান চালনায় নিয়ম না মানা এবং অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে লঞ্চ বা ফেরি পরিচালনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্য পরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং যান্ত্রিক ত্রুটি এমন নানা কারণে নৌপথে বিভিন্ন সময় বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

এর আগে ২০২০ সালে বেসরকারি সংস্থা কোস্ট বিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ বছরে বাংলাদেশের নৌপথে ১২টি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে, এতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ২০২২ সালে এক প্রতিবেদন দেয়, যেখানে বলা হয়েছিল গত ৫০ বছরে দেশে আড়াই হাজারের বেশি নৌ-দুর্ঘটনায় সাড়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, ৫৬৫টি নৌ দুর্ঘটনার বিপরীতে ৮৬৩টি তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ জমা দিলেও তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।