News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান ও মন্দিরে কী হয়েছে

বিবিসি বাংলা ধর্মবিশ্বাস 2024-12-22, 8:56am

img_20241222_085017-3ab4df0f73e7b404b46baeb59f9434fd1734836178.png




বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে সেখানকার পুলিশ। পাশাপাশি শত বছরের পুরনো মহাশ্মশানের মন্দিরে সংরক্ষিত পুরনো আমলের কাসা, পিতল ও তামার বিপুল পরিমাণ তৈজসপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে যার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তিনি গত প্রায় ২৪ বছর ধরে ওই মন্দিরে রাতযাপন করতেন। তার নাম তরুণ দাস। আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি নাটোরের আলাইপুরের কালী চন্দ্র দাসের ছেলে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে সকালে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাজশাহী থেকে সিআইডি ও ক্রাইমসিন সদস্যরা গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

"সিআইডি দেখেছে। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হচ্ছে চুরি করতে এসে দুষ্কৃতিকারীরা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যিনি মারা গেছেন তিনি কিছুটা অপ্রকৃতস্থ ছিলেন কিন্তু মন্দিরেই রাতে অবস্থান করতেন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

শনিবার সকালে মন্দির থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ওই মন্দিরের সেবায়েতকে হত্যা করার খবর ছড়িয়ে পড়লেও মন্দির কমিটির সভাপতি সুবল দাস বলছেন নিহত ব্যক্তি সেবায়েত ছিলেন না, তবে গত চব্বিশ বছর ধরে ওই মন্দিরেই তিনি রাতযাপন করতেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেছেন এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

মহাশ্মশান ও মন্দিরে কী ঘটেছে

পুলিশ বছর সকালে গার্ডরা এসে ভেতরে ঢোকার পর মন্দিরে থাকা ব্যক্তির মৃতদেহ দেখতে পায়। রশি দিয়ে একটি বেঞ্চির সাথে তার হাত-পাসহ শরীর শক্ত করে বাঁধা ছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।

খবর পেয়েই পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এরপর রাজশাহী থেকে সিআইডি ও ক্রাইমসিন সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

মৃতদেহ উদ্ধারের পর মন্দিরে ডাকাতির কথা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লেও মি. রহমান বলছেন প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে এটিকে ডাকাতি মনে হয়নি।

"যিনি মারা গেছেন তিনি মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। একাই রাতে সেই শ্মশানে থাকতেন তিনি। মনে হচ্ছে কেউ চুরি করতে এসেছিলো এবং তারাই হয়তো এটি ঘটিয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মন্দির কমিটির সভাপতি সুবল দাস বলছেন এই মহাশ্মশান শত বছরের পুরনো এবং ওই অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। তিনি জানান মহাশ্মশানের মন্দিরে নিয়মিত নিত্যপূজা ও বার্ষিক পূজা ছাড়াও প্রতি শুক্রবার অনুষ্ঠান হয়।

"দিনের বেলায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপত্তা রক্ষী থাকলেও রাতে সেখানে কোনো গার্ড থাকে না। এই সুযোগেই শুক্রবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান নিহত তরুণ দাসের বাড়ি শহরে হলেও তিনি রাতে শ্মশানেই থাকতেন।

"সকালে গার্ডরা এসে দেখতে পায় তরুণ দাসের হাত পা বাধা শক্ত করে বাধা একটি বেঞ্চির সাথে। মাথায় রক্ত ছিলো এবং তাকে মৃত অবস্থাতেই পাওয়া গেছে," বলছিলেন মি. দাস।

তিনি বলেন, "চুরি হোক আর ডাকাতি হোক, যারা এসেছে তারা মূল মন্দিরে গ্রিল ভেঙ্গে ঢুকেছে। ভেতরে ঢুকে পুরনো অনেক দামি জিনিস নিয়ে গেছে ভাণ্ডার রুম থেকে। এর মধ্যে মহামূল্যবান কাসা, পিতল ও তামার জিনিসও আছে। তারা ওগুলো নিয়ে গেছে।"

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বলছেন পরিস্থিতি দেখে তারা ধারণা করছেন যে চুরি দেখে ফেলে চিৎকার চেঁচামেচি করার কারণে চোরেরা ওই ব্যক্তিকে আঁটোসাঁটো করে বেঁধে রেখেছিলো।

"এবং দীর্ঘ সময় ওভাবে থাকা এবং আঘাতের কারণে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন। তবে পোস্টমর্টেম ও অন্য তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে," বলছিলেন মিজ সাথীঊ।

কিন্তু এতো পুরনো একটি শ্মশান ও মন্দিরে চুরির ঘটনার জের ধরে হত্যাকাণ্ড হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে স্থানীয়দের মধ্যেই। সকালে লাশ উদ্ধারের পরপরই ঘটনাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে শ্মশান এলাকাটি যেহেতু কিছুটা নির্জন এবং সেখানে লোকজন খুব একটা যেতো না, এই সুযোগে কেউ কেউ জায়গাটিকে মাদকসেবনের জন্য ব্যবহার করতো।

"যারা নেশা করে তাদেরও কাজ হতে পারে এটি," বলছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মি. রহমান।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত ৫ই অগাস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দেশে বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার অভিযোগ এসেছিলো।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং থেকে গত দশই ডিসেম্বর জানানো হয়েছিলো যে দেশে গত ৫ই অগাস্ট থেকে ২২শে অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের টার্গেট (লক্ষ্য) করে সহিংসতার ঘটনায় ৮৮টি মামলায় ৭০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এরপরের ঘটনাগুলোর বিষয়েও মামলা হয়েছে। সেই তালিকাও পুলিশ করছে বলে তখন প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছিলো।

"গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলার সংখ্যাও দু-একটা বাড়তে পারে। কারণ, সুনামগঞ্জে একটি ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু জায়গায়, চট্টগ্রাম, ঢাকার তুরাগ ও নরসিংদীতে ঘটনা ঘটেছে," এক সংবাদ সম্মেলনে তখন বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এছাড়াও সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের আগে ও পরেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতন নিপীড়নের অভিযোগে এসেছে।

বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর 'নির্যাতন ও সহিংসতার' বিভিন্ন তথ্য নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে, যা বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই 'অতিরঞ্জন ও অপপ্রচার' হিসেবে উল্লেখ করে আসছে।