
বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়তে থাকা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানুষকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে, কীভাবে এই বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যায়? আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও প্রযুক্তিগত সতর্কতার পাশাপাশি, ইসলাম ধর্মও অগ্নিনির্বাপণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে ১৪০০ বছর আগেই অসাধারণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দৈনন্দিন জীবনে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছিলেন, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং বিপর্যয় এড়াতে সহায়ক।
চলুন জেনে নেয়া যাক অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে মহানবী (সা.)-এর ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা-
১. আগুন জ্বালিয়ে রেখে ঘুমানো নিষেধ
রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, রাতে আগুন জ্বালিয়ে রেখে তোমাদের ঘরে ঘুমিও না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৫)। এই হাদিসের মূল শিক্ষা হলো, আগুন জ্বালিয়ে রেখে ঘুমালে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বর্তমান সময়ে গ্যাসের চুলা, বৈদ্যুতিক হিটার, বা অন্যান্য উত্তপ্ত যন্ত্র চালু রেখে ঘুমানোর বিষয়ে এটি কঠোর সতর্কতা।
২. বাতি বা প্রদীপ নিভিয়ে রাখা
হাদিসে এসেছে, রাতে ঘুমানোর আগে প্রদীপ নিভিয়ে ফেলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯১৮)। এই নির্দেশনাটি আধুনিক যুগে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি প্রতিরোধের শিক্ষাও দেয়। ঘরে বা অফিসে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ব্যবহারের পর প্লাগ খুলে রাখা এই নির্দেশনার আধুনিক প্রতিফলন।
৩. শিশু ও দুর্বলদের আগুনের কাছ থেকে দূরে রাখা
রাসুল (সা.) শিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, শিশুদের আগুনের কাছ থেকে দূরে রাখো, কারণ আগুন শয়তানের মতো শত্রু। (আদবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি)। এটি ঘরে মোমবাতি, আগরবাতি, গ্যাসের চুলা বা লাইটারের ব্যবহার করার সময় শিশুরা যাতে সেগুলোর নাগাল না পায়, সেই বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানায়।
৪. ঘরের গ্যাস ও আগুনের উৎস পরীক্ষা করা
আরেকটি হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের ঘরে আগুন রেখে রাত কাটিও না; হয় তা নিভিয়ে দাও, নয়তো ঢেকে রাখো। (সহিহ মুসলিম)। এটি শুধু আগুন নেভানো নয়, বরং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান। আধুনিক প্রেক্ষাপটে এটি বোঝায়— ঘুমানোর আগে গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার, ইলেকট্রিক যন্ত্র ও তারের সংযোগ পরীক্ষা করা উচিত।
৫. আল্লাহর নিকট নিরাপত্তার দোয়া করা
প্রতিটি বিপদ থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন এবং শিখিয়েছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করো এবং আগুনের বিপদ থেকে নিরাপদ রাখো। এই দোয়া শুধু আধ্যাত্মিক সুরক্ষা নয়, বরং পার্থিব জীবনে অগ্নিকাণ্ড থেকে নিরাপদ থাকার জন্য এক আত্মিক আশ্রয়।আরটিভি