Flash flood in full fury in eastern Bangladesh.
ঢাকা ২৮ আগষ্টঃ বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্ব, পূর্ব, উত্তর-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে যে সর্বগ্রাসী বন্যা আঘাত হেনে কয়েক কোটি লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তার সূত্র ধরে ভারতের সাথে সকল নদীর সমন্বিত যৌথ ব্যবস্থাপনা চুক্তি সম্পাদনের আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি)।
আজ ২৮ আগষ্ট এক যৌথ বিবৃতিতে আইএফসি নেতৃবৃন্দ বলেছেন এবারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় অনেক দিন পর গুমতির অস্বাভাবিক বন্যা ও ফারাক্কা ব্যারেজের স্লুইস গেট খুলে গঙ্গা-বন্যার প্রকোপ বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের ব্যাখ্যামূলক জবাব দিয়েছে। গুমতির ব্যাপারে বলেছে অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট মারাত্মক বন্যার জন্য ত্রিপুরার দুম্বুর ড্যামের গেট খুলে দেয়াকে দায়ি করা যাবেনা। অন্যদিকে গঙ্গার ব্যাপারে বলেছে ফারাক্কা ব্যারেজের গেট খুলে উজানে অতি বৃষ্টির বন্যার পানি ‘গঙ্গা/পদ্মা’ নদীতে ছেড়ে দেয়া বর্ষাকালীন স্বাভাবিক ঘটনা।
তিস্তার ব্যাপারে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি, যদিও এ নদীর অববাহিকায় দুই-তিন দফা মারাত্মক বন্যা প্রতি বর্ষায় বাংলাদেশে শুধু ফসল হানি নয়, তীর ভাঙ্গনের কারণে হাজার হাজার পরিবারকে বাস্তুহারা করে চলেছে। অথচ শুকনো মওসুমে তিস্তার পুরো পানি পশ্চিম বঙ্গের গজল ডোবা ব্যারেজ থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
গুমতির বন্যার ব্যাপারে ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সান্ডার্প (সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভার্স অ্যান্ড পিপল) বলেছে ত্রিপুরার দুম্বুর ড্যামের ওপারে রিজার্ভয়ারের পানির উচ্চতা বিপদ সীমা অতিক্রমের অন্তত দুই দিন আগে পানি ছাড়া শুরু করলে বন্যার প্রকোপ অত ভয়াবহ হতনা। এ ব্যাপারে তারা কর্তব্যে গাফিলতি বা মানবিক ভ্রান্তির প্রশ্ন তুলেছেন। তাছাড়া বন্যার কারণে ঐ ড্যামের ভাটিতে অবস্থিত পানি মাপার ষ্টেশনে বিদ্যুৎ না থাকায় দুইদিন বন্যা সতর্কিকরণ বার্তা প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশ সময়মত সতর্ক বার্তা পায়নি।
আইএফসি বলতে চায়, এই বন্যা বিপর্যয় শুধুমাত্র বৈশ্বিক তাপবৃদ্ধির কারণে অতিবৃষ্টি নয়, সাথে সাথে সময়মত পদক্ষেপ গ্রহনে গাফিলতি বা ভ্রান্তির দৃষ্টান্ত পাওয়া যাচ্ছে। উজানের দেশের এই মানবিক ভ্রান্তির ফলে ভাটির দেশে বিপর্যয় লাঘবের একমাত্র উপায় যৌথ নদীর উৎপত্তি থেকে সাগরমুখ পর্যন্ত যৌথ ব্যবস্থাপনা। এই মতমত বর্তমান বিশ্বের সকল পানি বিশেষজ্ঞের।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি যৌথ নদীর মধ্যে শুধু মাত্র গঙ্গা নিয়ে চুক্তি আছে। তাও মান্ধাতা আমলের সীমান্তে পানি ভাগাভাগির। এই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে তামাদি হবে। তিস্তা নিয়ে দুই দেশ বিগত ১৩ বছর চুক্তির কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু কার্যত কিছুই হচ্ছেনা। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে বাংলাদেশকে বর্ষায় বন্যার পানি নিতেই হবে, শুকনো মওসুমের পানির ব্যাপারে তার কোন অধিকারই নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন তা বলেনা। নদীসৃষ্ট বাংলাদেশ নদীর পানির অভাবে এক পরিবেশগত বিপর্যয়ে পড়েছে। এই বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষার জন্য ৫৪ নদীর অববাহিকা ভিত্তিক সমন্বিত যৌথ ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করতে বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জনিয়েছেন আইএফসি নেতারা।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন আইএফসি নিউ ইয়র্কের চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান, মহা সচিব মোহাম্মদ হোসেন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান আতা; আইএফসি বাংলাদেশের সভাপতি প্রফেসর ড. জসীম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী এবং আইএফসি সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার। - প্রেস বিজ্ঞপ্তি