
International Farakka Committee (IFC) held a press briefing urging political parties to include river and water issued in their election manifestos.
বাংলাদেশের উৎপত্তি নদী থেকে। এদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ বলা হয়। গংগা ব্রহ্মপূত্র ও মেঘনার ভাটিতে অবস্থিত এদেশের উপর দিয়ে পূর্ব হিমালয়ের সকল নদীর প্রবাহ আবহমান কাল থেকে বংগোপসাগরে গিয়ে পড়ছে।
এসব নদীর বয়ে আনা পলি জমে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অধিকাংশ এলাকা তৈরি হয়েছে। এই নদীগুলোর বিশাল পানি প্রবাহ বাংলাদেশের পরিবেশ, জীবন-জীবিকা, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর থেকে এপর্যন্ত এদেশের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫৭টি যৌথ নদীর ৫৪টিরই উজানে বাঁধ নির্মান করে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করায় এদেশের পরিবেশগত ভারসাম্য তথা অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। তার প্রতিবাদে স্বোচ্চার থেকে বাংলাদেশের মানুষের নদী-পানির অধিকার সংরক্ষণ করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সামনে নির্বাচন। আগামী ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেবে এমন সকল দল তাদের নির্বাচনী ম্যানিফেষ্টো তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে।
আমরা আপনাদের তথা সংবাদপত্র ও মিডিয়া কর্মিদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির (আইএফসি)র পক্ষ থেকে সকল নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও গোষ্টিকে বাংলাদেশের নদীর প্রবাহ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হয়ে নদীগুলোর প্রাকৃতিক প্রবাহ বজায় রাখার দাবী জোরদার করার আহবান জানাচ্ছি।
বিশেষ করে যে সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের নির্বাচনী ম্যানিফেষ্টোতে এদেশের মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন নদী-পানির অধিকার বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরে সবাইকে আশ্বস্ত করার দাবি জানাই।
আপনারা জানেন, বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন নদ-নদীর পানির শতকরা ৯০ ভাগের বেশি উজান থেকে আসে। বর্ষাকালে আসে প্লাবন। স্বাভাবিক বর্ষায় এদেশের শতকরা ৩৩ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। শুকনো মৌসুমে নদীর পানি কৃষি, মতস, নৌচলাচল, ব্যবসা, বানিজ্য ও শিল্প সচল রাখার পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত কতৃক সকল যৌথ নদীর উজানে বাঁধ নির্মান করে পানি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় শতশত নদী মরে যাচ্ছে। একমাত্র দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে গংগা-নির্ভরশীল এলাকায় ৩০টির অধিক নদী মরে গেছে। গংগার প্রধান শাখা নদী গোড়াইয়ে শুকনো মৌশুমে পানি থাকেনা। ফলে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বিপর্যয়। অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম মেংগ্রোভ বন সুন্দরবন।
৩০ বছরের গংগা পানি চুক্তি আগামী বছরের ডিসেম্বরে তামাদি হয়ে যাচ্ছে। এ চুক্তিতে কোন পানি প্রাপ্তির গ্যারান্টি বা চুক্তি নিয়ে মত বিরোধ নিরসনে মধ্যস্থতার ব্যবস্থা ছিলনা। সে কারণে বাংলাদেশ পানি প্রাপ্তির ব্যাপারে কোন উচ্চবাচ্য করতে পারেনি।
অন্যদিকে তিস্তা পানি চুক্তি ২০১১ সালে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়নি। চুক্তির অবর্তমানে ভারতস্থ পশ্চিম বংগের গজলডোবা বাঁধ থেকে শুকনো মওসুমের সকল পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। অথচ বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি বাংলাদেশে বিনা নোটিশে ছেড়ে দিয়ে প্রলয়ংকরী বন্যার সৃষ্টি করা হয়। গেল বর্ষায় উপর্যুপরি পাঁচ দফা বন্যা হয়েছে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে।
ভারতের উপর দিয়ে বয়ে আসা অন্য ৫২টি নদীর ব্যাপারে কোন চুক্তি নেই। কিন্তু প্রত্যেকটা নদীর উপর বাঁধ বা জলাধার নির্মান করে বাংলাদেশে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত ভাবে চলতে থাকায় বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে।
বিগত ১৬ বছর ধরে নতজানু পররাষ্ট্র নীতি এবং প্রতিবেশীকে খুশি রাখার পানি নীতি চালু থাকায় এ অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। দেশের ভৌগলিক অস্তিত্ব রক্ষা ও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার স্বার্থে তাই আমাদের সকল রাজনৈতিক দল ও গোষ্টিকে আওয়াজ তুলতে হবে। সকল নদীর পরিবেশগত প্রবাহ বজায় রেখে যৌথ নদীর পানি প্রাপ্তির জন্য একটা সার্বিক চুক্তি করুন। চুক্তির শর্ত অনুসারে পানি প্রাপ্তির গ্যারান্টি এবং এ ব্যাপারে মতানৈক্য নিরসনের আরবিট্রেশন ক্লজ থাকতে হবে।
পারষ্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে পানি সমস্যার সমাধান না হলে প্রয়োজনে তা জাতিসংঘে উথাপন করতে হবে। কারণ পানি সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম হবে।
(মোস্তফা কামাল মজুমদার, সভাপতি, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, বাংলাদেশ)