News update
  • France welcomes Foundation for Strategic & Development Study     |     
  • Countrywide combined night police patrols begin: Adviser     |     
  • Miscreants Launch Attack on Air Force Base in Cox's Bazar: ISPR     |     
  • Munshiganj General Hospital catches fire; no injury reported     |     
  • Dhaka’s air records ‘unhealthy’ on Monday morning     |     

পুলিশের এএসপিদের কুচকাওয়াজ স্থগিত করা নিয়ে এত আলোচনা কেন?

বিবিসি বাংলা পুলিশ 2024-10-20, 7:42pm

fhdfhf-ffc658445288150653fa8aa14927fae71729431765.jpg




বাংলাদেশে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ‘হঠাৎ’ স্থগিতের ঘটনা নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আজ রোববার রাজশাহীর পুলিশ একাডেমিতে এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।

পুলিশ সদর দপ্তর কুচকাওয়াজ স্থগিত হওয়ার বিস্তারিত কোন কারণ উল্লেখ করেনি।

বাহিনীর মুখপাত্র বিবিসি বাংলাকে শুধু বলেছেন ‘অনিবার্য কারণে’ এটি স্থগিত করা হয়েছে।

যদিও এই কুচকাওয়াজে যোগ দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাজশাহীতে পৌঁছেছিলেন।

তবে, হুট করে এই কুচকাওয়াজ স্থগিত হওয়ার ফলে ৪০তম বিসিএসে মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারের জন্য নির্বাচিত ৬২জন এএসপির চাকরিতে যোগদান অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

এদিকে, এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ওই ৬২জনকে ‘ছাত্রলীগের ক্যাডার’ উল্লেখ করে ওই অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানালে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

মূলত এ কারণেই শনিবার রাতে অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই আজকের কুচকাওয়াজটি স্থগিত ঘোষণা করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।

যদিও দুটি বিষয়ের মধ্যে আদৌ যোগসূত্র আছে কী-না কর্তৃপক্ষের তরফে বিবিসির কাছে তা কেউ নিশ্চিত করেনি।

পুলিশের একজন সাবেক আইজিপি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কুচকাওয়াজ স্থগিতের ঘটনাটি বেআইনি না হলেও, ‘অনেকটা নজিরবিহীন’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন, এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার, নতজানু আচরণ এবং সক্ষমতার অভাব প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে।

“তাদের উচিত ছিলো আগেই বিষয়টি রিভিউ করা, যাতে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কেউ ভিকটিমও না হয়, আবার সুবিধাও না পায়। এখনো উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিভিউ করে দেখা এবং খেয়াল রাখতে হবে যোগ্য কেউ যেন ভিকটিম না হয়,” অধ্যাপক ফেরদৌস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেকজন শিক্ষক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলছেন ঢালাওভাবে পুরো একটি ব্যাচের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা 'সুবিবেচনাপ্রসূত' নয়।

“কেউ যদি রাজনৈতিক পরিচয় বা সুবিধা নিয়ে কোন ফেভার পায়, কিংবা প্রশ্ন পেয়ে চাকরি পায়, সেটি যথাযথ তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে একটি ব্যাচকে রাজনৈতিক তকমা দেয়াটা যৌক্তিক হতে পারে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন।

যেভাবে বিতর্কের সূচনা

সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলো।

এরপর, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ যাচাই বাছাইয়ের সব ধাপ শেষে ২০২২ সালের নভেম্বরে নির্বাচিত প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ করেছিলো সরকার।

ওই গেজেট অনুযায়ী তখন ৭১ জনের সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদানের কথা। যাদের মধ্যে ৬২ জন দু বছরের প্রশিক্ষণ শেষে রোববার পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেয়ার কথা ছিলো।

দুইদিনের সফরে রাজশাহীতে থাকা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি যোগ দেয়ার কথা ছিলো। পুলিশের অন্য কর্মকর্তারাও শনিবারের মধ্যেই রাজশাহীর সারদা পুলিশে একাডেমিতে পৌঁছে যান।

এর মধ্যেই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়ার অপেক্ষায় থাকা নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, যার সূচনা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কের একটি পোস্টের মাধ্যমে।

তাকেও ওই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো।

রাত ১০টার দিকে ওই পোস্টে তিনি বলেন, “..... এই ৬২জন এএসপি হাসিনার আমলে নির্বাচিত হইছে। আর কত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিসিএস (পুলিশ)-এ নিয়োগ হতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যক্তি আমার জায়গা থেকে তাই উক্ত প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী নই। তাদের ব্যাপারে তদন্ত হয়েছে কিনা!!....”

নিজের পোস্টে নিজেই আবার কমেন্ট করে তিনি লিখেন, “আওয়ামী লীগ শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত (৪০ তম বিসিএসে) ৬২ জন ছাত্রলীগের ক্যাডার এএসপি হিসাবে রোববার প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করতে যাচ্ছেন"।

এরপরই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হলে রাতেই রোববারের কুচকাওয়াজ স্থগিত করার কথা সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়।

যদিও পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এনামুল হক সাগর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, অনুষ্ঠানটি ‘অনিবার্যকারণবশত’ স্থগিত করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকেও একই বক্তব্য দেয়া হয়েছে।

নজিরবিহীন ঘটনা?

প্রসঙ্গত, বিসিএসে চূড়ান্ত উত্তীর্ণের পর সহকারী পুলিশ সুপার কর্মকর্তারা সারদার পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন, যার শেষ হয় সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেয়ার মাধ্যমে।

এরপর তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেন।

সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থী সহকারী পুলিশ সুপারদের পুরো ব্যাচ জুড়ে কুচকাওয়াজ স্থগিতের ঘটনা অনেকটাই নজিরবিহীন বলছেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের কয়েকজন।

পুলিশের সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেছেন, এটি আইন বহির্ভূত না হলেও একটু ‘অস্বাভাবিক ও কিছুটা নজিরবিহীন’।

“কিছু কিছু ব্যাচের লম্বা সময় ধরে প্রশিক্ষণে রাখার ঘটনা আগেও হয়েছে অনেক সময়। কিংবা প্রশিক্ষণ চলাকালে বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে অনেকে বাদ পড়েছেন চাকরি থেকে। কিন্তু পুরো ব্যাচের কুচকাওয়াজ স্থগিতের ঘটনা সম্ভবত নজিরবিহীন ও একটু অস্বাভাবিক,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

মি. হুদা বলছেন প্রশিক্ষণ কালে কারও আচরণ যথাযথ না হলে তাকে সরাসরি বাদ দেয়ার এখতিয়ারও কর্তৃপক্ষের আছে।

এছাড়া আবেদনের সময় যেসব তথ্য প্রার্থী দিয়ে থাকে সেগুলোর কোনটি অসত্য প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা নেয়া যায়।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ শেষ করেও কুচকাওয়াজে যোগ দেয়ার অনুমতি না পাওয়ার উদহারণও পুলিশ বাহিনীতে আছে।

সারদায় ট্রেনিং সম্পন্ন করেও বিএনপি সরকারের আমলে চূড়ান্ত কুচকাওয়াজ বা পাসিং আউটে যোগদান করতে পারেননি অন্তত এক ডজন কর্মকর্তা। এর মধ্যে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদও ছিলেন।

পরে আওয়ামী লীগ আমলে ওই কর্মকর্তারা আবার চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছিলেন।

আবার, আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন সময়ে পাঁচশোর বেশি এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছিলেন।

তাদের বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

“আওয়ামী লীগ আমলে দলীয়করণ হয়েছে - এটা সত্যি। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিলো এই কুচকাওয়াজের আগেই এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা। সেটি না করে, তারা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে সিদ্ধান্ত নিলো, যা তাদের নতজানু আচরণ ও সক্ষমতার অভাবকেই তুলে ধরেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলছেন, আগেও বিভিন্ন সময় প্রার্থীর কিংবা তার আত্মীয় স্বজনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দেখিয়ে অনেককে চাকরিতে চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বঞ্চিত বা চাকরিচ্যুত করা হয়েছিলো।

“এখনো সেই ধারা চলমান থাকলে তা হবে দুঃখজনক। কেউ যদি রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবাদে পরীক্ষায় সুবিধা পেয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন, প্রমাণসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে যৌক্তিক,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

"কিন্তু সবাইকে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে চাকরিতে যোগদান থেকে বঞ্চিত করাটা সঠিক হবে না।"