News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে খরচ কমবে এবার?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2024-03-12, 11:05am

8d983f20-dfaf-11ee-8bf3-195418ba9285-3888f764a8883177b1535f3e9b903fa51710219954.jpg




মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে ‘সিন্ডিকেট’ করা বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর ‘ভিসা হ্যান্ডলিং’ কার্যক্রম বন্ধ করায় সেখানে যেতে আগ্রহী কর্মীদের খরচ কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও সাধারণ এজেন্টরা। তবে, এতে অন্যতম বড় এই শ্রমবাজারে অবস্থান হারানো নিয়ে শংকাও তৈরি হয়েছে কারো কারো মধ্যে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বিন ইসমাইল গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন। যার বিষয়বস্তু ছিল মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও সরকারের নতুন কিছু সিদ্ধান্ত জানানো।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশটির সরকার অনুমোদিত যেসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এতোদিন ধরে সেদেশে কর্মী পাঠাতে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করতো তাদের বদলে এখন থেকে নিয়োগকর্তাই সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

“ইমিগ্রেশন বিভাগের মাইভিসা পোর্টালে ই-ভিসার জন্য এখন থেকে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন নিয়োগকর্তারা,” বলেন মি. নাসুশন।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত কিন্তু সিন্ডিকেটভুক্ত নয় এমন একটি এজেন্সির প্রধান (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বিবিসি বাংলাকে বলেন, এতোদিন যেহেতু ওই তালিকাভুক্ত এজেন্সিগুলোর নামেই শুধু ভিসা মঞ্জুর হতো, প্রতি ভিসার বিপরীতে তাদের এক লাখ সাত হাজার টাকা করে দিতে হতো।

এখন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না থাকলে শ্রমিকদের লাখ টাকার বেশি খরচ বেঁচে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

“বাংলাদেশ সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত দুই হাজার সাতশো এজেন্সি আছে। আমরা তো বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি। তাহলে শুধু একশো জন কেন ভিসার অনুমোদন পাবে।”

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বিন ইসমাইল গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন

সাধারণ জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যেহেতু প্রায় পৌনে তিন হাজার এজেন্সির সঙ্গে কাজ করা মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের বাইরের একটা এজেন্সিকে শ্রমিকের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি হতে হয়।

আর ‘ভিসা হ্যান্ডলিং’ করে সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সি।

তবে, মালয়েশিয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত কিছু সংশয়ের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী।

“এক বছর ধরে তো নতুন কোনো অ্যাপ্রুভাল দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে যেসব অ্যাপ্রুভাল প্রস্তুত আছে কিন্তু শ্রমিকরা ভিসার আওতায় আসেননি বা যেতে পারেননি তাদের জন্যই মূলত এই নির্দেশনা।”

এখনো এজেন্সিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে যাচ্ছে, কারণ ‘প্রসেসিং’ তাদের মাধ্যমেই করতে হবে, বিবিসি বাংলাকে এমনটাই ধারণা দিলেন তিনি।

মি. চৌধুরীর মতে, যে কোনো পদ্ধতিতে ‘মাইগ্রেশন কস্ট’ কমা উচিত।

অভিবাসন সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট বা 'রামরু'-র চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা একটা ভালো খবর। মালয়েশিয়া সরকারকে সাধুবাদ জানানো উচিত।

“সরকার যেখানে সবাইকে লাইসেন্স দিয়েছে। সেখানে, কয়েকজনকে সিন্ডিকেট করে দেয়াটা অন্যায়।”

বছর দুয়েক আগে দেশটিতে শ্রম রপ্তানির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের সাধারণ রপ্তানিকারকদের মধ্যে। পরবর্তীতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এজেন্সিগুলোর একটা অংশকে সিন্ডিকেটভুক্ত করা হয়েছিল।

সেই প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, আন্দোলন করার পরে দেখা গেল যারা আন্দোলন করেছে তাদের সিন্ডিকেটে নিয়ে নেয়া হলো। ফলে ওই রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিগুলোর কোনো নৈতিক অবস্থান ছিল না।

ভবিষ্যতে যেন সবাই সমান সুযোগ পায় এমন তাগিদ দিলেন এই অভিবাসন বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মালয়েশিয়া সরকার মূলত তাদের উদ্যোক্তা ও অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগকারীদের জন্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনছে। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো এর মূল টার্গেট নয়।”

মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্তের কারণ

সম্প্রতি দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যাতে অভিবাসী শ্রমিকদের মালয়েশিয়া গিয়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

কুয়ালালামপুর ভিত্তিক বাংলাদেশি প্রবাসী সাংবাদিক আহমেদুল কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, ২০২২ সালে এখানকার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর চার লাখের বেশি কর্মী এসেছেন।

“তাদের মধ্যে দুই থেকে আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ পেয়েছেন। বাকিদের কর্মসংস্থান মেলেনি,” বলেন মি. কবির।

এর মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের জীবনমান নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তরফেও নানা প্রশ্ন তোলা হয়।

সাংবাদিক আহমেদুল কবির বলেন, “বিভিন্ন কোম্পানি যে শ্রমিকদের এনে কাজ দিতে পারছে না, ডরমিটরিতে মানবেতর অবস্থায় অনেকটা বন্দি করে রাখছে এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা, তাদের অভিবাসন ও কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়া সরকার।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রতিটি সেক্টরে জনবলের বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখছে। বিবেচনা করা হচ্ছে জনশক্তির সম্ভাব্য প্রয়োজনীয়তা।

নতুন করে কোটা খোলার প্রয়োজন পড়বে কি না সে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোও সহজ হবে এই পদক্ষেপের কারণে।

বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগের জন্য নিয়োগকর্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অব্যবহৃত কোটা ৩১ মার্চের পরে বাতিল হয়ে যাবে। আর ১ জুন থেকে এসব কোটার অধীনে বিদেশি শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেবে না পুত্রজায়া।”

যদিও সরকারের এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ফেডারেশন অফ মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স এবং মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র ভাষ্য, হুট করে এমন পদক্ষেপে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক খাতগুলোতে অচলাবস্থা তৈরি হবে।

পুরানো টানাপোড়েন

বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজার হিসেবে মালয়েশিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছিলো ১৯৯২ সালে। কিন্তু কয়েক বছর চলার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর ২০০৬ সালে আবার কর্মী প্রেরণ শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু বিপুল সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি ধরা পড়ার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এরপর দু'দেশের মধ্যে আলোচনার পর ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে আবার নতুন চুক্তি হয়। কিন্তু কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যসহ নানা অভিযোগে ২০১৮ সালে সেটি বন্ধ করে মাহাথির মোহাম্মদের সরকার।

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সাথে মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী প্রেরণ বিষয়ক একটি সমঝোতা স্বারক সই করে।

তবে তারপরও কর্মী নিয়োগ বন্ধ ছিল।

কারণ মালয়েশিয়ার তরফ থেকে শুধুমাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে।

এরপর থেকে ছয় মাস যাবৎ দুই দেশের সরকারের মধ্যে শুধু চিঠি চালাচালি হয় এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক বারবার মালয়েশিয়ার তরফ থেকে পিছিয়ে দেয়া হয়।

ওই বছরের জুন মাসের দুই তারিখ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানানের উপস্থিতিতে ঢাকায় দুই দেশের একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিষয়টির এক ধরনের সুরাহা হয়।

নিদিষ্ট সংখ্যায় এজেন্সির উল্লেখ না থাকলেও মালয়েশিয়া শুধুমাত্র তার পছন্দমতো এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেবে সেই সিদ্ধান্ত হয়।

কয়েকজন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানালেন, “মালয়েশিয়ায় ডিমান্ড আছে। নতুন অর্ডার আসতে পারে।”

কিন্তু, নতুন বাস্তবতায় তা বাংলাদেশে আসবে কি না সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। বিবিসি বাংলা