News update
  • Consensus not to use emergency for political ends: Ali Riaz     |     
  • Sunamganj’s age-old boat market dull as normal floods rare     |     
  • Italian PM Giorgia Meloni to Visit Bangladesh on Aug 30-31     |     
  • BNP to Get 38.76% Votes, Jamaat 21.45%, NCP 15.84%     |     
  • Bangladesh’s Democratic Promise Hangs in the Balance     |     

মালয়েশিয়ার কাছে অসহায় বাংলাদেশ?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2024-04-04, 9:58am

img_20240404_095848-9323afcf79b393abb406b106e8fd4f011712203145.png




মালয়েশিয়ায় তিন হাজার ৬০৪ জন বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশিদের এই সংখ্যা ছিলো ১৫০ জন। মাত্র চার বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ২৪ গুণ।

আর এই সেকেন্ড হোম করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মালয়েশিয়ার ব্যাংকে জমা রাখতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে," তারা বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে অর্থ  নেননি।”

মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের মালিকদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান এখন চতুর্থ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মালয়েশিয়ার দেয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বৈধ-অবৈধ অর্থ সেখানে পাচার হচ্ছে। আবার কেউ কেউ তৃতীয় দেশে অর্থ পাচারের জন্য মালয়েশিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।

মালয়েশিয়া আরো আগ্রাসীভাবে এই প্রক্রিয়া চালাতে এখন সেকেন্ড হোম করার শর্ত আরো সহজ করেছে। প্ল্যাটিনাম, গোল্ড ও সিলভার এই তিন ভাগে আবেদনকারীদের ভাগ করা হয়। প্ল্যাটিনাম স্তরের আওতায় অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই ৫০ লাখ রিঙ্গিত ( ১ রিঙ্গিত= ২৭ টাকা) , গোল্ড স্তরের ২০ লাখ এবং সিলভার স্তরের অংশগ্রহণকারীদের পাঁচ লাখ এর একটি স্থায়ী আমানত থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচিত সব স্তরের অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই বার্ষিক মোট ৬০ দিন মালয়েশিয়ায় বসবাসের ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য অভিবাসন বিভাগের সঙ্গেও কাজ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সব ফরম পূরণ করার পর নিরাপত্তা অনুসারে আবেদনকারী যোগ্য কি না, তা তিন কার্যদিবসের মধ্যেই যাচাই করা হবে।

সংশোধিত শর্ত অনুযায়ী, আবেদনকারীরা ১০ বছরের আগে তাদের সম্পত্তি পুনরায় বিক্রি করতে পারবেন না এবং তাদের ভিসা প্রতি পাঁচ বছর পর পর নবায়ন করতে হবে। দেশটির সরকার আবেদনকারীদের সন্তানের জন্য পছন্দের স্কুল বেছে নেওয়ার সুবিধা দেবে।

কোন দেশের কত?

গত ২৯ মার্চ মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রী টিয়ং কিং সিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দেশটিতে গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৬৬ জন সক্রিয় সেকেন্ড হোম পাস হোল্ডার রয়েছেন। তালিকায় ২৪ হাজার ৭৬৫ জন পাসধারী নিয়ে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়ার চার হাজার ৯৪০ জন, জাপানের চার হাজার ৭৩৩ জন, বাংলাদেশের তিন হাজার ৬০৪ জন, যুক্তরাজ্যের দুই হাজার ২৩৪ জন, তাইওয়ানের এক হাজার ৬১১ জন, যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার ৩৪০ জন রয়েছেন।

এছাড়া, সিঙ্গাপুরের রয়েছেন এক হাজার ২৮২ জন, ভারতের এক হাজার ২২৩ জন এবং অস্ট্রেলিয়ার এক হাজার ৬৯ জন।

মালয়েশিয়া "মাই সেকেন্ড হোম” প্রোগ্রামে ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৬১০টি এবং ২০১৯ সালে তিন হাজার ৯২৯টি আবেদন অনুমোদন দেয়। প্রোগ্রামটি ২০২০ সালের আগস্টে সাময়িক বন্ধ ছিল।এরপর ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় এক হাজার ৪৬৮টি আবেদন অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।

"সেকেন্ড হোম” ক্যাটাগরির নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে ২০২২ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে মালয়েশিয়াজ প্রিমিয়ার ভিসা প্রোগ্রাম ( পিভিআইপি) নামে প্রিমিয়াম ভিসা চালু করে। যেটি প্রায় সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির। পিভিআইপি প্রোগ্রামে আবেদন করেছেন মোট ৪৭ জন বিদেশি ধনী বিনিয়োগকারী, যাদের মধ্যেও একজন বাংলাদেশি  আছেন।

সেকেন্ড হোমের নামে আসলে কী হয়:

বাংলাদেশে  অভিবাসন নিয়ে কাজ করা অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, "যারা সেকেন্ড হোম করেন তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মালয়েশিয়ার ব্যাংকে জমা রাখার পর বাড়ি  ও গাড়ি কেনেন। তারা সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খোলেন। এসব কাজের জন্য তারা যে অর্থ মালয়েশিয়ায় নেন তা বৈধভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। পুরো অর্থই তারা অবৈধ পথে নেন।”

তার কথা, "কেউ তাদের স্ত্রী সন্তানদের ওই দেশে রাখেন। তারা স্থায়ীভাবে ওই দেশে থাকেন। আর একটি অংশ আছে নির্দিষ্ট সময়ের পর তারা ওই দেশে তাদের সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠান। তারা বাংলাদেশের অবৈধ অর্থ মালয়েশিয়ায় নিয়ে বৈধ করেন। তার পর সেই অর্থ অন্য দেশে পাঠান। আর এই প্রক্রিয়া তারা অব্যাহত রাখেন। মালয়েশিয়াকে তারা অর্থ পাচারের রুট হিসাবে ব্যবহার করেন।”

তিনি বলেন,"মালয়েশিয়ার সরকার সেকেন্ড হোমধারীদের সংখ্যা প্রকাশ করলেও তাদেও নাম ঠিকানা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রকাশ করেনা। কারণ তারা এটাকে বিদেশি  অর্থ  দেশে নেয়ার একটি কৌশল হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে।”

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের সেকেন্ড হোমধারীরা যদি গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকাও পাচার করে থাকেন তাহলে তার মোট পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে এর পরিমাণ আরো বহু গুণ বেশি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে বাংলাদেশ থেকে দুই ভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। প্রথম আমদানি রপ্তানির নামে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। আর সরাসরি হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে।আর এই অর্থের বড় একটি অংশ অবৈধ আয়। ঘুস, দুর্নীতি, প্রতারণা ও মাদক ব্যবসাসহ অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই অর্থ আয় হচ্ছে।”

তার কথা, "বাংলাদেশ থেকে একজন নাগরিক বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বিদেশে নিতে পারেন। এর বাইরে কোনো সুযোগ নেই। আর বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার  বিদেশে বিনিয়োগের কিছু অনুমোদন দেয়। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে পুরো টাকাই অবৈধভাবে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্ডেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সিআইডি, দুদক আন্তরিক হলে এই পাচারকারী কারা তাদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। বাংলাদেশের মতো মালয়েশিয়া দুর্নীতি বিরোধী জাতিসংঘ সনদে সাক্ষরকারী দেশ। আন্তর্জাতিক পাচারবিরোধী জোট আছে( এগমন্ট গ্রুপ) , মিউচুয়্যাল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স আইন আছে। এগুলো সরকারের সংস্থাগুলো ব্যবহার করলে মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারকারীদের নাম প্রকাশে বাধ্য হবে।”

কী করছে বাংলাদেশ ব্যাংক,  দুদক?

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, "মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমের জন্য সেখানে অর্থ পাঠানোর কোনো অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়নি। বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে ওই অর্থ যায়নি। ওই অর্থ সেখানে কীভাবে গেল সেটা বিএফআইইউ এবং এনবিআর তদন্ত করে দেখতে পারে।”

এদিকে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম বলেন," সেকেন্ড হোমের নামে মালয়েশিয়ায় যে অর্থ পাচার হয়েছে সেটা নিয়ে দুদকের সরাসরি কাজ করার কোনো সুযোগ নাই। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোনো সংস্থা আমাদের তালিকা দেয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয় তাহলে দুদক কাজ শুরু করতে পারে।”

তার কথা, "প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে দেশে মানি লন্ডারিং আইন আছে, আন্তর্জাতিক আইন আছে। সেই আইনেই আমরা কাজ শুরু করতে পারি।

বাংলাদেশের কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছে তা জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা মালয়েশিয়ার কাছে একটি তালিকা চেয়েছিলাম কিন্তু তারা দেয়নি। পরে বিভিন্ন ফোরামে আমরা যখন মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে আবারো বিষয়টি তুলে ধরি তখন তারা বলে, এটা  মালয়েশিয়া সরকারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ। আমরা (বিএফআইইউ) যদি তাদের প্রমাণ দিতে পারি যে কারা মানি লন্ডারিং করেছে বা কাদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলা আছে তাহলে তাদের তথ্য তারা ( মালয়েশিয়া) দেবে। কিন্তু তারা তালিকা দিলেই তো আমরা সেটা চেক করতে পারতাম। তারা দিচ্ছে না। তারা অ্যাভয়েড করছে। তালিকা দেবে না। তারা ইচ্ছে করে এটা করছে।”

আন্তর্জাতিক আইনের সহায়তা নেয়া যায় কী না তালিকা পেতে-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," ওইসব আইনে কোনো দেশকে বাধ্য করা কঠিন। কোনো বাইন্ডিংস নেই।” সূত্র ডয়চে ভেলে বাংলা।