News update
  • SACEP propels South Asia's fight against plastic pollution     |     
  • UN chief urges world leaders to save two-State solution     |     
  • Customers thronge Feni cattle markets ahead of Eid     |     
  • Over 1.5 million foreign pilgrims are in Saudi Arabia for Hajj     |     

মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যেভাবে দেশে ফিরলেন ৫ বাংলাদেশি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2025-02-21, 3:55pm

img_20250221_155537-abfda1497209def8cdaf734d91cbf5d61740131758.jpg




সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে কে না চায়! সেই দলে ছিলেন স্বপ্নবাজ পাঁচ তরুণ। তারা মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি জমান ইউরোপে। ভাবেন দিন বদলাবেই। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তাদের সেই স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। দালালের প্রতারণায় গিয়ে পৌঁছান লিবিয়ায়। পরে যখন বুঝতে পারেন তারা ভয়ংকর মানব পাচারকারী মাফিয়া চক্রের খপ্পরে পড়েছেন, ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়েছে। এরপরের গল্পটা শিউরে ওঠার মতো। নতুন খবর হলো, নির্মম নির্যাতনের শিকার এই পাঁচ বাংলাদেশি মৃত্যুর মুখ থেকে দেশে ফিরেছেন। 

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৫টায় টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আলজেরিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন মানব পাচারের শিকার ঢাকার মোস্তাকিম সরকার, শেরপুরের মোজাম্মেল হক এবং মাদারীপুরের জিহাদ ফকির, রোমান হাওলাদার ও ইয়াসিন হাওলাদার। 

পাচারের শিকার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা তাদের জিম্মি করে অত্যাচার করে। পরে তাদেরকে দিয়ে বাংলাদেশে তাদের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এরপর সে অনুযায়ী দেশ থেকে টাকা পাঠানোর পরে তাদেরকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর জন্যে বোটে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও বাধে বিপত্তি।

সাগরে তাদের বোট নষ্ট হয়ে যায়। এরপর তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে। 

পাচারের শিকার ব্যক্তিরা আরও জানান, কোস্টগার্ড উদ্ধারের পর তাদেরকে আলজেরিয়া সীমান্তে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে তারা অনুপ্রবেশের দায়ে নানা মেয়াদে জেল খাটেন। পরে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং আলজেরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় তারা দেশে ফেরেন। 

সম্মিলিতভাবে কথা বলার পর ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা মাদারীপুরের ইয়াসিন হাওলাদার কথা বলেন আলাদাভাবেও। 

তিনি বলেন, লিবিয়ায় মাফিয়ার কাছে আটক ছিলাম। আমার পরিবার ঋণ, জমি বন্ধক ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে আমার মুক্তিপণ জোগাড় করে দালালদের মোট ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন আমার পরিবারের আর কিছুই নেই।

বিমানবন্দরে কর্মরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) পরিদর্শক শাহ আলম মৃধা বলেন, ইউরোপে যাওয়ার জন্য দেশ ছাড়া বাংলাদেশিরা ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। মানব-পাচারের শিকার পাঁচজনকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ব্র্যাকের এই উদ্যোগগুলোকে আমরা সবসময় সহায়তা করি। 

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার আজিজ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, পাঁচ বাংলাদেশি মানব পাচার সার্ভাইভারের প্রত্যাবাসনের জন্যে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং-ইন-পারসন্স হিরো নেটওয়ার্কের সহায়তা নিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে মানব পাচারের শিকার আরও আট বাংলাদেশিকে ব্র্যাক ও টিআইপি হিরো নেটওয়ার্কের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে এনেছে। 

এ বিষয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে যাদের লিবিয়া নেওয়া হয়, তাদের সবাইকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখালেও তারা চাকরি পান না। উল্টো অধিকাংশকেই লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এরপর তাদেরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অংকের অর্থ। তবে এতকিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না। 

তিনি আরও বলেন, সমস্যা সমাধানে সাধারণ মানুষ ও বিদেশগামীদের সবার আগে সচেতন হতে হবে। এলাকার স্থানীয় দালাল ও মানবপাচার চক্রকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অর্থের লেনদেন খুঁজে বের করতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, বিমানবন্দরের বিদেশ ফেরতদের জরুরি সহায়তায় দিতে গত আট বছর ধরে কাজ করছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার। সিভিলে এভিয়েশন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, এপিবিএনসহ সবার সহযোগিতায় গত আট বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার ও মানবপাচার বিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রেখে যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো-২০২৪ পুরস্কারে ভূষিত আল-আমিন নয়ন ও মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা রায়হান কবিরসহ একটি টিম এই কাজে যুক্ত আছেন। প্রবাসে সংকটে আছেন এমন যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারবেন। আরটিভি