নিজেদের ইতিহাসে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছে ব্রাজিল। বাছাই পর্বের প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে পড়ে আছে সেলেসাওরা। একের পর এক ম্যাচ হেরেই চলেছে। সবশেষ ম্যাচে প্যারাগুয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে ব্রাজিল, যা দলটির বিপক্ষে ২০০৮ সালের পর প্রথম হার। এমনিতে তারকার অভাব নেই ব্রাজিলের। ক্লাব ফুটবলের সেরা তারকারা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতেই ছন্নছাড়া ফুটবল খেলছেন, যে কারণে ভুগছে দল।
কনমেবল অঞ্চলের বাছাই পর্বে শেষ ছয় ম্যাচে মাত্র ১টি জয় ব্রাজিলের। হেরেছে চার ম্যাচে। একটি ম্যাচ ড্র করেছে। এই সময়ে কলম্বিয়া, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে হেরেছে তারা। যাদের মধ্যে প্যারাগুয়ে পয়েন্ট তালিকায় ব্রাজিলের পেছনে আছে।
৮ ম্যাচ শেষে মাত্র ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছে ব্রাজিল। যা বাছাই পর্বের প্রায় অর্ধেক পার হওয়ার পর তাদের সর্বনিম্ন পয়েন্টের রেকর্ড। এছাড়া সবশেষ কোপা আমেরিকায়ও কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি পার হতে পারেনি তারা।
ব্রাজিলের এমন পারফরম্যান্সের পেছনে অনেকেই একজনের অভাবকে দায়ী করছেন। গত বছর অক্টোবরে উরুগুয়ের বিপক্ষে বাছাই পর্বের ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন নেইমার জুনিয়র। সেই ম্যাচ দিয়েই ব্রাজিলের এই ধারাবাহিক অধঃপতন শুরু।
বিগত দুই বিশ্বকাপের বাছাই পর্বেই দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের শীর্ষ দল হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ব্রাজিল। গতবার তো একটি ম্যাচেও হারেনি তারা। এই দুই বাছাই পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন নেইমার। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ১৪ ম্যাচ খেলে নেইমার ৬ গোল করার পাশাপাশি ৮টি গোলে সহায়তা করেছিলেন। আর ২০২২ এর কাতার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে মাত্র ১০ ম্যাচেই সমান ৮টি করে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছিলেন নেইমার। নেইমারের ইনজুরিতে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে যে ভিনিসিউস জুনিয়র-রদ্রিগোরা ব্যর্থ তা স্পষ্ট।
ক্লাব ও জাতীয় দলের জার্সিতে সমানভাবে উজ্জ্বল নেইমার। জাতীয় দলে বরং একটু বেশি। ২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকেই পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের টানছেন তিনি। বিখ্যাত হলুদ জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডও তার। আর তিনি খেললেও যে ব্রাজিলের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে, সেটা পরিসংখ্যানও বলছে।
২০১০ সালে জাতীয় দলে নেইমারের অভিষেকের পর থেকে নেইমার দলে ছিলেন ১২৮ ম্যাচে। এর মধ্যে ৯২ ম্যাচেই জয় পেয়েছে ব্রাজিল। জয়ের হার ৭২ শতাংশ। ড্র করেছে ২৪ ম্যাচে। আর হেরেছে মাত্র ১২ ম্যাচে (মোট ম্যাচের ৯ শতাংশ)।
নেইমারসহ ব্রাজিল
ম্যাচ জয় হার ড্র
১২৮ ৯২ (৭২%) ১২ (৯%) ১২
নেইমারকে ছাড়া ব্রাজিল
ম্যাচ জয় হার ড্র
৬০ ৩৩ (৫৫%) ১৩ (২১%) ১৪
অন্যদিকে নেইমার দলে ছিলেন না ৬০ ম্যাচে। এই সময়ে জয়ের হার নেমে আসে ৫৫ শতাংশে। ৩৩ ম্যাচে জয়ের বিপরীতে হেরেছে ১৩ ম্যাচে (২১ শতাংশ ম্যাচে হার)। বাকি ১৪ ম্যাচ ড্র হয়েছে।
নেইমারকে ছাড়া ব্রাজিল যে অনে দূর্বল, তা স্বীকার করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের তারকা রদ্রিগো। দিন কয়েক আগে ইএসপিএন ব্রাজিলকে তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে নেইমারকে লাগবেই ব্রাজিলের।
তিনি বলেছিলেন, 'সে আমাদের তারকা, আমাদের সেরা খেলোয়াড়। সবাই দেখতে পারছেন, তাকে কী পরিমাণ মিস করছি আমরা। সুস্থ নেইমারকে পাওয়া, যেটা আমারা সবাই চাই, (এবং) সে সেরে ওঠার শেষ ধাপে আছে। আমরা তাকে যত দ্রুত সম্ভব ফিরে পেতে চাই।'
আপাতত ব্রাজিলের জন্য সুখবর হচ্ছে যে, সেরে উঠছেন নেইমার। দ্রুতই মাঠে দেখা যাবে তাকে। আশা করা হচ্ছে, বিশ্বকাপ বাচাই পর্বের পরবর্তী রাউন্ডেই তাকে খেলাতে পারবে ব্রাজিল।