ব্রয়লার ও কালার বার্ডের বাচ্চা বিক্রি করে গত দুই মাসে ৩৬৭ কোটি থেকে ৪৮০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন দাবি করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)। লোকসানি হিসাব কমাতে বাচ্চা উৎপাদন কৌশলপত্র বাস্তবায়নের পাশাপাশি পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের তাগিদ দিচ্ছে সংগঠনটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খামার নিবন্ধনের সঠিক তথ্য ও খামারিরা প্রশিক্ষিত না হলে স্থিতিশীলতা ফিরবে না পোল্ট্রি শিল্পে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন ক্রেতারা। তবে লোকসানের চাপে দম বন্ধ অবস্থা খামারিদের। তারা বলেন, ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। কারণ, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে।
শুধু মুরগির দামই নয়, কমেছে বাচ্চার চাহিদা-দামও। সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো চিঠিতে এমনটাই দাবি করেছে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারীদের শীর্ষ সংগঠন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সংগঠনটির তথ্য, ৪৬ টাকা উৎপাদন খরচের ব্রয়লারের একদিন বয়সি বাচ্চা- ডিওসি গত এপ্রিলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর মে মাসে বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। সে হিসাবে সপ্তাহে ১ কোটি ৯২ লাখ বাচ্চার বিপরীতে ওই দুই মাসে লোকসান হয়েছে ৩২৩ কোটি থেকে ৪১৫ কোটি টাকা।
একইভাবে প্রায় ৪৩ টাকা উৎপাদন খরচের কালার বার্ডের ডিওসি গত এপ্রিলে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা আর মে মাসে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এতে সপ্তাহে ৩৬ লাখ বাচ্চার বিপরীতে ওই দুই মাসে লোকসান হয়েছে ৪৪ কোটি থেকে ৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, দাম পড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার ও কালার বার্ডের বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এপ্রিল-মে মাসে লোকসান গুনেছেন ৩৬৭ কোটি ৪৮০ কোটি টাকা।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, মুরগির বাচ্চা, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম খেয়ালখুশি মতো নির্ধারণ করা যায় না। এটি চাহিদার ওপর নির্ভর করে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো গেলে শতশত কোটি টাকা লোকসান হতো না। লোকসানের ঝুঁকি কমাতে দরকার বাচ্চা, উৎপাদন কৌশলপত্রের বাস্তবায়ন ও সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ।
চাহিদা যোগানের সঠিক হিসাব রেখে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে খামার নিবন্ধনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ছাড়া খামারিদের কাছে বাচ্চা বিক্রি না বরার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. মাকসুদা বেগম বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করা গেলে খামারি, বিক্রেতা ও ভোক্তা কেউই লোকসানের সম্মুখীন হবে না। বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে খামার নিবন্ধনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ছাড়া খামারিদের কাছে বাচ্চা বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
প্রোটিনের এই সহজলভ্য উৎসকে ক্রেতা-বিক্রেতা, সকলের জন্য লাভজনক করতে সরকারকে দূরদর্শী কৌশল নেয়ার তাগিদা খাত সংশ্লিষ্টদের।