একদিকে ডেলিভারির সুবিধার্থে বন্দর থেকে একে একে পণ্য পাঠানো হচ্ছে বেসরকারি অফডকে। অন্যদিকে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই অফডকগুলো আমদানি-রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিং চার্জ ৩০ থেকে প্রকারভেদে ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। ট্রাম্পের শুল্কহারের পাশাপাশি অফডকের চার্জ বাড়তে থাকলে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে পড়ার শঙ্কা বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)।ঊ
বেসরকারি অফডকগুলোতে বর্তমানে ২০ ফুট সাইজের একটি কনটেইনারের স্টাফিং প্যাকেজ ৬ হাজার ১৮৭ টাকা এবং ৪০ ফুট সাইজের জন্য ৮ হাজার ২৫০ টাকা আদায় হলেও প্রস্তাবিত বাড়তি দরে তা ৯ হাজার ৯০০ এবং ১৩ হাজার ২০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। একইভাবে বন্দর হয়ে অফডকের কনটেইনার পরিবহন খরচ ২০ ফুট সাইজের জন্য ১ হাজার ৫০০ এবং ৪০ ফুট সাইজ ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার ও ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এমএসসি শিপিংয়ের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, এর একটি প্রভাব অবশ্যই ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পড়বে। কারণ এর ফলে পরিবহন, মজুত ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাবে। যার প্রভাব ভোক্তা ও আমদানিকারকদের ওপর গিয়ে পড়বে।
সেইসঙ্গে গ্রাউন্ড রেন্ট, লিফট অন-লিফট অফ, ডকুমেন্টেশনের পাশাপাশি স্টোররেন্ট বাড়ছে কনটেইনার প্রতি ৩০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত ১৯ বছরে বন্দরের পক্ষ থেকে কেমিকেলসহ ৬৫ ধরনের পণ্য ওঠা-নামার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ২১টি অফডককে। আবার এই অফডকগুলো গত ৩ বছরের ব্যবধানে তাদের সেবার চার্জ বাড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে চার্জ যেন যৌক্তিক হয় এবং আলোচনা সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করা হয়, সে দাবি জানিয়েছেন অংশীদাররা।
দেশের মোট রফতানির ৯৩ শতাংশ জাহাজীকরণ এবং আমদানি পণ্যের ২০ শতাংশ ডেলিভারি সম্পন্ন হয় ২১টি বেসরকারি অফডকে। এ অবস্থায় অফডকে চার্জ বাড়লে প্রভাব পড়বে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, গার্মেন্টস পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ ট্যাক্সের পাশাপাশি বন্দরও তাদের ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি মিটিং করেছে। এখন যদি বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনও (বিকডা) চার্জ বাড়ায় তাহলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত-দাবি বিজিএমইএর। সংগঠনটির পরিচালক এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা অর্ডার নিতে পারব না। অর্ডার নিতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে না। শিল্পের উন্নয়ন হবে না। তাই বৃহৎস্বার্থে বিকডার এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া সম্ভব নয়।
সবশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে কনটেইনার ওঠা-নামাসহ সব ধরনের কাজে ২৩ শতাংশ চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছিল অফডক মালিকদের সংগঠন বিকডা। আর এবার চার্জ বাড়ানো হচ্ছে পরিচালন খরচ বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, শ্রমিক ব্যয় প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকারও অবমূল্যায়ন হয়েছে। এগুলো পরিচালন ব্যয়ের সঙ্গে মেলাতে পারছি না। তাই সেবার মান বজায় রাখতে বিকডার অন্তর্ভুক্ত ডিপোগুলোকে চার্জ সমন্বয় বা পুনর্নির্ধারণ করতে হচ্ছে।
এদিকে, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেই বাড়তি চার্জ কার্যকর করতে বিকডার প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, অফডকগুলো চার্জ কমানো বা বাড়ানো না, এটাকে যৌক্তিকীকরণ করতেই পারে। তবে সেটি অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই করবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৭৭ হাজার রফতানি এবং ২ লাখ ৬৫ হাজার আমদানি কনটেইনার ওঠা-নামা করেছে বেসরকারি অফডকগুলোতে।