News update
  • Journalists don’t need to enter BB, every info on website: Quader     |     
  • Leverage national consensus to sign basin-based water treaties     |     
  • Parts of northern India scorched by extreme heat      |     
  • Fire at Mutual Trust Bank branch in Dhaka     |     
  • 9 killed as bus catches fire in India's Haryana     |     

মহাকাশ-গবেষণা গোটা মানবজাতির কল্যাণে কাজে লাগুক

ওয়াং হাইমান ঊর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2022-11-18, 6:08pm

wjbjahjh-b716371db679eca967a054d1b20555b31668773288.jpg




সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, নতুন প্রজন্মের চন্দ্রযান "স্পেস লঞ্চ সিস্টেম"-এর উৎক্ষেপণ ১৬ নভেম্বর করা হবে।

নাসা এর আগে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে একটি মহাকাশযানের ধাক্কায় একটি গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তনের পরীক্ষায় সফল হয়। "এটি আমাদের গ্রহের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত; এটি মানবতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত," নাসার প্রশাসক নিলসেন তখন বলেছিলেন। চায়না অ্যারোস্পেসও এর জন্য নাসাকে অভিনন্দন জানায়। 

কিন্তু দুঃখের বিষয়, নাসার পরিচালক নিলসেন সম্প্রতি এমন অনেক মন্তব্য করেছেন, যা চীনের প্রতি আক্রমণাত্মক। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, ৭৩তম আন্তর্জাতিক মহাকাশচারী কংগ্রেসে, নিলসেন দাবি করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে মহাকাশ খাতে সহযোগিতা "চীনা পক্ষের ওপর নির্ভর করে" এবং চীনকে " খোলা দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতে হবে।" আর জুলাইয়ের শুরুতে নিলসেন বলেছিলেন, "চীনের মহাকাশ কর্মসূচি সামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত; আর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের, শান্তিপূর্ণ ও উন্মুক্ত বেসামরিক কার্যক্রম।" 

প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশকে সামরিকীকরণের সূচনাকারী। স্নায়ুযুদ্ধের যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত, এ দেশ সামরিক স্যাটেলাইটের সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকে একটি মহাকাশ-ভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা ব্যবস্থা (ডিএসপি) তৈরি করতে শুরু করে। স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর, মার্কিন সামরিক বাহিনী ঘন ঘন মহাকাশে মহড়া চালিয়েছে এবং মহাকাশে নিজের আধিপত্য ঘোষণা করতে থাকে। 

মার্কিন স্যাটেলাইটগুলো মহাকাশে বেপরোয়াভাবে কাজ করে এবং ন্যূনতম স্পেস অ্যাকশন নির্দেশিকা মেনে চলে না। মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্তর্গত GSSAP সিরিজের উপগ্রহগুলো গত পাঁচ বছরে বহুবার চীন ও রাশিয়ার যোগাযোগ উপগ্রহগুলোর কাছাকাছি অবৈধভাবে চলে আসে। এক্ষেত্রে নিকটতম দূরত্ব ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার, যা স্যাটেলাইটের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে গুরুতরভাবে হস্তক্ষেপস্বরূপ। ২০২১ সালের জুলাই এবং অক্টোবরে, আমেরিকান "স্টারলিংক" উপগ্রহ, যেটি "নিখুঁত মহাকাশ সংঘর্ষ এড়ানোর প্রযুক্তিসম্পন্ন" বলে দাবি করা হয়, দু’বার মহাকাশচারীদের বহনকারী চীনা মহাকাশ স্টেশনের কাছাকাছি চলে আসে।

নিলসেনের দাবি এই যে, "চীনা মহাকাশ-গবেষণার নেতৃত্বে আছে সামরিক বাহিনী", যা আরও বেশি বাজে কথা। যদি নিলসেন বিশ্বাস করেন যে, "চীনা মহাকাশচারীদের সকলেরই সামরিক পটভূমি আছে" এবং তাই "চীনা মহাকাশ-গবেষণার নেতৃত্বে আছে সামরিক বাহিনী", তাহলে নিলসেন নিজেও সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন। তিনি মার্কিন বিমানবাহিনীতে কাজ করেছেন। এখন আমরা কি বলতে পারি যে, নাসা মার্কিন সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন একটি সংস্থা? 

২০২১ সালে হেনানে প্রবল বৃষ্টিপাতের সময়, একটি তুলনামূলক চার্ট সারা ইন্টারনেটজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে: মোবাইল যোগাযোগ রিলে পরিষেবা প্রদানের জন্য চীনা ড্রোন যখন দুর্যোগপূর্ণ এলাকার আকাশে উড়ছিল, তখন আমেরিকান ড্রোনগুলো বিদেশের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছিল। একই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এক পক্ষ সেটি ব্যবহার করছে মানুষের কল্যাণে এবং অন্যপক্ষ তা ব্যবহার করছে মানুষ হত্যায়। পার্থক্য আসলে এখানেই।

চীনের মহাকাশ-গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের মানুষের উপকার করা। ২০০৮ সালে চীন পরিবেশগত দুর্যোগ প্রশমন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে জাতিসংঘের মহাকাশ-ভিত্তিক তথ্য প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রচুর পরিমাণে ডেটা-সহায়তা দিয়েছে। 

চীনের স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমনের লক্ষ্যে উত্ক্ষেপিত স্যাটেলাইটের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে, যখন হারিকেন জুলিয়েট ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া এবং অন্যান্য দেশে আঘাত হানে, তখন চীনা স্যাটেলাইটগুলো সেসব দেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় শক্তিশালী সমর্থন প্রদান করে। শ্রীলঙ্কায় বন্যা, লাওসে টাইফুন, টোঙ্গায় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ইকুয়েডরে ভূমিকম্প মোকাবিলায় চীনা স্যাটেলাইটগুলো পরিষেবা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেকে "পৃথিবী ও মানুষের রক্ষাকারী দেবদূত" হিসেবে উপস্থাপন করতে মরিয়া, তখন চীনের মহাকাশ-গবেষণা নীরবে বিশ্বকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মহাকাশ-গবেষণার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানবজাতির কল্যাণ। চীন সেটাই করছে। শুধুমাত্র যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দ্বৈতনীতি পরিত্যাগ করবে, রঙিন চশমা খুলে ফেলবে, অন্যায্য লড়াই বন্ধ করবে, একতরফা অবরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নীতি পরিত্যাগ করবে, তখনই চীন ও যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ খাতে যৌথ অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হবে, তার আগে নয়।

(ওয়াং হাইমান ঊর্মি, সাংবাদিক, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।)