News update
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     
  • Rising Heat Cost Bangladesh $1.8 Billion in 2024     |     
  • Stocks extend gains; turnover drops in Dhaka, rises in Ctg     |     
  • IAEA Chief Calls for Renewed Commitment to Non-Proliferation     |     
  • UN Aid Chief Warns Humanitarian Work Faces Collapse     |     

মোবাইল ফোনে বিজয় কী-বোর্ড ব্যবহারে নির্দেশনার পেছনে যে যুক্তি দিচ্ছে সরকার

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2023-01-18, 9:20am

928d1420-9676-11ed-bc7a-fd2ef86df078-0b4df4bab3ad21e7e996c43189f263df1674012058.jpg




স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং আমদানি করা সব ধরনের স্মার্ট ফোনে বিজয় বাংলা কী-বোর্ড সংযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। বিজয় কী-বোর্ডের মালিক এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বিজয় কী-বোর্ড "বাংলা লেখার জাতীয় মান" হওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে ১৩ই জানুয়ারি দেয়া এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, সব ধরনের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড প্যাকেজ কিট বা এপিকে ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এই ফাইল ইনস্টল করা না থাকলে কোন মোবাইল উৎপাদনকারী বা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান তাদের মোবাইল ফোন বাজারজাত করতে পারবে না।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আমদানি বা প্রস্তুত করার জন্য বিটিআরসির অনুমোদন লাগে।

বিটিআরসি থেকে জানানো হয়, এই চিঠি জারি হওয়ার তারিখ অর্থাৎ ১৩ই জানুয়ারি থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে। আর চিঠি জারির তিন কার্যদিবস পর থেকে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে বিনামূল্যে এপিকে ফাইল পাওয়া যাবে।

‘ব্যক্তিমালিকানার’ কী বোর্ড

সব ধরনের স্মার্টফোনে যে বিজয় কী-বোর্ডের ফাইল এপিকে ইন্সটল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার মালিকানা বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বিজয় বাংলা কী-বোর্ডকে বাংলা লেখার একটি মান হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, বিডিএস ১৭৩৮ নামে বিজয়ের এই কী-বোর্ড সরকারি কী-বোর্ড এবং এই কী-বোর্ডকে সরকার জাতীয় মান হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বিটিআরসি থেকে জানানো হয়, এই চিঠি জারি হওয়ার তারিখ অর্থাৎ ১৩ই জানুয়ারি থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে। আর চিঠি জারির তিন কার্যদিবস পর থেকে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে বিনামূল্যে এপিকে ফাইল পাওয়া যাবে।

‘ব্যক্তিমালিকানার’ কী বোর্ড

সব ধরনের স্মার্টফোনে যে বিজয় কী-বোর্ডের ফাইল এপিকে ইন্সটল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার মালিকানা বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বিজয় বাংলা কী-বোর্ডকে বাংলা লেখার একটি মান হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, বিডিএস ১৭৩৮ নামে বিজয়ের এই কী-বোর্ড সরকারি কী-বোর্ড এবং এই কী-বোর্ডকে সরকার জাতীয় মান হিসেবে ঘোষণা করেছে।

তিনি বলেন, উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে এটা ইন্সটল করতে হবে যাতে ব্যবহারকারী চাইলে এটা ব্যবহার করতে পারে। ব্যবহারকারী চাইলে অন্য কী-বোর্ড ব্যবহার করতে পারে বলেও জানান মন্ত্রী।

তার মতে, স্মার্টফোনে বাংলা লিখতে গেলে কোন একটি সফ্টওয়্যার ইনস্টল করে তারপর বাংলা লিখতে হয়। আর এই ফাইল ইন্সটল করা থাকলে ফোন হাতে পেয়েই বাংলা লেখা শুরু করা যাবে। ফলে এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করা হলো।

আরো কিছু কী-বোর্ড থাকলেও, সেগুলো তার ভাষায়, ‘স্ট্যান্ডার্ড’ না হওয়ায় বিজয় কী-বোর্ড ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাদের বাংলার জন্য যেটা স্ট্যান্ডার্ড সেটাই দেয়া হইসে।”

“এটা আসলে লক করে দেয়া হচ্ছে না। লক করে দেয়া হলে বলা যেতো যে এটা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এটা একটা অপশন।”

তবে, এপিকে যেহেতু ব্যক্তি মালিকানার এবং এর মালিক খোদ টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, তাই এটা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের সংঘাততের বিষয় কিনা এমন প্রশ্নে মোস্তাফা জব্বার বলেন, "এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব হওয়ার কোন সুযোগ নেই।"

তিনি বলেন, "এটা সম্পূর্ণ ফ্রি। এটা চাইলে যে কেউ ইন্সটল করতে পারে। বিটিআরসি না দিলেও এটা যে কেউ ইন্সটল করে ব্যবহার করতে পারে।" আর যেহেতু এটা ইন্সটল করতে কোন ফি দিতে হয় না, তাই এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই বলে মনে করেন তিনি।

“কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট কিভাবে হয়? আমি কি টাকা নিচ্ছি এখান থেকে?” বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই সরকারের নির্দেশনা আছে যে সব ফিচার ফোনে বাংলা লেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর এর জন্য সরকার একটা কী-বোর্ডকে স্ট্যান্ডার্ড করেছে।

তিনি বলেন, যেহেতু ফোনে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে তাই একটা কী-বোর্ড দিয়ে দেয়া হচ্ছে। ব্যবহারকারী কোনটা ব্যবহার করবেন সেটা তার পছন্দ।

এই কী-বোর্ড ব্যবহারের বিষয়ে বিটিআরসি কোন ব্যবস্থা নেবে না বলেও জানান মন্ত্রী।

‘তথ্য প্রযুক্তি খাতের উদাহরণ’

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সরকারি নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে এটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

তাদের মতে, ভবিষ্যতে যদি কেউ একই ধরনের আরেকটি প্রযুক্তি নিয়ে আসে, তাহলে সেটিও ব্যবহার করতে সরকার নির্দেশ দেবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, "বিজয় ব্যক্তিগত একটা সম্পদ, এটাকে যখন সরকারি নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে, এটা পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি খাতে একটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।"

“কালকে আমি একটা সফ্টওয়্যার বানালাম, মন্ত্রণালয়ে উর্ধ্বতন পর্যায়ে আমার কেউ আছে, তাদের মাধ্যমে সেটাকে পুশ করালাম, এই ধরনের একটা প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এটি ব্যবহারের নির্দেশনা না দিয়ে বরং বিজয় কী-বোর্ডের মালিক বলতে পারতেন তাদের কী-বোর্ডটি আরো উন্নত হয়েছে। এবং চাইলে যে কেউই এটা সহজে ব্যবহার করতে পারে।

সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, "বিজয়ের কিছু সুবিধা রয়েছে। এটি বিজ্ঞাপনমুক্ত। অন্য যেসব কী-বোর্ড রয়েছে সেগুলোতে বিজ্ঞাপন আছে। এসব বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভাইরাস বা স্প্যাম আসতে পারে। আবার ফিশিং লিংকের মাধ্যমে ডাটা চুরি হতে পারে।"

তার মতে, এক্ষেত্রে বিজয় কিছুটা নিরাপদ কারণ তারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করে না। তারা পুরো সফ্টওয়্যারটি ফ্রি দেয়।

“এভাবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্দেশনা না দিয়ে যদি বিজয় তাদের লেটেস্ট ফিচারগুলো নিয়ে বলতো, তাহলে ব্যবহারকারীরা আরো বেশি আগ্রহী হতো।”

তার মতে, যেহেতু বিটিআরসি থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, তাই অনেকে ভয় পাচ্ছে যে, বিজয়ের মাধ্যমে কোন ডাটা নিয়ে যাবে কি না বা বিজয় ব্যবহার না করলে আইনানুগ কোন জটিলতায় পড়তে হবে কি না।

কিন্তু মি. সেলিম বলেন, বিজয় নিরাপত্তার দিক থেকে অন্য থার্ড পার্টির তুলনায় ভাল এবং এটা যেহেতু একটা প্রতিষ্ঠান তাই এর মাধ্যমে কোন মোবাইল ফোন ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্থানীয়ভাবে এটাকে ধরা যাবে।

তিনি বলেন, এখন অনেক ওপেন সোর্স কী-বোর্ড পাওয়া যায়। অনেক তরুণ এগুলোর ডেভেলপিংয়ের কাজ করে। এখানে কাজ শেখার একটা ক্ষেত্র আছে। বিজয় বাধ্যতামূলক করার কারণে, এই খাতটি সংকুচিত হতে পারে।

“তখন থার্ড কী-বোর্ডগুলো আর ডেভেলপমেন্টের জায়গা পাবে না।”

কারণ বিজয় যদি মোবাইল ফোনে শুরু থেকেই দেয়া থাকে তাহলে অন্য কী-বোর্ডের প্রতি অনেকে আর ঝুঁকতে চাইবে না বলেও মনে করেন তিনি।

তবে এখনো অনেকে ফোনেটিক্সের মাধ্যমে বাংলা টাইপ করতে বেশি পছন্দ করে। ফলে তাদের কাছে বিজয় কী-বোর্ড তেমন জনপ্রিয়তা পাবে না বলেও তিনি মনে করেন। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।