News update
  • Air India Plane with 242 Crashes After Takeoff in Ahmedabad     |     
  • 1,500 rights activists set off for Gaza by road     |     
  • Over 55,000 Palestinians killed in Israel-Hamas war     |     
  • Dhaka’s air quality moderate Thursday morning     |     
  • Mangoes rot as Eid shutdown crushes Naogaon growers     |     

মস্তিষ্ক যেভাবে স্মৃতি ধরে রাখে

GreenWatch Desk বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2022-04-07, 12:15am

brain-8b373710bcf876edd91f281e50ed58ab1649268922.jpg




মানুষের মস্তিষ্ক দেহের অন্যান্য অঙ্গ থেকে বেশ ভিন্ন। আপাতত দৃষ্টিতে অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় মস্তিষ্ক যেন অনেকটা নিষ্প্রাণ। এটা ফুসফুসের মতো সংকুচিত-প্রসারিত হয়না কিংবা হৃদপিন্ডের ন্যায় পাম্প করে না। খুলির ভেতর উঁকি দিলে ভেতরে খুব বিশেষ কিছু ঘটছে, দেখে তেমনটি মনে হবার নয়।

তাই মোটেও অবাক হবার নয় যে অতীতে মানুষের মাথাকে দেহের জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মনে করা হতো না। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটলের মনে করতেন, মাথা রেডিয়েটরের মতো কাজ করে, রক্ত ঠান্ডা করে। ফরাসি বিজ্ঞানী রেনে ডেকার্টের মত ছিল মস্তিষ্ক এক ধরনের এন্টেনা।

তবে এসব ভুল সরিয়ে আমরা সবেমাত্র মস্তিষ্কের বিস্ময়কর ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা অবগত হচ্ছি।

আমরা এখন জানি, মস্তিষ্কের মূল ভূমিকা হলো শরীরের অন্যান্য অঙ্গকে সচল রাখা। গড়ে ৩ পাউন্ড (১.৪ কেজি) ওজনের মস্তিষ্কে নিউরনের সংখ্যা ১০০ বিলিয়ন। এগুলোর কিছু আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদপিণ্ডের পাম্পিং, রক্তচাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।

আবার অনেক নিউরন আমাদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়া মস্তিষ্ক আমাদের আবেগ, ধারণা, চিন্তাভাবনা সৃষ্টি করে, আমাদের আচার-আচরণ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আমাদের শারীরিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়া, মস্তিষ্ক আমাদের স্মৃতি ধরে রাখে। তবে, মস্তিষ্কে স্মৃতি কোন নির্দিষ্ট অংশ জমা থাকে না।

সর্বোপরি, মস্তিষ্ক আমাদের মনের সচেতনতার মূল কারণ।

মস্তিষ্কের ওজন কত?

মানুষের মস্তিষ্কের গড় ওজন ১৩০০ থেকে ১৪০০ গ্রাম বা ৩ পাউন্ড। নবজাত শিশুর মস্তিষ্কের ওজন ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। লম্বায় পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক ১৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।

ছেলে ও মেয়ের মস্তিষ্কের পার্থক্যঃ

ওজনে ছেলেদের মস্তিষ্ক মেয়েদের মস্তিষ্কের তুলনায় সামান্য বেশি হয়। তবে মেয়েদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব ও লিম্বিক কর্টেক্স ছেলেদের তুলনায় বড় হয়। ফ্রন্টাল লোব ও লিম্বিক কর্টেক্স সমস্যার সমাধান ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

আর ছেলেদের প্যারাইটাল কর্টেক্স ও অ্যামিগডালা মেয়েদের তুলনায় বড় হয়। প্যারাইটাল কর্টেক্স ও অ্যামিগডালা কোন স্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে ও স্মৃতি প্রক্রিয়াজাত করতে কাজ করে।

সব মানুষের মস্তিষ্কের আকার বা ওজন এক নয়। তবে গবেষণায় মস্তিষ্কের আকার বা ওজনের সাথে বুদ্ধিমত্তার কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। যেমনঃ অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের ওজন সুস্থ শিশুর তুলনায় কিছুটা বেশী হয়। আবার আলঝেইমার্সে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মস্তিস্কের হিপোক্যাম্পাস আকারে ছোট হয়।

স্মৃতির আধার মস্তিষ্ক

স্মৃতির কয়েকটি ধরণ আছে। কিছু স্মৃতি একসময় হারিয়ে যায়, কিছু চিরকাল রয়ে যায়।

স্মৃতি বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি সেগুলো হলো explicit memory। এই ধরণের স্মৃতিকে সচেতনভাবে স্মরণ করতে হয়। এরা কোন ঘটনা বা অভিজ্ঞতা হতে আসে, যেমনঃ বিশেষ কোথাও বেড়াতে যাওয়া কিংবা কোন কিছুর প্রথম অভিজ্ঞতা।

আবার, যেসকল তথ্য সাধারণ জ্ঞান হিসেবে আমরা মুখস্থ করি, সেগুলোও explicit memory।

অপরদিকে, implicit memory নিয়ে আমরা সচেতন থাকিনা। এরা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি (long term memory)। এই স্মৃতি কোন কিছু শেখার ফলে সৃষ্ট মোটর স্কিলের সাথে জড়িত, যেমনঃ খেলাধুলা, বাইক চালান কিংবা কম্পিউটারের কি বোর্ড ব্যবহার করা ইত্যাদি।

আমাদের মস্তিষ্ক বেশ আশ্চর্যজনক। এটি অত্যাধুনিক কম্পিউটারের মতো মস্তিষ্ক  হাজার হাজার ডেটা বা তথ্য সাজাতে এবং পুনরুদ্ধার করতে পারে।

কিন্তু এটা ঠিক কিভাবে কাজ করে? আমাদের মস্তিষ্ক কি কখনো ভুল করতে পারে? কেন আমরা কিছু জিনিস মনে রাখি এবং কিছু ভুলে যাই?

স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মেমোরি বা স্মৃতিকে তিনটি বিভাগে ভাগ করেনঃ স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি এবং কার্যকরী স্মৃতি।

প্রতিটি ধরনের স্মৃতি মস্তিষ্কের একটি ভিন্ন অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি

এই ধরণের স্মৃতি ফ্রন্টাল লোব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

এটি এমন তথ্য যা অল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয় এবং এটিকে মস্তিস্ক প্রক্রিয়াজাত করে না।  উদাহরণস্বরূপ, একটি ফোন নম্বর ডায়াল করার সময় মনে রাখতে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি আমরা ব্যবহার করি৷ এধরণের তাৎক্ষণিক কাজে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি কাজে লাগে।

কার্যকর স্মৃতি

এই ধরণের স্মৃতি স্বল্পমেয়াদী স্মৃতির মতোই, কিন্তু কার্যকর স্মৃতির সাহায্যে ডেটা বা তথ্য ম্যানিপুলেট বা ব্যবহার করা যায়।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন কয়েক সেকেন্ডের চেয়ে বেশি সময় ধরে কোন ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টা করি, তখন আমরা নম্বরটি লিখে রাখি বা  এটি অন্য কারো সাথে শেয়ার করি।

এসময় তথ্য আমাদের কার্যকর স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে।

দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি

দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিগুলো আমরা দীর্ঘদিন স্মরণ করে রাখি। আমাদের জীবনের বিশেষ কোন স্মৃতি বা একটি বইয়ের এমন কিছু তথ্য বা বর্ণনা যা  সত্যিই আগ্রহী বা আমাদের গভীরভাবে আন্দোলিত করেছে।

যে জিনিসগুলো আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা আমরা যে কাজগুলো সবচেয়ে বেশি করি সেগুলো আমরা বেশী মনে রাখি।

তবে, স্নায়ুবিজ্ঞানীদের এখনও স্মৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু বোঝার আছে। কিন্তু তারা জানে যে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি মস্তিষ্কের  হিপ্পোক্যাম্পাসে থাকে।

হিপোক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত হলে, মানুষ কখনও কখনও স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভোগে এবং নতুন কিছু বুঝতে, শিখতে বা মনে রাখতে সক্ষম হয় না। তবে তারা আগে ঘটে যাওয়া সবকিছু মনে রাখতে পারে।

তবে, স্মৃতি সবসময় নির্ভরযোগ্য নয়। কখনও কখনও আমাদের মস্তিষ্ক কোন বিষয়ের এমন বিশদ বিবরণ যোগ করে যা বাস্তবে ঘটেনি।

এ বিবরণগুলো হয়তো অতীতে অন্য কেউ আমাদের বলেছিল বা কোন একটি বইয়ে আমরা পড়েছিলাম, যে বিবরণগুলো আমাদের নিজের জীবনের সাথে মানানসই বলে মনে হয়।

এই ধরণের ঘটনা সম্পর্কে আমরা সাধারণত সচেতন থাকিনা বলে অবাস্তব তথ্য গুলো আমাদের মস্তিস্কে স্মৃতি হিসেবে জায়গা করে নেয়। তথ্যসূত্রঃ বিঞ্জানজগত।