টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে দেশের নদনদী পানি। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যার বিস্তার ও অবনতি হয়েছে। দুই দফা বন্যার পর ফের ডুবছে বিভিন্ন এলাকা।
ইতোমধ্যে পাঁচ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও শেরপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবছে উত্তরে জনপদও। ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিন দিন আরও অবনতির দিকে যাওয়ার আশঙ্কার রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বেড়ে এ অঞ্চলের ছয় জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বন্যার মধ্যমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং অন্যান্য নদীর পানি কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা, নুনখাওয়া, হাতিয়া, চিলমারী, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সাঘাটা, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের সংশ্লিষ্ট নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলের কিছু পয়েন্টে নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আভাস দিয়ে বলা হয়েছে, যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৮০ থেকে ১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ শেষে নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে। দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানির সমতল সার্বিকভাবে কমা শুরু করতে পারে এবং ওই সপ্তাহের শেষের দিকে চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
এদিকে পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি আগামী তিন দিন বেড়ে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরের নদীসংলগ্ন কিছু নিম্নাঞ্চল স্বল্পমেয়াদে প্লাবিত হতে পারে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ-সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের সাতটি জেলা বন্যায় আক্রান্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সেখানকার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেটের ১৩টি উপজেলার তিনটি পৌরসভা ও ৮৮টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত রয়েছে। আর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৮ জন। এর মধ্যে ১৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৮ হাজার ৮২৮ জন ।
ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে সেখানে ৮০ হাজার ২০৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৭ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭০৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার ১৭৭ জন এবং ৮২২টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি অতি বৃষ্টি ও নদীর পানি বাড়ার ফলে ফেনীর মহুরী ও কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আর বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২ হাজার ৯৫৭ পরিবার ও ১১ হাজার ৭২৭ মানুষ।
এদিকে মৌলভীবাজারের সাত সাতটি উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়নের ৪৯৯টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ৬০ হাজার ৯২৪টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ লাখ ৩ হাজার ৩২৭ মানুষ। তথ্য সূত্র আরটিভি।