News update
  • Israeli Aggression against Qatar, Extension of Crimes against Palestine     |     
  • No place is safe in Gaza. No one is safe     |     
  • Stocks fail to recover despite slight gains in Dhaka, Ctg     |     
  • BB Purchases $353m in Dollar Auction to Stabilise Taka     |     
  • Promoting social inclusion of disabled persons thru empowerment     |     

১৭ বছর পরও সিডরের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলবাসী

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিপর্যয় 2024-11-15, 1:36pm

terterte-51d6f200be0424bb5139e5d5227ee0f11731656198.jpg




আজ ১৫ নভেম্বর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াল স্মৃতি বিজড়িত দিনটি। ২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল স্মরণকালের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় সিডর। সিডরে উপকূলীয় অঞ্চলকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। কেড়ে নিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও উপকূলবাসীকে মনে করিয়ে দেয়।

ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৭টা ৪০ মিনিট। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। সচেতন মানুষজন যেতে শুরু করলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বেশির ভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, কত ঝড়ই আইল গেল, এবারেও তাদের কিছু হবে না। কিন্তু প্রকৃতি ঠিক বিপরীত আচরণ করেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের পানি জম দূতের মতো এসে মানুষগুলোকে কেড়ে নিতে শুরু করল। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুরো এলাকা হয়ে গেল লণ্ডভণ্ড। চারিদিকে ধ্বংসলীলা। লাশের পর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। যারা বেঁচে ছিল তারা হয়ে রইলো কালের সাক্ষী। ওইদিন উপকূলের লাখ লাখ মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয় দক্ষিণাঞ্চলের ৩০ জেলার দুই শতাধিক উপজেলা। মানুষ অসহায়ের মতো শুধু চোখ দিয়ে দেখেছে। প্রতিরোধ করার মতো কিছুই ছিল না।

তৎকালীন বরগুনার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ পরিচালক (বর্তমানে পটুয়াখালী জেলায় কর্মরত) আসাদুজ্জামান খান জানান, সেদিন রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে কোনো কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে শুরু হয়ে গেল ঘূর্ণিঝড়। এর আগে কয়েকদিন ধরেই বিক্ষুব্ধ ছিল প্রকৃতি। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের খবর দিচ্ছিল আবহাওয়া বিভাগ। আগেরদিন বিকেলে দেয়া হয় ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত। প্রশাসনের উদ্যোগে আর প্রচারণায় সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় উপকূলের মানুষ। মোটামুটি ভালোভাবেই কাটে আগের রাতটি। ঝড় হয়নি দেখে পরদিন সকালে ঘরে ফেরে সবাই। তখনো বহাল ছিল সর্বোচ্চ বিপৎসংকেত। বিকেল থেকে বাড়তে শুরু করে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। বিকেল ৫টা নাগাদ হিরণ পয়েন্টে থাকা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ওয়্যারলেসের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠতে শুরু করে সিডর। সঙ্গে করে নিয়ে আসে ১২-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরিশাল অঞ্চলের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের উপকূল সুরক্ষায় ১২৩টি পোল্ডারের অধীনে পাউবোর পাঁচ হাজার ১০৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫৭ কিলোমিটার হচ্ছে সমুদ্র-তীরবর্তী বাঁধ। সমুদ্রের তীরবর্তী এ বাঁধের সিংহভাগই বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার আওতায়।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সিডরে উপকূলীয় অঞ্চলের দুই হাজার ৩৪১ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ছয় জেলার প্রায় ১৮০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ এবং এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিডরে বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢোকায় তাৎক্ষণিকভাবে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়া জমির পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭৮৭ হেক্টর।

মৃত্যু ঘটে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬০টি হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর। জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাওয়া এবং বিধ্বস্ত হওয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ৮ হাজার ৭৫ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ হাজার ৬৮৭টি ব্রিজ-কালভার্ট। তাৎক্ষণিকভাবে ৪ হাজার কোটি টাকার ফসলহানির হিসেব দেয় কৃষি বিভাগ।

অন্যান্য ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো এবারো হতাহত আর নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বৈপরীত্য দেখা দেয় সরকারি-বেসরকারি হিসেবে। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩৩৬৩। অপরদিকে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট।

স্থানীয় সাংবাদিক অ্যাড. সঞ্জিব দাস স্মৃতিচারণ করে জানান, বরগুনা সদরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকার নাম নলটোনা গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিনই সেখানে অর্ধ শতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। গ্রামটি পানির নিচে থাকায় লাশ দাফনের জন্যও কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে দাফনের কাপড় ছাড়াই ওই গ্রামের ৩৩ জনকে ১৯টি কবরে দাফন করা হয়। জায়গার অভাবে ৫টি কবরে ৩ জন করে ১৫ জন, ৪টি কবরে ২ জন করে ৮ জন ও ১০টি কবরে ১ জন করে ১০ জনের লাশ দাফন করা হয়।

সিডর চলে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় দেড় মাস। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল একমাস। দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থারাও যোগাযোগ না থাকার কারণে সঠিক সময় ত্রাণসহ সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেনি।

বরগুনার মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা অনেকেই ফিরে আসতে পারেনি। অনেকে চলে গেছে সাগরের অথৈ তলদেশে, ভাসতে ভাসতে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার কিংবা ভারতে। সিডরের সময়ে সাগরে ৩৭৫টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ হয় এবং ২৮০টি ট্রলার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় আছড়ে পড়ে। নিখোঁজ হওয়া পাথরঘাটার শতাধিক জেলে ভারতের উড়িষ্যা কারাগারে আটক হয়।

১৫ নভেম্বরে স্বজন হারা উপকূলের মানুষেরা মিলাদ মাহফিল, দোয়া মোনাজাত, কোরআনখানি ও নানাবিধ পারিবারিক আয়োজনে দিনটিকে স্মরণ করেন। আরটিভি