News update
  • Dr Kamal urges vigilance on his 88th birthday      |     
  • Dhaka’s air ‘moderate’ for the second day on Sunday     |     
  • Salinity ingress from sea shrinks farmlands in Narail, Bangladesh      |     
  • Metro rail services disrupted for power fault, passengers suffer     |     
  • UN Security Council condemns Jammu and Kashmir terror attack     |     

লিপ ইয়ার বা ২৯শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে ১০টি মজার তথ্য

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-02-28, 1:58pm

sgsgsgsg-10dba8dec0a33f721945ce1a4dbddca11709107117.jpg




লিপ ইয়ার, মানে যে বছরে থাকে একটা অতিরিক্ত দিন। চলতি ২০২৪ সালেও পড়েছে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ।

কিন্তু পুরোপুরি জ্যোর্তিবিজ্ঞানের কারণেই ২৯শে ফেব্রুয়ারি ‘লিপ ডে’ হলেও, এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ বেশ কমই দেখা যায়।

কীভাবে হয় লিপ ইয়ার, এর ইতিহাস কী, ফেব্রুয়ারিতেই কেন? এই একটি দিন ঘিরে আছে এমন নানা প্রশ্ন। সে সবের উত্তর খোঁজা যাক।

১. লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিনটা জরুরি আমাদের সৌরজগতের 'বিশৃঙ্খল' অবস্থার জন্যই।

কারণ এক বছরে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে একটা সম্পূর্ণ কক্ষপথ ঘুরে আসতে কিন্তু ঠিক পুরোপুরি ৩৬৫ দিন লাগে না। বরং সব মিলে সময়টা ৩৬৫.২৪২২ দিনের মতো।

ফলে প্রতি বছর আসলে এক দিনের চার ভাগের প্রায় এক ভাগ সময় যোগ হয়। যা প্রতি চার বছরে একটা বাড়তি দিন যোগ করে।

২. জুলিয়াস সিজার রোমের ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত ৩৫৫ দিনে বছর, এমন ক্যালেন্ডারই সবাই মেনে চলত – যেখানে প্রতি দুই বছর পরপর একটা অতিরিক্ত ২২ দিনের মাস যু্ক্ত হত।

কিন্তু এটা আসলে সমস্যার একটা জটিল সমাধান ছিল এবং উৎসবের দিনগুলো ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে যেতে শুরু করে। তাই সিজার তার জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোসিজেনেসকে বিষয়টি সহজ করার নির্দেশ দেন।

সোসিজেনেস তখন ৩৬৫ দিনে বছর করে যে অতিরিক্ত ছয় ঘন্টার মতো থেকে যায় সেটা মিলিয়ে নিতে চার বছর পরপর একটা অতিরিক্ত দিন ক্যালেন্ডারে যুক্ত করেন।

আর এভাবেই ২৯শে ফেব্রুয়ারির জন্ম। যা পরবর্তীতে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি সূক্ষ পরিমার্জন করেন।

৩. আঙুলের হিসেবে প্রতি চার বছর পরপর আসে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ। কিন্তু কথা এখানেই শেষ না।

যেই বছরটাকে ১০০ দিয়ে ভাগ করা যায় কিন্তু আবার ৪০০ দিয়ে করা যায় না, সেটা লিপ ইয়ার নয়। সে কারণেই গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী আমরা ২০০০ সালে লিপ ইয়ার পেয়েছি, ১৬০০ সালে লিপ ইয়ার ছিল, কিন্তু আবার ১৭০০, ১৮০০ ও ১৯০০ লিপ ইয়ার নয়।

“এটা খানিকটা স্বেচ্ছাচার মনে হতে পারে”, বলেন ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের এমিরিটাস অধ্যাপক ইয়ান স্টুয়ার্ট। তবে এর পেছনেও আসলে যুক্তিযুক্ত কারণ আছে।

“বছরে ৩৬৫ দিন ও একটা দিনের চার ভাগের এক ভাগ – কিন্তু সেটাও ঠিক পুরোপুরি নয়, বরং তার চেয়ে খানিকটা কম। সেটা একদম যথার্থ চার ভাগের এক ভাগ হলে প্রতি চার বছর পরপর লিপ ইয়ার হত।”

এই হিসাবটা আসে যখন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি ও তার সঙ্গী জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন এবং তাতে প্রতি চারশ বছরে তিনটা লিপ ডে বাদ পড়ে। এই হিসাবটা তখন থেকে আজ অবধি চালু আছে।

কিন্তু ইয়ান স্টুয়ার্ট মনে করেন মানুষকে হয়তো ১০ হাজার বছর পর এটা নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে হবে। কিন্তু তত দিনে অবশ্য মানবজাতি নতুন কোন পদ্ধতিও চালু করে ফেলতে পারে।

৪. ফেব্রুয়ারির ২৯ই কেন?

অন্য সব মাসেই আছে ৩০ বা ৩১ দিন করে, কিন্তু ইয়ান স্টুয়ার্ট জানাচ্ছেন রোমান সম্রাট সিজার অগাস্টাসের ব্যক্তিগত ইচ্ছের কাছে বলি হয়েছে ফেব্রুয়ারি।

জুলিয়াস সিজারের অধীনে কিন্তু ফেব্রুয়ারি ৩০ দিনের মাস ছিল। কিন্তু সিজার অগাস্টাস যখন সম্রাট হন, তখন তিনি তার নিজের নামাঙ্কিত মাস অগাস্ট ২৯ দিনের হওয়ায় খানিকটা বিরক্ত হন।

কারণ তার আগের সম্রাট জুলিয়াসের নামাঙ্কিত মাস – জুলাই – ছিল ৩১ দিনের।

“তিনি তখন অগাস্টে আরো দুই দিন যুক্ত করে জুলাইয়ের সমান করেন, আর বেচারা ফেব্রুয়ারিকে সেই দুই দিন হারাতে হয়”, বলেন অধ্যাপক স্টুয়ার্ট।

৫. ঐতিহ্যগতভাবে লিপ ইয়ারের দিন মেয়েরা ছেলেদের প্রস্তাব দেয় বলে বিভিন্ন ইতিহাসবিদের কথায় উঠে আসে। যার একটা ৫ম শতকে সেন্ট ব্রিজেটের ঘটনা, যেটা নিয়ে অবশ্য বেশ বিতর্ক আছে।

বলা হয়ে থাকে যে তিনি সেন্ট প্যাট্রিকের কাছে অভিযোগ নিয়ে যান যে মেয়েদের তাদের পছন্দের মানুষের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। সেন্ট প্যাট্রিক তখন সম্ভবত মেয়েদের প্রস্তাব দেয়ার জন্য ঐ লিপ ইয়ারের একটি দিন নির্দিষ্ট করে দেন – সবচেয়ে ছোট মাসের সব শেষ দিন।

আরেকটা জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে যে স্কটল্যান্ডের রানি মার্গারেট একটা আইন জারি করেন, যে সমস্ত পুরুষ লিপ ইয়ারে মেয়েদের দিক থেকে আসা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবে তাদের জরিমানা দিতে হবে।

কিন্তু অনেকে আবার বলে থাকেন সে সময় মার্গারেটের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর এবং তিনি তখন অনেক দূরে নরওয়েতে ছিলেন। এই রীতি আসলে ১৯ শতক থেকে বেশি প্রচলিত হয়।

মনে করা হয় যে মেয়েদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়ার এই রীতি চলে আসছে যখন ইংলিশ আইনে লিপ ইয়ার অর্ন্তভুক্ত হয়নি তখন থেকেই।

এই মতবাদ অনুসারে যেহেতু এই দিনের কোন আইনগত ভিত্তি নেই, তাই সাধারণত ছেলেদের প্রস্তাব দেয়ার প্রথাগত রীতি ভাঙাটা গ্রহণযোগ্য।

৬. লিপ ইয়ারে মেয়েদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি বিশ্ব জুড়ে একেক দেশে একেক রকম।

ডেনমার্কে যেমন এটা ২৯শে ফেব্রুয়ারি নয়, বরং ২৪শে ফেব্রুয়ারি - যা জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে চলে আসছে।

কোনও ড্যানিশ পুরুষ কোনx নারীর বিয়ের প্রস্তাব না মানলে তাকে তখন ঐ নারীকে ১২ জোড়া দস্তানা দিতে হয়। ফিনল্যান্ডে আবার দস্তানা নয়, বরং তাকে স্কার্ট বানানোর কাপড় দিতে হবে।

তবে গ্রিসে লিপ ইয়ারের দিন বিয়ে করা অশুভ মনে করা হয় তাই অনেকে সেটি এড়িয়ে চলে।

৭. ১৪৬১ জনে ১! লিপ ডে-তে জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে বলা হয় প্রতি ১৪৬১ জনে একজন এদিন জন্ম নেন। চার বছরে হয় ১৪৬০ দিন আর লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত এক দিন মিলে হয় ১৪৬১। এক্ষেত্রে তাই সম্ভাব্যতা দাঁড়ায় ১/১৪৬১।

তবে ইয়ান স্টুয়ার্ট বলছেন এই হিসাবটাও পুরোপুরি ঠিক নয়, কারণ চারশ বছরে তিনটা লিপ ইয়ার হারাচ্ছি আমরা।

এছাড়া নানা বিষয় মিলিয়ে বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে শিশুদের জন্ম বেশি হয় বলে মনে করেন তিনি। ২৯শে ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়াদের বলা হয় 'লিপার্স' বা 'লিপলিংস'।

৮. লিপ ইয়ারের রাজধানী বলে স্বীকৃত টেক্সাসের অ্যান্থনি শহর। ১৯৮৮ সালে এই শহরের বাসিন্দা ও লিপ ইয়ারে জন্ম নেওয়া ম্যারি অ্যান ব্রাউন চেম্বার অফ কমার্সের কাছে যান শহরে একটা লিপ ইয়ার উৎসবের আবেদন নিয়ে।

তার সেই আবেদন গ্রহণ করা হয় এবং অ্যান্থনিকে ঘোষণা দেয়া হয় বিশ্বের লিপ ইয়ার রাজধানী হিসেবে।

তার পর থেকে প্রতি বছর সারা বিশ্বের লিপাররা টেক্সাসের এই শহরে জড়ো হয়ে প্যারেডে অংশ নেন, একসাথে বার্থডে ডিনার, নাচানাচি এবং হট এয়ার বেলুনে চড়েন সবাই।

৯. গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছাড়া অন্যান্য ক্যালেন্ডারেও লিপ ইয়ারের দরকার পড়ে। আধুনিক ইরানের ক্যালেন্ডারটি যেমন সৌর ক্যালেন্ডার, যাতে প্রতি ৩৩ বছরে ৮টা লিপ ডে আছে।

ভারতের জাতীয় ক্যালেন্ডার এবং বাংলাদেশের যে বাংলা পঞ্জিকাবর্ষ তাতে লিপ ইয়ার এমনভাবে রাখা হয় যাতে লিপ ডে সব সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯শে ফেব্রুয়ারির খুব কাছাকাছি থাকে।

১০. অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার চূড়ান্ত অভিযানের সময় ১৫০৪ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারির চন্দ্র গ্রহণকে নিজের সুবিধার্থে কাজে লাগান।

তিনি যখন জ্যামাইকা দ্বীপে বেশ কয়েক মাস তার নাবিকদের নিয়ে আটকা পড়েন, তখন এক পর্যায়ে স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং তারা খাবার ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে সহায়তায় অস্বীকৃতি জানায়।

কলম্বাস জানতেন যে একটা চন্দ্রগ্রহণ আসন্ন, তার সহযোগীদের সাথে আলাপ করে তিনি স্থানীয় সব আদিবাসী নেতাদের একসাথে করেন ২৯শে ফেব্রুয়ারি। তিনি তাদের বলেন, ঈশ্বর চাঁদকে লাল বর্ণ করে তাদের শাস্তি দেবে। চন্দ্রগ্রহণের সময় বলেন যদি তারা আবার সহায়তা করতে শুরু করে তাহলে ঈশ্বর তার শাস্তি ফিরিয়ে নেবেন।

আরেকটা অতিপ্রাকৃত ঘটনা হল, ১৬৯২ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি ম্যাসচুসেটসের সালেম উইচক্র্যাফট ট্রায়ালের প্রথম ওয়ারেন্ট জারি হয়।

সব কথার শেষ কথা, লিপ ইয়ারে আপনি সৌভাগ্যবান যে বছরে একটা অতিরিক্ত দিন পাচ্ছেন।

আবার যারা চাকরিজীবী তারা ভাবতে পারেন যে বছরে একদিন কোনও বাড়তি বেতন ছাড়াই কাজ করতে হচ্ছে। বিবিসি বাংলা