News update
  • UNRWA Commissioner-Gen. on Gaza: 800 starving people killed     |     
  • 150,000 Rohingya flee to BD amid renewed Myanmar violence     |     
  • Scrap trader hacked, stoned dead: 2 Jubo Dal men expelled      |     
  • Bonn Climate Talks Expose Urgent Gaps in Global Action     |     
  • Earth's rotation speeding up, making days slightly shorter     |     

প্রাচীন পম্পেই নগরীতে পাওয়া গেছে বিস্ময়কর শিল্পকর্ম

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-04-13, 9:49am

jjroiopropq-7b954689920c864543f75e2ec3022a011712980171.jpg




উনআশি খ্রিষ্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে মাটির নিচে চলে যাওয়া প্রাচীন রোমান শহর পম্পেইতে নতুন করে খননকার্য করে বিস্ময়কর কিছু শিল্পকর্ম আবিষ্কার করা হয়েছে।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন প্রাচীন এই সাইটের ধ্বংসাবশেষ থেকে যে সকল নিদর্শন পাওয়া গেছে তার মধ্যে বেশ ভালো অবস্থায় আছে এসব 'ফ্রেসকো' (নগরীর ঘরবাড়ির দেয়ালে আকা প্রাচীন চিত্রকর্ম)।

একটি বড় ব্যাংকুয়েট হলের উঁচু কালো দেয়ালে আঁকা হয়েছে হেলেন অব ট্রয়ের মতো পৌরাণিক গ্রিক চরিত্র।

কক্ষটির ফ্লোর মোজাইক দিয়ে প্রায় শেষ করা অবস্থায় ছিল যেখানে দশ লাখের বেশি সাদা টাইলস বসানো হয়েছে।

অগ্ন্যুৎপাতের ধ্বংসস্তূপে হারানোর শহরটির এক তৃতীয়াংশ এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। তবে এবারকার খনন এক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড়। রোমান সাম্রাজ্যের মানুষ ও সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য বিশ্বের কাছে একটি জানালা হয়ে পম্পেইর অবস্থানকেই এটি তুলে ধরছে।

পার্ক ডিরেক্টর ড. গ্যাব্রিয়েল জুকট্রিয়েগেল শুধুমাত্র বিবিসির কাছেই ‘ব্ল্যাক রুম’ উপস্থাপন করেছেন।

সম্ভবত দেয়ালের গাঢ় রং বেছে নেয়া হয়েছিলো সূর্যাস্তের পর বিনোদনের সময় ব্যবহার করা ল্যাম্পগুলো থেকে উৎসারিত ধোঁয়া আড়াল করার জন্য।

“অল্প আলোয় চিত্রকর্মগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে,” বলছিলেন তিনি।

দুই সেটের একটি দেয়ালকর্ম বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। এর একটিতে দেবতা অ্যাপোলোকে দেখা যাচ্ছে পুরোহিত ক্যাসান্দ্রাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করতে। কিন্তু কিংবদন্তি মতে, ক্যাসান্দ্রার ভবিষ্যদ্বাণী উপেক্ষা করার কারণে তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন ।

আর দ্বিতীয় চিত্রকর্মে উঠে এসেছে বেদনাদায়ক পরিণতি, যেখানে প্রিন্স প্যারিস সুন্দরী হেলেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন— ক্যাসান্দ্রা জানেন এর ফলে ট্রোজান যুদ্ধ হবে এবং তা সবাইকে শেষ করে দিবে।

ব্ল্যাক রুম হলো খননকার্য থেকে পাওয়া সর্বশেষ সম্পদ। বার মাস আগে এই খনন শুরু হয়েছিলো। যার উপর ভিত্তি করে এপ্রিলে বিবিসি ও লায়ন টিভি এ নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি সিরিজ তুলে ধরবে।

‘রিজিয়ন ৯’ নামে পরিচিত একটি প্রশস্ত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্লক পরিষ্কার করা হচ্ছে, যেটি দুই হাজার বছর আগে ভিসুভিয়াসের পাথর আর ছাইয়ের কয়েক মিটার নিচে চাপা পড়েছিলো।

এ কাজে নিয়োজিত কর্মীরা নতুন পাওয়া জিনিসগুলো সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সেগুলো একটি স্টোররুমে রাখা হচ্ছে।

দেয়ালকর্মগুলোকে সুনির্দিষ্ট স্থানে আটকে রাখতে পেছনের দিকে প্লাস্টার গ্লু দিয়ে আটকে দেয়া হবে, যাতে করে এগুলো দেয়াল থেকে ছিটকে না পড়ে। উঁচু মাচান করে কাজ চলছে, উপরের দিকে অস্থায়ী ছাদ দেয়া হচ্ছে।

প্রধান সংরক্ষক ড. রবার্তা প্রিসকো মঙ্গলবার একটি তোরণ খুলে যাওয়া ঠেকাতে কাজ করেছেন। “ অনেক কাজ; আমার দিকে তাকান,” বলছিলেন তিনি, যেন কাজের চাপ তার চোখেমুখেই দৃশ্যমান।

“আমাদের কাজের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আবেগ আছে। কারণ আমরা যা উদঘাটন ও সংরক্ষণ করছি তা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আনন্দ দেবে”।

রিজিয়ন ৯ প্রত্নতত্ত্ববিদদের জন্য একটি গোয়েন্দা কাহিনী তুলে ধরেছে।

উনিশ শতকের শেষ দিকের খনন কাজের সময় এক কর্নারে একটি লন্ড্রি আবিষ্কার করা হয়েছিলো। এবারের সর্বশেষ এই খননে এর কাছেই একটি হোলসেল বেকারি এবং ব্ল্যাক রুমসহ বড় থাকার ঘর পাওয়া গেছে।

যারা কাজ করছে তারা আত্মবিশ্বাসী যে গভীরতা নির্ণয় করে এবং নির্দিষ্ট কোনো প্যাসেজওয়ের মাধ্যমে তিনটি এলাকার সংযোগ ঘটানো সম্ভব

ওই পার্কের আরেকজন প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. সোফি হে দেয়ালে খোদাই করা ‘এআরভি’ আদ্যক্ষরে ইঙ্গিত তুলে ধরেন। অক্ষরগুলো দেয়াল ও বেকারির একাংশে পাথরের ওপর দেখা যায়।

“আমরা জানি এআরভি কে: তিনি হলেন আউলাস রাসটিয়াস ভেরাস (Aulus Rustius Verus),” সোফি ব্যাখ্যা করছিলেন।

“পম্পেইর অন্য একটি রাজনৈতিক প্রচারণা থেকে তার সম্পর্কে আমরা জানি। তিনি রাজনীতিক ও অনেক ধনী। আমাদের মনে হয় তিনি বেকারি ও লন্ড্রির পেছনের অভিজাত বাড়ির মালিক”।

এটা পরিষ্কার, যদিও অগ্নুৎপাতের সময়ে সেখানকার সব সম্পত্তির সংস্কার কাজ চলছিলো।

শ্রমিকরা টাইলসগুলো সুন্দরভাবে স্তূপ করে রেখেছিলো। তাদের চুনের পাত্র এখনো ভরা ও ব্যবহারের অপেক্ষায়। তাদের কোদাল ও নিড়ানি রয়ে গেছে, যদিও কাঠের হাতলগুলো আগেই নষ্ট হয়ে গেছে।

ড. লিয়া ত্রাপানি খনন থেকে তুলে সেগুলোর তালিকা করছেন। তিনি হাজার হাজার শিল্পকর্মের বাক্সের মধ্যে থেকে একটি পেয়েছেন যা দেয়ালের প্লাম্ব লাইনের সূত্র পেতে সহায়তা করে।

“এখনকার বিল্ডার্স বা নির্মাতাদের মতো রোমান শ্রমিকরা ভার্টিকাল সারফেস এলাইনের জন্য এটার ব্যবহার করতো”।

ড. আলেস্যান্দ্রো রুশো এই খননকাজের আরেকজন প্রত্নতত্ত্ববিদ। তিনি একটি রুম থেকে পাওয়া ঝুলন্ত একটি ফ্রেসকো দেখাতে চান। অগ্ন্যুৎপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটির কয়েক খণ্ড পড়েছিলো একটি বড় টেবিলের ওপর।

তিনি জলের মিশ্রণে প্লাস্টার স্প্রে করায় এর রং প্রাণবন্ত হয়ে উঠছিলো।

এখানে মিশরীয় অক্ষরসহ ল্যান্ডস্কেপ, খাবার, ফুল ও নাটকীয় কিছু মুখোশ দেখতে পেতে পারেন।

“এটা এবারের খনন থেকে পাওয়া আমার প্রিয় আবিষ্কার। কারণ এটা বিরল ও জটিল। এটা একজন উঁচু মর্যাদার ব্যক্তির জন্য সর্বোত্তম মানের,” তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন।

তবে বিশাল এই সম্পদের ছাদের চিত্রকর্মে যেমন বেকারি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করবে তেমনি বেরিয়ে আসবে রোমান জীবনের নৃশংস দিকটাও- দাসত্ব।

এটা নিশ্চিত যে যারা কাজ করতো তাদের আটকে রাখা হতো বিপর্যস্ত একটি পরিবেশে। তারা মিলের বড় পাথরখণ্ড ঘুরাতো গাধার সাথে মিলে। মনে হচ্ছে সেখানে একটি জানালা ছিল। কিন্তু যাতে কেউ পালাতে না পারে সেজন্য লোহার খণ্ড দিয়ে রাখা হয়েছিলো।

এই বেকারিতে খনন করার সময় একটি কঙ্কালও পাওয়া গেছে।

পাথরের নিচে চাপা পড়েছিলো দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আর একটি শিশু। মনে করা হচ্ছে তারা দাস ছিল এবং অগ্নুৎপাতের সময় সেখানে আটকা পড়েছিলো। যদিও এটা অনুমান।

“খননের সময় আমরা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিলাম,” বলছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. জেন্নারো লভিনো।

“নাটকের মঞ্চের চেয়েও অনেক বেশি কিছু। দৃশ্য আছে। ব্যাক ড্রপ আছে। আর ভিলেন হলো মাউন্ট ভিসুভিয়াস। প্রত্নতত্ত্ববিদদের এখন শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে এবং হারিয়ে যাওয়া শিল্পী, পরিবার ও শিশু এবং আরও লোকদের গল্প বলতে হবে যারা সেখানে ছিল না”। বিবিসি বাংলা