News update
  • BNP Opposes Reforms to Constitution’s Core Principles      |     
  • Time to Repair Bangladesh–Pakistan Ties     |     
  • Dhaka’s air quality recorded ‘unhealthy’ Friday morning     |     
  • Dr Yunus proved impact of innovative economics: Peking Varsity Prof     |     
  • Alongside conflict, an info war is still happening in Gaza     |     

পুরুষদের আত্মহত্যার জন্য নারীদের দায়ী করলেন দক্ষিণ কোরীয় রাজনীতিক

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-07-10, 1:01pm

rtyyerye-5ea94f604a5217508716d860a9fe35631720594903.jpg




সমাজে নারীদের 'কর্তৃত্বপূর্ণ' ভূমিকার সাথে পুরুষদের আত্মহত্যার যোগসূত্র টেনে ‘বিপজ্জনক এবং অপ্রমাণিত’ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার একজন রাজনীতিক।

সউল সিটি কাউন্সিলর কিম কি-ডাক বলেছেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় পুরুষদের জন্য চাকরি এবং বিয়ের জন্য মেয়ে পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

তিনি বলেছেন দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে ‘নারী-প্রধান দেশে পরিবর্তন হওয়া শুরু করেছে’ এবং এটাই তার মতে সম্ভবত ‘পুরুষদের আত্মহত্যার চেষ্টা বেড়ে যাওয়ার আংশিক কারণ’ হতে পারে।

বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াতেই আত্মহত্যার হার বেশি। কিন্তু লিঙ্গ সমতার দিকে থেকেও দেশটির রেকর্ড খুব বাজে।

কাউন্সিলর কিমের মন্তব্যের খুব সমালোচনা হচ্ছে এবং এটি হলো পুরুষ রাজনীতিকদের এ ধরনের ধারাবাহিক মন্তব্যগুলোর তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনীতিক কিম সউলের হান নদীর সেতু এলাকায় আত্মহত্যার চেষ্টা সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পর্যালোচনার সময় এ ধরনের মন্তব্য করেন।

ওই রিপোর্টটি সিটি কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে নদীতে আত্মহত্যার চেষ্টার সংখ্যা ২০১৮ সালের ৪৩০ জন থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ২০৩৫ জন হয়েছে। আর এই চেষ্টাকারীদের মধ্যে পুরুষের হার ৬৭% থেকে বেড়ে ৭৭% হয়েছে।

মি. কিমের এই রিপোর্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা।

“যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের দাবি করা খুবই বিপজ্জনক ও বোকামি,” বলছিলেন সউল ইওনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ের প্রফেসর সং হান বিবিসিকে বলছিলেন।

তিনি বলেন বৈশ্বিকভাবেই নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি। যুক্তরাজ্যসহ অনেকে দেশে পঞ্চাশ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর বড় কারণগুলোর একটি আত্মহত্যা।

প্রফেসর সং বলছেন পুরুষদের আত্মহত্যার চেষ্টার কারণগুলোকে নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করা উচিত।

“এটা দুঃখজনক যে কাউন্সিলর এটিকে লিঙ্গ সংঘাত হিসেবে তুলে ধরেছেন,” বলছিলেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ায় পূর্ণ সময়ের কাজের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় যথেষ্ট সংখ্যায় পার্থক্য আছে। নারীরা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অস্থায়ী বা পার্ট টাইম কাজ করছে। বেতনের ক্ষেত্রেও পার্থক্য কমে আসছে। তবে এরপরেও নারীর গড়ে ২৯ শতাংশ কম টাকা পেয়ে থাকেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নারীবাদ বিরোধী আন্দোলন কিছুটা গতি পেয়েছে। কিছু হতাশ নারী বলছেন নারীদের জীবন মান উন্নয়ন করার চেষ্টায় বরং কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

কাউন্সিলর কিমের রিপোর্টে উপসংহার টানা হয়েছে এভাবে যে ‘নারী প্রধান প্রবণতা’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লিঙ্গ সমতা নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে যাতে করে ‘নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান সুযোগ পেতে পারে’।

কাউন্সিলের রিপোর্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ এ তীব্র সমালোচনা করছেন কোরিয়ার মানুষ। তারা একে ‘অপ্রমাণিত’ ও ‘বৈষম্যমূলক’ বলে আখ্যায়িত করছেন। একজন মন্তব্য করেছেন যে তারা সমান্তরাল বিশ্বে বাস করেন কি না।

দ্যা জাস্টিস পার্টি লিঙ্গ বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে কোরিয়ান সমাজের যে ‘নারীরা লড়াই করছে তাদের ওপর সহজে দোষ চাপানোর সহজ চেষ্টা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

তারা কাউন্সিলরকে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে বরং কীভাবে সমস্যা থেকে উত্তরণ করা যায় সেদিকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছে।

কাউন্সিলর কিম বিবিসিকে বলেছেন নারী-নিয়ন্ত্রিত সমাজের সমালোচনার উদ্দেশ্য তার ছিল না এবং তিনি পরিণতির কথা চিন্তা করে তিনি তার ব্যক্তিগত অভিমত খুব একটা দেননি।

তারপরেও তার মন্তব্যকে দেখা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলো নিয়ে অবৈজ্ঞানিক ও কখনো উদ্ভট প্রস্তাবনার ধারাবাহিকতায় আসা মন্তব্য হিসেবে। এই ইস্যুগুলোর মধ্যে আছে মানসিক স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সহিংসতা এবং বিশ্বের সবচেয়ে কম জন্ম হার।

গত মাসে সউলের আরেকজন কাউন্সিলর কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে ধারাবাহিক কিছু রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, যেখানে নারীদের জন্ম হার বাড়াতে জিমনাস্টিক ও পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।

একই সময়ে সরকারের একটি থিংক ট্যাঙ্ক ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের স্কুল আগে শুরুর পরামর্শ দিয়েছে যাতে সহপাঠীরা পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় হয় ও এর মধ্যে তারা বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।

“এ ধরনের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজ কতটা উদ্ভট,” বলছিলেন ইয়ুরি কিম। তিনি কোরিয়ান ইউমেন ট্রেড ইউনিয়নের ডিরেক্টর।

তার অভিযোগ রাজনীতিক ও নীতি নির্ধারকরা নারীরা কী ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছে সেটি বুঝতে চান না। এর চেয়ে নারীদের বলির পাঠা বানাতেই পছন্দ করেন তারা।

“কর্মক্ষেত্রে আসার জন্য নারীদের দোষারোপ করা সমাজের অসমতাকেই কেবল দীর্ঘায়িত করবে,” বিবিসিকে তিনি বলছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে কুড়ি শতাংশ এখন নারী আর স্থানীয় কাউন্সিলরদের ২৯ শতাংশ নারী। সউল সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রাজনীতিকরা যা পাবলিশ করে সেগুলো যাচাইয়ের কোনো প্রক্রিয়া নেই।

তাদের মতে কনটেন্টগুলো যাদের এর দায়ও নিতান্তই তাদের এবং তারা পরবর্তী নির্বাচনে পরিণাম ভোগ করবেন। বিবিসি বাংলা