News update
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     
  • CPJ denounces Trump administration's action against AP     |     

ফুল কোর্ট সভা কী?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-08-11, 6:52am

img_20240811_065317-c8d2b41ac2718b7c5c44ed45df8dc5d31723337878.png




বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আল্টিমেটামের মুখে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

শনিবার সকালে ফুলকোর্ট সভা ডেকেছিলেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রবল প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে সেই সভা বাতিল করা হয়।

এর আগে প্রধান বিচারপতিকে "ফ্যাসিবাদের দোসর" আখ্যায়িত করে পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ যিনি বর্তমানে সরকারের একজন উপদেষ্টাও।

সকালে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ঢল নামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে হাইকোর্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে।

এই প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কথা বলে পদত্যাগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ও অন্যান্য নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"

সুপ্রিম কোর্টকে বাংলাদেশের সংবিধানের রক্ষক এবং ব্যাখ্যাকারী বলা হয়। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর এই সুপ্রিম কোর্ট।

আর, প্রধান বিচারপতিই বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দেশের সর্বোচ্চ এ আদালতে দুইটি বিভাগে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এ দুটি বিভাগ হলো আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ।

এই দুই বিভাগের সকল বিচারপতির অংশগ্রহণে যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তাকেই 'ফুল কোর্ট' সভা বলা বলা হয়।

বিচার বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এই সভা আহ্বানের এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির।

এতদিন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগে মোট ৯০ জন বিচারপতি ছিলেন।

এর মধ্যে আপিল বিভাগে সাতজন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৩ জন বিচারকার্য পরিচালনা করতেন।

'ফুল কোর্ট' বৈঠকে বিচার বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করেন প্রধান বিচারপতি।

অনেক সময় জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও এ সভা আহবান করা হয়ে থাকে।

তবে, শনিবার ডাকা ফুল কোর্ট সভার ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, তাদের কাছে তথ্য ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারকে "সাংবিধানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা" করতেই ফুল কোর্ট সভা আহ্বান করা হয়েছিল।

আপিল বিভাগের কার্যক্রম

আপিল বিভাগ বিচার পাওয়ার সবশেষ ধাপ।

এখানে যেসব মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেগুলো হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নিষ্পত্তি হয়ে আসে।

সেসব মামলার আপিল আবেদন শুনানি হয় আপিল বিভাগে। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেয়া চূড়ান্ত বিচারিক রায় পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগ।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাতজন বিচারপতি রয়েছেন।

আপিল বিভাগে পর্যাপ্ত বিচারক থাকা সাপেক্ষে দুইটি বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ, আরেকটি আপিল বিভাগের সর্বজ্যেস্ঠ বিচারপতি পরিচালনা করার রেওয়াজ ও প্রথা রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের প্রধান বেঞ্চের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।

বাংলাদেশে বেশিরভাগ সময়ই প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার সমর্থক কিনা এ বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।

যদিও বরাবরই সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দাবি জানান। কিন্তু সরকার সমর্থক বিবেচনা করে নিয়োগ দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে।

বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযোগের পর পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হন।

এরপর আবার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর স্থায়ী হলে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরে আবার হাইকোর্ট বিভাগে বিচার কাজ পরিচালনা করেন। এরপর গতবছর তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তবে, এ নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয় নি।

প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেন।

সংবিধান অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক ৬৭ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

সবশেষ গত ২৫ শে এপ্রিল আপিল বিভাগে তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।

সে সময় আটজন বিচারপতি হলেও একজন রিটায়ার করায় সাতজন বিচারপতি পরের দিনগুলোতে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম

হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত আছেন ৮১ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং দুইজন অস্থায়ী বিচারপতি।

সবশেষ ২০২২ সালের ৩১ শে জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে ১১ জনকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

পরে এ বছরের ৩০ শে জুলাই নয়জনকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী করা হয়। ওইদিন বিকেলে তাদের শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি।

এদিনই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে সকাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে আর গুলি না চালায় এমন নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি চলছিল।

উল্লেখ্য, এই বেঞ্চের একজন বিচারকসহ এগারজনের মধ্যে দুইজনকে স্থায়ী না করে আরো ছয়মাসের জন্য হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চ গঠন করার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির।

এ বিভাগের একক ও দ্বৈত বেঞ্চ ফৌজদারি, দেওয়ানী, কোম্পানি এবং বিভিন্ন ধরনের আবেদনের শুনানি করে থাকে।

হাইকোর্ট বিভাগের বিভিন্ন বেঞ্চ নিম্ন বা বিচারিক আদালত থেকে আসা আপিল মামলার শুনানি করে থাকে।

এর মধ্যে বিশেষ জজ আদালত, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ হাইকোর্ট বিভাগ পুরো বিচারিক আদালতের দেয়া বিচার পর্যালোচনা করে রায় দিয়ে থাকে।

অনেক সময় বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচারের ব্যতয় ঘটলে হাইকোর্ট ওই সংশ্লিষ্ট বিচারককে তলব করার বহু নজির রয়েছে। বিচারিক আদালতের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে হাইকোর্ট বিভাগ। বিবিসি বাংলা।