News update
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     
  • One killed over loud music row at wedding party in Natore     |     
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     

এই ঘটনার ভিডিও যারা দেখেছেন, তারা এখন সেখানে যেতেও ভয় পাবেনঃ কক্সবাজারের ঘটনায় ভুক্তভোগী

ভয়েস অফ আমেরিকা বিবিধ 2024-09-16, 6:21pm

reyeryery-787cf13b1c3d0b87bbfe918758d85af91726490121.jpg




কক্সবাজারের মত পর্যটন এলাকায় নারীদের হেনস্থা-মারধর এবং তার ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ঘটনায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন এক ভুক্তভোগী নারী।

ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, “এই ঘটনার ভিডিও যারা দেখেছেন, তারা এখন সেখানে যেতেও ভয় পাবেন। বিদেশী পর্যটকরা তো বাংলাদেশে আসতেও ভয় পাবে।”

কক্সবাজারের সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতে নারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করিয়ে উল্লাস করা ফারুকুল ইসলাম নামে এক যুবককে শুক্রবার (১৩সেপ্টেম্বর) রাতে আটক করেছে পুলিশ।

ফারুকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক নারীকে কান ধরে ওসবস করা ও মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এক নারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করাচ্ছে একদল অতিউৎসাহী জনতা।

তাদের তোপের মুখে পড়া ওই ভুক্তভোগী নারী কানে হাত দিয়ে ওঠবস করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। কিন্তু, সেখানে উপস্থিত যুবক ফারুকুল ইসলাম লাঠি দিয়ে ওই নারীকে একাধিকবার আঘাত করেন। সেই লাঠির আঘাত থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী নারী কান ধরে ওঠবস করছেন। এতে এই যুবক উল্লাস প্রকাশ করে।

শুধু তাই নয়, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন ওই নারীর কান ধরে ওঠবস করা গণনাও করছিলেন।

ফারুকুলের হেনস্থা ও মারধরের শিকার ভুক্তভোগী নারীদের একজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ওইদিন রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমি এবং আমার এক বান্ধবী তার আগের দিন (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাই। সেখানে আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ ও আত্মীয়-স্বজন থাকেন। যখনি ছুটি পায় তাদের কাছে বেড়াতে যাই।"

ঘটনার রাতে বান্ধবীকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন,“ওই ব্যক্তি (ফারুকুল ইসলাম) প্রথমে আমাদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। ফোন কেন নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তখন সে আমাকে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মারধর করে (যেটা আপনারা ভিডিওতে দেখেছেন)। এরপর সেখান থেকে আমাদের চলে যেতে বলে।”

এই ভুক্তভোগী নারী বলেন, “তখন আমি বলি যে, আমাদের মোবাইল দিয়ে দিলে চলে যাবো। কিন্তু তখন ওই ব্যক্তি আমাকে অপবাদ দেয় যে, তুমি ছাত্রলীগ কর্মী, …., এতোদিন তাদের সঙ্গে ছিল, এখন এখানে চলে এসেছে। এছাড়া নানা অপবাদ দিতে থাকে।...এক পর্যায়ে ফারুকুল সেখানে উপস্থিত মানুষদের বলে, আমি যৌন কর্মী।”

তিনি আরও বলেন, “ওই রাতে শুধু আমাদেরকে নয়, সুমদ্রসৈকত এলাকায় যেসব নারী একা ছিল- এমন আর কয়েক জনকে ফারুকুল হেনস্থা ও মারধর করে।”

তিনি আরও বলেন, “মোবাইল না দেওয়ায় আমি তাদের পেছনে এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে ঘুরতে থাকি। পরবর্তীতে আমি সমুদ্রসৈকত এলাকার পুলিশ বক্সে যাই। তাদেরকে বলি আমাদের ফোন দিয়ে দিলে রাতেই কক্সবাজার ছেড়ে ঢাকায় চলে যাবো। তখন পুলিশ অনুরোধ করলে ফারুকুল আমাদের ফোন দেয়। রাতেই আমরা ঢাকায় চলে আসি।”

“ঢাকায় আসার পর দেখতে পাই, ফারুকুল তার ফেসবুকে আমাদেরকে মারধর ও কান ধরে উঠবস করানোর ভিডিও প্রকাশ করে” বলে উল্লেখ করেন তিনি।

"সেই ভিডিওটি প্রচুর মানুষ দেখেছে এবং কমেন্টও করেছে। সেটা দেখে রাতে আমি ফারুকুলকে ফেসবুকের মেসেঞ্জার কল করে অনুরোধ করি, ভিডিওটি সরিয়ে নিতে। সে কিছু সময়ের জন্য সেটি প্রাইভেট করে। পরে ভিডিওটি পাবলিক করে দেয়। তখন তাকে কান্নাকাটি করে অনুরোধ করি। কিন্তু সেই ভিডিওটি সরিয়ে নেয় নি।"

“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় নিজের এবং পরিবারের সম্মানহানিও ঘটেছে"- বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফারুকুল ইসলামের গ্রেফতার

কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবির ওসি জাবেদ মাহমুদ ফারুকুল ইসলামের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এক বার্তায় বলেছেন, "কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কয়েকজন যুবক কর্তৃক নারীকে প্রকাশ্যে হেনস্থা, অবমাননা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়। ভিডিও দেখে ঘটনায় অভিযুক্ত মোঃ ফারুকুল ইসলামকে সনাক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হয়।"

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে নারীদের হেনস্থা ও মারধরের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন নারী সাংবাদিক ইশরাত জাহান ঊর্মি। এই ঘটনা জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অন্তবর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

পোস্টে তিনি লেখেন, "সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আপার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কাল কক্সবাজারের ঘটনা পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যে তার সাথে কথা হয়। ইনফ্যাক্ট কলটাও তিনিই করেছিলেন। আমাকে বললেন, ঘটনা নিশ্চিত করতে, ফেসবুকে সব রাগ না ঢেলে কাজের কাজটুকু করার কথাও বললেন তিনি।

ঘটনা নিশ্চিত হবার কিছুক্ষণের মধ্যে জানালেন, বিষয়টি হোম সেক্রেটারি লুক আফটার করছেন। এবং তারপর তো রাতেই ওই ফারোকুল নামে দ্বীনি ভাইকে আটক করা হয়।"

এই সাংবাদিক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “পর্যটন এলাকায় এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে, তাই এটি খারাপ বিষয়টি এমন নয়। এই ধরণের ঘটনা বাংলাদেশ কিংবা বিশ্বের কোথাও ঘটা উচিত নয়।

এখানে প্রতিক্রিশীল একটি গোষ্ঠী একটা ভীতি তৈরি কিংবা বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যে, মেয়েদের কিভাবে চলা উচিত কিংবা উচিত না, সেটা অন্যরা ঠিক করে দিচ্ছে।”

ইশরাত জাহান ঊর্মি আরও বলেন, “শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলে একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পুলিশের কাছে গিয়ে শ্লীলতাহানির মামলা করা যেতো। এটা হচ্ছে মূলত ভীতি তৈরি করা, ভিন্ন বার্তা দেওয়া।”

ভুক্তভোগী জানান, সমুদ্রসৈকত এলাকায় নারীদের হেনস্থা করার ভিডিও নিয়ে দেশের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাকে আটক করার পর ভুক্তভোগী নারীদের ফোন করে কক্সবাজার ডাকেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তাকে আটকের পর পুলিশ আমাদেরকে ফোন করে। আমরা সেখানে গিয়ে দেখি অন্য নারীরাও এসেছেন। পরে তার নামে মামলা করি।”

এধরণের অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, "এরকম অন্যায়কারী কয়েকজনকে শাস্তি দিলে, অন্যরা দেখে ভয় পাবে। তাহলে আর কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে না।“

কে এই ফারুকুল ইসলাম

আটক যুবকের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায় বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।

সামাজিক মাধ্যমে ফারুকুল ইসলামকে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আমরা কোনো কমিটি দেইনি। তবে, ৫ আগস্টের পরে বিভিন্ন জায়গায় কিছু সমন্বয়ক কমিটি দেওয়ার তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। সেইগুলা নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা বলেছি-তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।"

তিনি আরও বলেন, "কক্সবাজার নারী নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত ফারুকুল ইসলামের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সেই আমাদের সমন্বয়কও নয়। তারপর যদি সেই সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দেয়, তাহলে বলবো এটা ভুয়া।"

অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজয়ানা হাসান বলেন, “যে ব্যক্তি এই কাজ করেছে, প্রথমে সমন্বয়ক পরিচয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং মামলা হয়েছে। শুধু তাই নয় পরে অভিযুক্ত ব্যক্তি আরেক সমন্বয়কের বন্ধু পরিচয়ে দিয়েছে, সেই বন্ধুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

“সবকিছুর সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনকে জড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে” বলে দাবি করেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “এক হচ্ছে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।...সুতরাং কারও মতবাদ ও বিশ্বাসের উপর কেউ হেনস্থা বা আঘাত করবে, সেটার বিষয়ে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থা নিয়েছে। আগামীতেও তাই হবে।”

ফারুকুল ইসলাম তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছাত্র শিবিরের কর্মকাণ্ডের কিছু ছবি পোস্ট করার কারণে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেক আব্দুল্লাহ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "ফারুকুল ইসলামের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সে আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কিংবা স্থানীয় কোনো পর্যায়ের নেতা নয়।"

অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের পক্ষে এই বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়। তার উল্লেখ করে সাদেক আব্দুল্লাহ বলেন, "ফারুকুল ইসলাম বা তার এই ধরনের আচরণের সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। ছাত্রশিবির সব সময় নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। নারীদের অসম্মান, অশ্রদ্ধা বা যেকোনো ধরনের অপমানজনক আচরণের তীব্র বিরোধিতা করে থাকে।"

তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

কক্সবাজারের নারীদের হেনস্থার বিষয়টি 'স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই' বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, “কক্সবাজারের বিষয়টাকে (নারীদের হেনস্থা) ভালোভাবে কিংবা স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। যা ঘটেছে তা শুধু বেআইনি নয়, তা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিশ্বাসের উপর কারও হস্তক্ষেপ করার সুযোগ বাংলাদেশে নেই।”