News update
  • Fire at UN climate talks in Brazil leaves 13 with smoke inhalation     |     
  • 5mmcfd gas to be added to national grid from Kailashtila gas field     |     
  • ArmArmed Forces Day: Tarique's message draws on historic closeness     |     
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-12-16, 7:28am

image-166719-1734274856-3fcc1e60619eb12f42840be2d8051c131734312502.jpg




অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহ-অধিনায়ক মেজর জিয়ার সহধর্মিনী আজকের বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও তৎকালীন গৃহবধূ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরও অনেকেই।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ-পরবর্তী তৎকালীন পূর্বপকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থতা এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মসনদ অটুট রাখার কৌশলগত কারণে সামরিক বাহিনীর পাকিস্তানি অফিসারদের কার্যকলাপে, বিশেষ করে ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এক ধরনের অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছিল। তবে, পরের দিন ২৪ মার্চ ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বৈঠক না করে পুর্বপাকিস্তান ছাড়লেও চট্টগ্রামের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে একই দিনে ঘটেছিল অনন্য এক ঘটনা। 

ঘটনার মূলে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ওইদিন সহ-অধিনায়ক মেজর জিয়ার অনুপস্থিতিতে তিনি (বেগম জিয়া) তাৎকক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সেন্ট্রাল অর্ডিনেন্স ডিপো (কোড) বা ‘কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগার’ থেকে ১৭ বেলুচ সৈন্যদের অস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করে পক্ষান্তরে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে অস্ত্রহীন হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন। সেদিনের ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় অবশ্যই প্রমাণিত হয় তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুক্তিযুদ্ধে শুরুতে খালেদার জিয়ার সেদিনের ওই অনন্য অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি আজও।

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা হবেন না, তো কে মুক্তিযোদ্ধা হবেন? যারা পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, আর ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা হবে? বেগম জিয়া অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা, তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। তাঁর যোগ্যতায় তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার ১৪ ডিসেম্বর-’২৪ বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে (লেভেল-১২) জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপকালে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বলার কারণে আওয়ামী লীগের অনেকে হাসাহাসি করেছেন। বাস্তবে, যেদিন শহীদ জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সেদিন বেগম জিয়া সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে তারেক জিয়া ও কোকোকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন। পাক বাহিনী ভেতরে ঢুকে পড়ায় সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার কাছে অনুমতি নিতে গিয়েছিল কী করবে- সেটি জানার জন্য। সেদিন তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) সেনাবাহিনীর উদ্দেশে বলেছিলেন, তোমরা অধিনায়কের অনুমতি ছাড়া কেউ আত্মসমর্পণ করবে না। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনি সেদিন সেনাবাহিনীকে না বলার মধ্য দিয়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে পাকবাহিনীর কাছে ধরা পড়েন। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দী ছিলেন বেগম জিয়া। বন্দিদশায় তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) মক্তিযুদ্ধকালীন পুরোটা সময় মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছেন।’

অপরদিকে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র খণ্ড-৯ এর উদ্ধৃতি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) সৈয়দ আবু ব্কর সিদ্দিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বিশেষ প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপকালে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সেন্ট্রাল অর্ডিনেন্স ডিপোর (কোড) কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারের পাহারায় ছিলেন হাবিলদার কাদের ও তৎকালীন সিপাহী পরবর্তীতে হাবিলদার নুরুল হক। এ সময় ১৭ বেলুচ-এর একটি দল আসে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ষোলশহরস্থ ‘কোডে’। তারা চট্টগ্রাম সেনানিবাসসহ তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের অন্যান্য সেনানিবাসের বাঙালি ইউনিটের অস্ত্র ‘আর আর ৭৭ ও ৭৬ (রাইফেলের রেঞ্জ ৭৭ ও ৭৬ মিটার) পশ্চিমা ইউনিটে জমা করার আদেশ পালনের জন্য এসেছেন বলে উল্লেখ করেন।”

মেজর (অব.) সৈয়দ সিদ্দিক বলেন, ‘লে. কর্নেল আবদুর রশিদ জানজুয়ার নির্দেশে কায়দা করে ১৭ বেলুচ থেকে সৈনিকরা আসে এই অস্ত্রাগারের অস্ত্র নিয়ে যেতে আসলে হাবিলদার কাদেরদের নির্দেশে নুরুল হক আদেশ আনার জন্য ছুটে যান ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জিয়ার বাসায়। কিন্তু সেখানে জিয়া ছিলেন না। বেগম খালেদা জিয়া জানতে চান - কি হয়েছে? ঘটনা শোনার পর তিনি (বেগম জিয়া) স্পষ্ট ভাষায় জানান ‘মেজর জিয়ার হুকুম ছাড়া একটা সুইও ষোলশহর থেকে বাইরে যাবে না।’ নূরুল হক ‘কোডে’ ফিরে কাদেরকে ম্যাডামের নির্দেশের কথা জানালে তিনি (কাদের) সতর্ক হয়ে যান। ততক্ষণে বেলুচের সৈন্যরা ‘৭৬ ও ৭৭ আর আর রাইফেল’ তাদের গাড়িতে তুলে ফেলেছে দেখে হাবিলদার কাদের বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে বেলুচ সৈন্যদের গাড়িতে গুলি করার উদ্যোগ নেয়। বেগতিক পরিস্থিতিতে বেলুচের সৈন্যরা সব অস্ত্র রেখে যেতে বাধ্য হয়।’ 

অস্ত্র সরানোর জন্য লে. কর্নেল জানজুয়ার হুকুম ছিল, কমান্ডিং অফিসারের এই হুকুমও সেদিন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশের কাছে অগ্রাহ্য হয়ে যায় বলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক সময়ের মেধাবী এই কর্মকর্তা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার দূরদর্শী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের কারণে, বলা যায় সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালনে সেদিন রক্ষা পায় ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের ১১০০ সৈন্য এবং মেজর জিয়া। সেদিন যদি তাঁর (বেগম খালেদা জিয়ার) তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত না দেওয়া হতো তাহলে পুরো ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট অস্ত্রহীন হয়ে পড়তো। এমনকি মেজর জিয়ার পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করা, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ- এসব সবকিছুই হয়তোবা বানচাল হয়ে যেতো। 

সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই ঘটনাটি একটি মাইলফলক। কমান্ডার না হয়েও কমান্ডারের ভুমিকা নিয়েছিলেন গৃহবধূ খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাই সালাম জানাতে হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। বাসস।