
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতির পর এবার শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি ইউনেসকোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এতে খুশি টাঙ্গাইলের তাঁত সংশ্লিষ্টরা।
ঐতিহ্য ও কারুশিল্পের সংমিশ্রণে তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ি তার নান্দনিক নকশা, ডিজাইন ও আরামের জন্য নারীদের কাছে সবসময়ই প্রথম পছন্দ। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের অধিকাংশই পুরুষ হলেও, নারী শ্রমিকরাও সমানভাবে সহযোগিতা করেন। কেউ সুতা কাটেন, কেউ বা চরকা ঘোরান। নিপুণ হাতের কাজ আর মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি এই শাড়ি একসময় তাঁত পল্লীর প্রধান পরিচয় ছিল।
তাঁত সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউনেসকোর স্বীকৃতি ও ঐতিহ্যের মর্যাদা পেলে আমাদের এ কারুশিল্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ হয়ে থাকবে।
একসময় যেকোনো উৎসবকে ঘিরে তাঁত পল্লীগুলোতে কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁতের 'খটখট' শব্দে মুখরিত থাকত। কিন্তু আধুনিক পোশাকের ভিড়ে এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই দৃশ্য আজ অতীত। তাঁত পল্লীর বেশিরভাগ এলাকাতেই এখন শুনশান নীরবতা।
তাঁত সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আধুনিকতার ধাক্কায় এই শিল্পটি প্রায় বিলুপ্তির মুখে। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে, এবং বাকি ২০ শতাংশ কোনোমতে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। মালিক ও শ্রমিকরা মনে করছেন, ইউনেসকোর স্বীকৃতি অত্যন্ত গর্বের বিষয় হলেও, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এই আন্তর্জাতিক মনোনয়ন তাঁত সংশ্লিষ্টদের কোনো কাজেই আসবে না।
ইউনেসকোর এই মনোনয়নের আগে ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল তাঁত শাড়িকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, এই ঘোষণার কিছুকাল আগে ভারতও টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি দাবি করেছিল, যা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
তাঁত মালিক-শ্রমিকরা জানান, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে বাঁচাতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর কারুশিল্প সংরক্ষণ করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি নজরদারি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।