News update
  • Bangladesh earthquake death toll rises to 10; scores injured     |     
  • CA for Armed Forces' efficient role to ensure smooth, festive polls     |     
  • Tarique Rahman calls for urgent disaster preparedness after quake     |     
  • UN Unveils UN80 Action Plan to Drive System-Wide Reforms     |     
  • Guterres Urges G20 to Show Leadership and Vision in SA     |     

ঢালাও ঋণের মাশুল গুনছে ব্যাংকখাত, আমানত ফেরাতে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ব্যাঙ্কিং 2025-07-26, 10:56am

ef71244449a75bd1062c01cbd6938fd4130d58a8b1f97f1d-8a512f67e25277449d1055b93c7f69591753505803.png




অনেকটা ঢালাও ঋণ দেয়ার মাশুল গুনছে ব্যাংক খাত। একদিকে দেশের অর্থঋণ আদালতে ২ লাখের বেশি মামলায় আটকে আছে আমানতকারীদের ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে এ পর্যন্ত সম্পন্ন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত অডিট ফার্মের ফরেনসিক রিপোর্টের হিসাবে শরিয়াভিত্তিক অনেক দুর্বল ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ ৯০ শতাংশেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের অর্থ ফেরাতে আরও কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নাসিমা আক্তার। একটি ব্যাংকে আমানত রেখেছেন ৫ বছর ধরে। তার হিসেবে যদি তিনি পুরো টাকা পেতে চান তাকে আরও ৫ বছর প্রতিমাসে ব্যাংকে যেতে হবে। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে টাকাটা জমিয়েছি। দরকারের জন্যই জমিয়েছিলাম। কিন্তু যখন দরকার তখন ব্যাংকে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় টাকা পেতে হলে প্রতিমাসে ৫ হাজার করে টাকা নেয়া যাবে। তবে প্রতিমাসে ব্যাংকে আসতে গেলে আসা-যাওয়ায় বাড়তি খরচ রয়েছে। এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক।

নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চিত আমানত যখন নাসিমা আক্তররা ফেরত পান না অথবা ফেরত পেতে সমস্যায় পড়েন, তখন তারা কোথাও কোনো অভিযোগ করতে যান না। কিন্তু যারা নাসিমা আক্তারদের এই ক্ষুদ্র আমানত থেকে ঋণ গ্রহণ করেন হাজার হাজার কোটি টাকা, তারা আসেন আদালতে। এরকম প্রায় ২ লাখ ৪ হাজার মামলা রয়েছে আদালতে।

সবচেয়ে বড় কথা ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই জায়গায় অর্থ আটকে আছে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। আর অন্যদিকে ঋণ গ্রহীতাদের আটকে আছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এরকম একটি পরিস্থিতিতে নাসিমা আক্তাররা কতটা আস্থা রাখবেন ব্যাংকের ওপর; সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

অর্থ ঋণ আদালতে যাদের প্রতিনিয়ত যাতায়াত সেসব আইনজীবী বাদি বিবাদীদের মতে, সুরক্ষার জন্য আইন হলেও আইনের সুবিধা নিয়ে ঋণ খেলাপিরা টাকা ফেরত না দিয়ে বরং সংবিধানের ১০২ ধারায় জুডিশিয়াল রিভিউতে সময় নেয়ার সুযোগ নেন। এতে সময়ের সাথে ব্যয় ও সুদ দুটোই বাড়ে। যা আদায় আরো কঠিন হয়ে পড়ে ব্যাংকের জন্য।

এমনকি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা সিআইভি লিস্ট থেকে নাম সরিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকেও অর্থ ঋণ নেয়ার রেকর্ড রয়েছে আদালতে। আর এর পুরো মাশুল পরোক্ষভাবে গুণতে হয় নাসিমা আক্তারদের মত অর্থের মূল মালিকদের।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ বলেছেন, আদালতগুলো অনেকটাই ব্যাংকের পক্ষে কাজ করে। আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, যেকোনোভাবে টাকা আদায় করতে হবে। কিন্তু এই টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। কারণ এখানে এডিআরের (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) ব্যবস্থা থাকলেও, সেটি খুবই উদাসীনভাবে সম্পন্ন হয়। এছাড়া রায়ের কার্যকর হওয়ারও আলাদা একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। ফলে লোন দ্রুত রিকভার হওয়ার কথা থাকলেও, তা সময়মতো হয় না। এডিআর প্রক্রিয়া সময়মতো সম্পন্ন হলে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমতো এবং ব্যাংকগুলোর লোনও দ্রুত রিকভার হতো।

খেলাপি ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোর লুকোচুরি আরও বেশি প্রকাশ পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেও। যেখানে দুর্বলের তালিকায় থাকা শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংকের ঘোষিত অনাদায়ী ঋণ ২০ থেকে ৪০ শতাংশের ঘরে দেখানো হলেও প্রতিবেদন অনুযায়ী যা ৯০ শতাংশেরও বেশি। নিয়ম না মেনে ঢালাও ঋণ দেয়ার কারণেই ব্যাংকগুলোর এমন পরিস্থিতি। ফলে খেলাপিদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, ব্যাংকগুলো যেন দ্রুত অর্থঋণ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত তদারকি করছে। যেকোনো নেতিবাচক ফলাফল শেষ পর্যন্ত ব্যাংককেই বহন করতে হয়। তাই ব্যাংকগুলোকে দ্রুত তাদের সম্পদ পুনরুদ্ধারের কাজে মনোযোগী হতে হবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা থেকে আবার লাভজনক অবস্থায় ফেরা যায়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি বা প্রচেষ্টার ঘাটতি বরদাস্ত করা হবে না।

ব্যাংক খাতের খেলাপিদের তালিকায় এগিয়ে থাকা ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও ৬ বেসরকারি ব্যাংকের অংশীদারিত্ব ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশ। তবে অডিট ফরেনসিক রিপোর্টে যা ব্যাংকখাত ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে ব্যাপকভাবে চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টদের।