News update
  • Two children drown in mountain stream in Ramu, Cox's Bazar     |     
  • Sundarbans fire: Committee formed to assess biodiversity loss     |     
  • Dhaka stock turnover crosses Tk1000cr after 3 months      |     
  • Heatstroke claims 15 lives in 14 days: DGHS     |     
  • Forest Deptt deploys teams, drones to monitor Sundarbans fire      |     

শাহ আবদুল হান্নান ছিলেন বাংলাদেশের প্রবাদ পূরুষ

মতামত 2021-06-07, 3:21pm

Shah-Abdul-Hannan-6e09564689eb5c860d1711882250f2211623157566.jpg

Shah Abdul Hannan



ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ শাহ আবদুল হান্নান (রহীমাহুল্লাহ)। তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখক, কলামিস্ট ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
যুগন্ধর প্রতিভার এই মানুষ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সাবেক চেয়ারম্যান, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠাতা, ইবনে সিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ইসলামিক স্কলার। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি তার ক্ষুরধার বক্তব্য তুলে ধরতেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন-যাপন করতেন। কর্মজীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা, সততা ও ন্যায়-নীতির কারণে তিনি সর্বমহলে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। বহুগুণে গুনান্বিত শাহ আবদুল হান্নান (রহীমাহুল্লাহ) দায়িত্ব পালনে কখনোই ন্যায়-নীতির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি।
শাহ্ আব্দুল হান্নান (রহীমাহুল্লাহ) ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী থানার বিখ্যাত শাহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
শিক্ষকতার পেশা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬২ সালে ঢাকা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান ফিন্যান্স সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। এর মাঝে তিনি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, যেখানে তিনি ভ্যাট চালুর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ, সমাজ কল্যাণ ও সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবনা দেন সরকারকে, যা রাষ্ট্রের জন্য এক অভাবনীয় সহায়ক বিষয়ে পরিণত হয়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আমলা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যাংকিং, শিক্ষা ও সমাজসেবা সেক্টরে তার অবদান অনন্য। তিনি ইসলামিক ইকনোমিক রিসার্স ব্যুরো, বাংলাদেশ ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব থটের স্বপ্নদ্রষ্টাদের অন্যতম। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ভিসি ছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। দেশে নানা সঙ্কটকালে তিনি সততা, দক্ষতা ও সফলতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
শাহ আব্দুল হান্নান (রহীমাহুল্লাহ) ছিলেন মুখে, কর্মে, অন্তরে এক ও অভিন্ন। তাকে অনুসরণ-অনুকরণ করা গেলে দেশ ও জাতি খুবই উপকৃত হবে। শাহ আব্দুল হান্নান (রহীমাহুল্লাহ) সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু কেউ তার কোনো ত্রুটি ধরতে পারেনি।
শাহ আব্দুল হান্নান (রহীমাহুল্লাহ) ছিলেন বাংলাদেশের প্রবাদ পূরুষ। তিনি তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখনীর মাধ্যমে দেশ, জাতি ও ইসলামের কল্যাণে আজীবন নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। নারী জাতির অগ্রায়ণ ও মুক্তির জন্য বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে নারীদের আত্মসচেতন করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
শাহ আব্দুল হান্নান সাহেবের (রহীমাহুল্লাহ) সাথে আমার সম্পর্ক ২৮ বছর আগের। ১৯৯৩ সালে প্রথম তাঁর মুখোমুখি হই। আমার অন্তরে এই মানুষটি সেদিনই জায়গা করে নিয়েছিলেন। প্রথম দিনের কথাগুলো আজও মনে রয়ে গিয়েছে৷
মূলত আমার বন্ধুর মতো বরিশাল মেডিকেল কলেজের বড় ভাই ডাঃ আবু খুলদুন আল-মাহমুদ, শাহ আবদুল হান্নান (রহীমাহুল্লাহ) সম্পর্কে কথা বলতেন। আর তাঁর মাধ্যমেই এই ক্ষণজন্মা পুরুষের সাথে আমার পরিচয় ঘটে।
আমার বাবা আলহাজ্জ্ব কে.এম আবদুল করিম (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন ঝালকাঠী জেলার রাজাপুরস্থ সাতুরিয়া হামিদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আব্বা ১৯৯১ সালে আমার দাদীর নির্দেশে বদলি হয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। গ্রামের বাড়িতে আসার পরে আব্বার আর্থিক সীমাবদ্ধতা আরো বাড়ে। এছাড়া আমাদের ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করতে আব্বা হিমশিম খেতে হতো। সেই সময় শাহ আবদুল হান্নান (রহিমাহুল্লাহ) এর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল I তিনি আমার অধ্যয়নের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। যদিও বৃত্তি থেকে তহবিল যথেষ্ট ছিল না, তারপরে তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করা শুরু করলেন। আমি সাংবাদিক হিসাবে আমার ক্যারিয়ার শুরু না করা পর্যন্ত তিনি আমাকে অবিরত সাহায্য করেছিলেন।
প্রাথমিকভাবে আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে আমার পেশাদার জীবন শুরু হয়েছিল । কিন্তু আমি এই পেশা উপভোগ করিনি।ছোটবেলা থেকেই আমি লেখালেখি ও গনমাধ্যমের সাথে জড়িত। ছাত্রজীবনে বরিশালের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক প্রবাসী দিয়ে সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি। শাহ আবদুল হান্নান (রহিমাহুল্লাহ) আমাকে সাংবাদিক হিসাবে আমার পেশা পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন আমি একটি দৈনিক পত্রিকায় যোগ দিয়েছি।