Scholar student Abu Sayeed who was shot dead in Rancour on Tuesday 16 July 2024.
মঙ্গলবার ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে স্কলার ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনাটি সঠিক তদন্তের দাবি রাখে। ছেলেটিকে গুলি করে হত্যার ক্ষেত্রে কোনো অন্যায় করা হয়েছে কিনা? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া গুলি করার ভিডিওতে দেখা গেছে আবু সাঈদ কোন হুমকি হয়ে দাড়ায়নি যে তাকে গুলি করে থামানো দরকার ছিল। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্স লেভেলের ছাত্র আবু সাঈদ কোনো জীবন-হানিকর কাজ করেননি বা রাষ্ট্রীয় অথবা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করার চেষ্টা করেননি যে গুলি চালানো জরুরী ছিল। চারটি গুলি তার বুকে বিদ্ধ হয়। এ তথ্য তার ছোট বোনের যার বুক ফাটা কান্নায় আশেপাশে সবার চোখে পানি এসেছিল। ভাই বোনদের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবার বড়। তার দুঃখজনক মৃত্যুর পরে বোনটি বিলাপ করে কান্নাকাটি করেছিল। আবু সাঈদের কিশোরী বোন কাঁদতে কাঁদতে বলে যে তার ভাই প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কলারশিপ পেয়ে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছিল। তার ভাই তাকে বলেছিল যে বিসিএস একটি ভাল সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এ ধরনের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সে আন্দোলনে নেমেছিল। বোনটি চিৎকার করে বলল, কেন কর্তৃপক্ষ তার ভাইকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিল। অন্যায় করে থাকলে তারা তাকে আহত করতে পারত, কিন্তু কেন এই হত্যাকান্ড? কি অপরাধ করেছে তার ভাই? এই ভিডিওটি যমুনা টেলিভিশন প্রচার করেছে।
আবু সাঈদের উপর গুলি চালানো রেকর্ড করা অন্য ভিডিওতে দেখা গেছে যে আবু সাঈদ রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের কোন হুমকি দেওয়ার কাছাকাছি কোথাও ছিল না। প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশ সদস্যরা রাস্তার এক কোণে অবস্থান নিয়েছিল এবং আবু সাঈদ সড়ক দ্বীপের কাছে ছিল। সুঠাম দেহের অধিকারি, স্টাইলিষ্ট শশ্রুমন্ডিত আবু সাঈদের নিজের উপর প্রচণ্ড আস্থা ছিল। দুই হাত ছড়িয়ে বুক পেতে সে পুলিশকে দেখায়, চাইলে তারা ওখানে আঘাত করতে পারে। আর পুলিশ সদস্যরা তা উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ না নিয়ে একের পর এক গুলি চালায়। স্পষ্টতই সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা যুক্তির চেয়ে সহজাত প্রবৃত্তি দ্বারা বেশি পরিচালিত হওয়ায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এবং আবু সাঈদ তার জীবনে যে একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখেছিল তা নস্যাত করে দেয়। গুলি চালানোর সময় আবু সাঈদ তার আঘাত এড়ানোর জন্য শরীর এদিক ওদিক করছিল। কিছু গুলি তার পিছনে রাস্তার মাঝামাঝি নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেবদারু গাছের কৃত্রিমভাবে তৈরি ঝাপড়িতে লেগেছে। গুলি চলতে থাকে। গায়ে গুলি আঘাত করার সাথে সাথে সে তার ডান হাত দিয়ে তার বুক স্পর্শ করেছিল। যখন সে অনুভব করল যে আঘাতগুলো অসহ্য হয়ে উঠেছে তখন সে সড়ক দ্বীপ টপকিয়ে অন্য দিকে চলে যায় এবং রাস্তার উপর তার পায়ে ভর করে পুলিশের দিকে মুখ করে বসে পড়ে। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে একজন বিক্ষোভকারী ছাত্র তাকে নিয়ে যেতে আসে। আবু সাইয়িদ সহকর্মী ছাত্রের সাথে কয়েক কদম হেঁটে হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এর পর সে আর নিজের পায়ে দাড়াতে পারেনি। কয়েকজন চাকরিতে কোটা বিরোধী ছাত্র তাকে পা ও হাত ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তার মৃত্যু নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। পুলিশ কি আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে? যে কেউ ভিডিওটি দেখেছেন তারা জোর দিয়ে 'না' বলবেন। এটা কি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ছিল যে পুলিশকে গুলি করে থামাতে হয়েছিল? তার উত্তরও 'না'। আবু সাঈদের হাত ছড়িয়ে আঘাত করার জন্য তার বুক দেখানোর অতি সাহস কি সেখানে অবস্থানরত পুলিশকে উত্তেজিত করেছিল যে তারা যুবকটিকে গুলি করে সায়েস্তা করেছিল? এই তৃতীয় প্রশ্নটি যদি একটি ইতিবাচক উত্তরের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে অনেকেই প্রশ্ন করতে বাধ্য হবেন যে, সেখানে সংগীন হাতে মোতায়েন করা পুলিশরা কি তাদের কাজ করার জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত ছিল? শুধুমাত্র আঘাত করার জন্য বুক দেখানোর কারণে গুলি চালানোর পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হওয়া যায়না। এবং শুধু একারণে একজন প্রতিশ্রুতিশীল যুবকের জীবন শেষ করার জন্য ক্ষিপ্ত হওয়া উচিত নয়। এ যুবক চাকরির কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল, নিজের জন্য একটি ন্যায্য সুযোগ পেতে, অন্য কিছু নয়। এটা কোনো অপরাধ হতে পারে না। এই ক্ষেত্রে আরেকটি দেখার বিষয় হল গুলি চালানোর নির্দেশ একজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছিল কিনা? পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ মহলের পাশাপাশি সাধারণ প্রশাসনেরও ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। এমনকি পাঁচ বছর আগেও একজন প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটকে বলতে শোনা গেছে, গ্রামীণ এলাকায় একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন পুলিশদের দিয়ে গুলি চালানো কতটা কঠিন ছিল। সেখানে মোতায়েন পুলিশরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছিল যেমন তাদের কাছে গুলি নেই, বা গুলি কাজ করছে না এবং তারা জড়ো হওয়া মানুষের উপর গুলি চালানো থেকে বিরত ছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তখন একটি মাত্র বিকল্প ছিল, আনসার সদস্যদের গুলি চালাতে বলা। এবং এটি শুধুমাত্র একটি আদেশ উচ্চারণ করতেই তা কাজ করেছে। পুলিশের প্রশিক্ষণের মান কি এখন নেমে গেছে? সরাসরি গুলিবর্ষণে আবু সাঈদের মৃত্যু তাই পুলিশের পথ সংশোধনের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যালার্ম বেল হিসাবে গন্য করা উচিত। আবু সাঈদ সততার সাথে বিশ্বাস করেছিল যে চাকরি কোটা আন্দোলনে যোগ দিয়ে সে সঠিক কাজটি করছে। মৃত্যুর আগের দিন ১৫ জুলাইয়ের শেষের দিকে দেওয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়েছিল, যদি সে আন্দোলনে মারা যায়, তাহলে তার নিথর যেন দেহ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। ছাত্র সমাজ আন্দোলনে জিতলে বিজয়ী হিসেবে তাকে দাফন করবে। কারণ তার বাবা-মা হেরে যাওয়া লাশকে স্বাগত জানাবেন না। ১৬ জুলাই তার মৃত্যুর পরপরই তার এক বন্ধু ফেসবুকে এটি পোস্ট করে। কিন্তু আবু সাঈদের পরিবার তাদের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল সদস্যকে হারিয়ে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।