ভারত সরকারের ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগের সাম্প্রতিক ঘোষণায় সে দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের অভিযোগ, আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা লোকসভা নির্বাচনের আগে সমাজে মেরুকরণ ঘটাতে চাইছে শাসক দল।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ মোতাবেক, বাংলাদেশে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশ থেকে যে সকল “নির্যাতিত” ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের ফাস্ট-ট্র্যাক ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব দাবি করার অনুমতি দেওয়া হবে।
এই আইন কেবলমাত্র অমুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য হওয়ায় একাধিক অধিকার গোষ্ঠী, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাসহ সমালোচকরা বলছেন, এই আইন মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক।
এই বিষয়ে গত সপ্তাহের ঘোষণার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিএএ-কে “বৈষম্যমূলক আইন যা সাম্যের সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী” হিসেবে অভিহিত করেছে।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনারের দফতরের এক মুখপাত্রকে রয়টার্স সংবাদ সংস্থা মঙ্গলবার উদ্ধৃত করেছে। তিনি বলেছেন, এই আইন “প্রকৃতিগতভাবে মূলত বৈষম্যমূলক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতাকে লঙ্ঘন করছে।”
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সিএএ-কে সমর্থন করে বলেছেন, এটি একটি “বিশেষ আইন” যা তিনটি দেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে তৈরি করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে ভারতীয় মুসলিমদের কোনও সম্পর্ক নেই।
শাহ আরও বলেন, “সিএএ নিয়ে ভারতীয় মুসলিমদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনও ভারতীয়ের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিধি এতে নেই।”
এই আইনে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের জরুরি ভিত্তিতে ভারতের নাগরিকত্ব লাভের অনুমতি দেওয়া হবে। শ্রেণিবদ্ধ সংখ্যালঘুদের তালিকায় ইহুদি ও বাহাই-রা নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আশ্বাসবাণী সত্ত্বেও এই আইনের প্রয়োগ ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিমের মনে ভয় জাগিয়ে তুলেছে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। তাদের ভীতির কারণ হল, যদি তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় তাহলে নির্দিষ্ট কিছু নথি তারা দেখাতে পারবে না।
তাদের এই ভয় বাস্তবে পরিণত হতে পারে যদি সরকার জাতীয় জনপঞ্জি বা এনআরসি নামে আরেকটি আইন প্রয়োগ করে। এই আইনে “ভারতের সকল নাগরিককে” চিহ্নিত ও তালিকাবদ্ধ করা হবে।
দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান জাফারুল ইসলাম খানের অভিযোগ, কয়েক বছরের টালবাহানার পর ও ১৯ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে এই আইনের প্রয়োগ থেকে বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার হিন্দু-সংখ্যাগুরু সমাজকে মেরুকৃত করতে ও নির্বাচনে তা থেকে ফায়দা তুলতে এই আইনকে ব্যবহার করছে। তথ্য সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকা।