News update
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     

সাংবাদিকতার এখনই সময়

মিডিয়া 2024-05-11, 9:32pm

mainuddin-khawaza-6342e25a4740a1194ff08cffc066a7d91715441548.png

Mainuddin Khawaza



খাজা মাঈন উদ্দিন

ছোট–বড় সব মিথ্যাই আমাদের সমাজকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবন যাপনকে দুর্বিসহ করে ফেলেছে। পরিতাপের কথা, সত্য এখন আর অপরাধ ও দুর্নীতি মোকাবিলার সম্মিলিত প্রতিরোধক ঢাল হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত নয়। সত্যকে নির্লজ্জভাবে প্রত্যাখ্যান করার একটি দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে পড়ে নতুন প্রজন্ম চেতনাগত দিক থেকে একটি বামন প্রজন্মে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।

না, একটি মানুষকে মেরুদণ্ডহীন আপসকামী বানানোর জন্য শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না। মিথ্যাচার রোবট এসে তৈরি করে না। সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার সাজানো হয়।

বাজারের দিকে তাকান। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবাসামগ্রী কে, কখন, কোথায়, কেন, কীভাবে ও কী পরিমাণ উৎপাদন করছে তা মোটামুটি সবাই জানে, কিন্তু তারপরও এ দেশে পণ্য ও সেবার সংকট লেগেই আছে। এটা কি পণ্য সম্পর্কে অর্ধসত্য তথ্য দেওয়া, আসল তথ্য চাপা দেওয়া এবং নিদেনপক্ষে তথ্য কারসাজিরই ফল নয়?

ঠিক এই রকমের একটি ক্রান্তিকালে সবচেয়ে বড় যে প্ল্যাটফর্মটি মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম সেটিই এখন পরিণত হয়েছে সবচেয়ে বড় ‘দুর্ঘটনায়’।

সংবাদপত্র শিল্পের অনেক ‘সাংবাদিক’ পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তারপরও তাঁরা এটি স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, একটি গতিশীল সমাজের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রক্রিয়ারই অংশ হলো সাংবাদিকতা। বছরের পর বছর সাংবাদিকদের একটি অংশ সাধারণ মানুষের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যদের তোষণ করে চলেছে এই দশার মূল কারণ তারাই। 

বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমগুলো সংকটে রয়েছে, তবে বাংলাদেশে অবস্থা আরও খারাপ। এ দেশের মিডিয়ার খারাপ অবস্থার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তা নতুন (সামাজিক যোগাযোগ) মাধ্যম পুরনো (মূলধারার) সংবাদমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ জানানোর আগে পর্যন্ত খোলাখুলিভাবে আলোচিত হতো না।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে এখন যে অস্থিরতা চলছে তার জন্য শুধু প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক মডেলের ব্যর্থতা দায়ী, তা নয়, বরং তাদের সরবরাহ করা তথ্য ও তথ্য উপস্থাপন ভঙ্গির ওপর থেকে জনগণের আস্থা সরে যাওয়া তার চেয়ে বড় কারণ।

সাংবাদিকতার সহজাত চর্চাকে নিয়ন্ত্রিত ও নিষিদ্ধ করার আইনী ও বিধিগত বিষয় চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে দেশের বাইরে থেকে সমালোচনা হয়। কিন্তু দেশের ভেতরে আত্মসমালোচনা এখনো সুদূর পরাহত।  

সাংবাদিকতায় এখন তালগোল পাকিয়ে ফেলা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও সামাজিকভাবে সমর্থ যে গোষ্ঠী ভুয়া খবর তৈরি করে, সেই একই লোকেরা মূল ধারার গণমাধ্যমকে তথ্য বিকৃতি ও ভুল খবর প্রচারের জন্য দোষারোপ করে।

‘অনলাইন–তথ্যবিকৃতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের সত্যিকারের বৈশ্বিক সমাধান দরকার’ শিরোনামে পলিটিফ্যাক্ট’স-এর প্রধান সম্পাদক অ্যাঙ্গি ড্রোবনিক হোলানের একটি নিবন্ধ ‘পয়েন্টার’ ওয়েবসাইটে পৣকাশিত হয়েছে। সেখানে প্রযুক্তি কোম্পানি ও সরকারগুলোর বিধি-বিধানের নিবর্তনমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে জোরারোপ করা হয়েছে। আমেরিকার পটভূমিতে যে সমাধান দেওয়া হয়েছে, তা অন্যত্র তৈরি করেছে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ।

উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যের মতো অস্বস্তিকর সত্যগুলো যে মুহূর্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করল, ঠিক সেই মুহুর্তে অবাধ তথ্য প্রবাহ বন্ধের জন্য এক জোট হয়ে প্রচারণা শুরু হলো।

ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা মনে করেন, সাধারণ মানুষ মনে করবে দেশে শেয়ার বাজারে ধস, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, সাইবার ডাকাতি এবং স্বাস্থ্য সেবা খাতে কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা কখনো ঘটেইনি এবং মাঠের বাস্তবতাকে আড়াল করতে তাঁরা কিছু ‘অর্থহীন’ ভাষ্য তৈরি করে বাজারে ছড়াতে থাকে।

অবশ্য একটা সুস্থ ও স্বচ্ছ পরিবেশ এমনি এমনি তৈরি হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সেই পরিবেশ তৈরি করতে এখনও সেই বিস্মৃত মন্ত্র প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে: গণমাধ্যম পরিচালনার প্রধান লক্ষ্য—সত্য, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমাজ ও সমাজের নেতাদের লড়াই চালাতে হবে। 

সাংবাদিকতা নামক পথের খানাখন্দ এড়াতে গিয়ে সরাসরি তথ্য সরাসরি না দিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা যে প্রকারান্তরে বিপজ্জনক মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগী ভূমিকা পালন করা হয় তা আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার একাংশের গণতন্ত্রের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এবং ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিকূল হতে থাকা এই বিশ্বে বাধা ও ঝামেলার মুখে পড়া ছাড়াই কোনো প্রতিবেদন করা কিংবা লেখা ছাপা যাবে তা আশা করা যায় না। 

কলাম্বিয়া জার্নালিজম