News update
  • 94 Palestinians killed in Gaza, 45 people at aid sites      |     
  • Opening of UN rights office at talk stage: Foreign Adviser     |     
  • AC Tabassum Urmi sacked over anti- govt Facebook posts     |     
  • Bangladeshi killed in BSF firing at Chuadanga border      |     
  • Rains Fuel Disasters in 83pc of Brazilian Cities: Report     |     

উত্তরাখণ্ডে অহিন্দু ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক মিডিয়া 2024-09-11, 5:56am

28da78772f4b711bcc1ea91376abecd5fdb50f4c0e632576-4c13caa87090560de5d59c40d8ad22671726012721.jpg




‘গ্রামে অহিন্দু/রোহিঙ্গা মুসলিম ও ফেরিওয়ালাদের ব্যবসা করা/ ঘোরা নিষিদ্ধ।’ ভারতের পার্বত্য রাজ্য উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় কয়েকটা সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কথাগুলো লেখা হয়েছে সাইনবোর্ডগুলোতে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ফেরি বিক্রেতার পাশাপাশি অহিন্দু ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যবসা করা বা ঘোরাফেরা করা নিষিদ্ধ।

বিবিসির প্রতিবেদন মতে, সার্বজনীন জায়গায় লাগানো বোর্ডগুলোতে এমন লেখাকে ঘিরে ভারতজুড়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই বার্তা ‘সতর্কতার’ জন্য লেখা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিরা উত্তরাখণ্ড পুলিশের ডিজি অভিনব কুমারের সঙ্গে দেখা করে আপত্তি জানিয়েছেন। 

পুলিশ প্রশাসনের দাবি, এই ‘সতর্ক বার্তা’ দেয়া বোর্ডগুলোর বিষয়ে তারা জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

বোর্ডের বিষয়টা এমন একটা সময়ে সামনে এসেছে যখন পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।

সম্প্রতি রুদ্রপ্রয়াগের পার্শ্ববর্তী চামোলি জেলায় এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত একজন মুসলিম যুবক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ওই বোর্ডে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও উত্তরাখণ্ডে এই সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতি সম্পর্কে কোনও সরকারি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

গ্রাম প্রধান ও স্থানীয়রা যা বলছেন

যে গ্রামগুলোতে এই জাতীয় বোর্ড লাগানো হয়েছে সেই তালিকায় ন্যালসুও রয়েছে। রুদ্রপ্রয়াগ জেলার উখীমঠ ব্লকের অন্তর্গত এই গ্রামের প্রধান হলেন প্রমোদ সিং। বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনা সম্পর্কে বিশদে জানতে গ্রাম প্রধান প্রমোদ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছে তারা।

এ ব্যাপারে প্রমোদ সিং বলেছেন, ‘আমার গ্রামে বোর্ডে যা লেখা ছিল তা বদলে দেয়া হয়েছে। আগে বোর্ডে অহিন্দু ও রোহিঙ্গা মুসলিম লেখা ছিল। এখন তার পরিবর্তে ফেরিওয়ালাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ লেখা হয়েছে।’

কিন্তু কেন এই বার্তা এমন প্রশ্নের জবাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করে প্রমোদ সিং বলেন, ‘আসলে গ্রামে আসা বেশিরভাগ ফেরিওয়ালাদের (পরিচয়ের) কোনোরকম ভেরিফিকেশন (যাচাই) নেই। ভবিষ্যতে যাতে কোনো ঘটনা না ঘটে সেই জন্য এভাবে লেখা হয়েছিল।’

তবে বোর্ডে অহিন্দু ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মতো শব্দের ব্যবহার যে ঠিক নয় সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন এই গ্রাম প্রধান। তার দাবি, বোর্ড লাগানোর আগেই সে কথা তিনি জানিয়েছিলেন। যদিও কারা ওই বোর্ড লাগিয়েছেন সে বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেছেন ওই গ্রামের প্রধান।

প্রমোদ সিংয়ের কথায়, ‘যারা এই বোর্ড লাগিয়েছেন, তাদের আমরা আগেই জানিয়েছিলাম যে এটা লেখা ঠিক নয়। তবে ওই ব্যক্তিরা (যারা বোর্ড লাগিয়েছেন) কোন সংগঠনের সদস্য তা আমি জানি না।’ বিবিসি জানিয়েছে, তারা আরও কয়েকটা গ্রামের প্রধানের সঙ্গে কথা বললেও তারা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বা আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত রুদ্রপ্রয়াগের বাসিন্দা অশোক সেমওয়ালের দাবি, ‘সচেতনতা ছড়িয়ে’ দেয়ার উদ্দেশ্যে এই বোর্ডগুলো লাগানো হয়েছে।

সেমওয়াল বলেন, ‘কয়েকটা গ্রামের প্রধান এবং কিছু সংগঠনের তরফে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এই বোর্ডগুলো লাগানো হয়। বিষয়টার সূত্রপাত কেদার ঘাঁটি থেকে, তারপর সবাই একে অন্যদের অনুসরণ করে এই বোর্ড লাগিয়েছে।’

ফেরিওয়ালাদের প্রবেশ নিষেধ করার পেছনে সেমওয়ালের যুক্তি বাজারেই যখন ব্যবসা করা যায়, তখন গ্রামে আসার কী প্রয়োজন? সেমওয়াল জানান, পুলিশের তরফে ওই বোর্ডের লেখায় সংশোধন করতে বলা হয়েছে।

পাশের জেলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা

রুদ্রপ্রয়াগের পার্শ্ববর্তী জেলা চামোলির নন্দনগর ঘাট এলাকায় সম্প্রতি আরিফ নামে এক মুসলিম যুবকের দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। ওই যুবকের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে।

শ্লীলতাহানির ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা স্থানীয় বাজারে মিছিল বের করে স্লোগান দিতে থাকেন। অভিযোগ, এরপর ওই অভিযুক্ত যুবকের সেলুনে ভাঙচুর চালানো হয়। সেই সময় আশপাশের অন্য মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকানকেও নিশানা করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দুইদিন পর অভিযুক্ত ওই যুবককে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর জেলার সোফতপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে বাজারে ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছিল।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই ঘটনার নিন্দা করে জানিয়েছেন, বাজারে ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর ওই এলাকায় উত্তেজনার পরিবেশ হয়েছে। পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি রাখতে পুলিশ বাহিনীর সক্রিয়তাও বেড়েছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের আপত্তি

বোর্ডের বিষয় প্রকাশ্যে আসার পর এ নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) উত্তরাখণ্ড রাজ্য ইউনিটের সভাপতি ড. নইয়ার কাজমির নেতৃত্বে একটা প্রতিনিধি দল ডিজিপি অভিনব কুমারের সঙ্গে দেখা করেছেন।

রুদ্রপ্রয়াগে লাগানো বোর্ড এবং চামোলির নন্দনগর ঘাটের (বাজারে ভাঙচুরের) ঘটনার কথা ডিজিপিকে জানান তিনি। তার কথায়, ‘এই নিয়ে আমরা উত্তরাখণ্ড পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল অভিনব কুমারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে রুদ্রপ্রয়াগে এই ধরনের বোর্ড সম্পর্কে অবহিত করেছি এবং সেই ছবিও দেখিয়েছি। ডিজিপি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে এই বিষয়ে তারা তদন্ত করবেন এবং যারা পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দেরাদুন শহরের কাজি মাওলানা মুহাম্মদ আহমেদ কাসমির নেতৃত্বে মুসলিম সেবা সংগঠনের আরেকটা প্রতিনিধি দল ডিজিপি অভিনব কুমারের সঙ্গে দেখা করেন এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্মারকলিপিও জমা দেন। 

কাজি মাওলানা মুহাম্মদ আহমেদ কাসমি বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই স্মারকলিপিতে গাড়োয়াল ও কুমায়ুনের পার্বত্য অঞ্চলে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ক্রমবর্ধমান মামলার সংখ্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে।’

মুসলিম সেবা সংগঠনের সভাপতি নঈম কুরেশি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সংবিধান প্রত্যেক ভারতীয়কে এই অধিকার দিয়েছে যে চাইলে কেউ গোটা ভারতের যে কোনও জায়গায় এসে বসবাস করতে পারেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যে ধরনের বোর্ড লাগানো হয়েছে তা নিন্দনীয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে প্রশাসন তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারছে না।’ নঈম কুরেশি জানান, বোর্ডের বিষয়ের পাশাপাশি চামোলির ঘটনা সম্পর্কেও দুঃখপ্রকাশ করেছেন ডিজিপি অভিনব কুমার। সময় সংবাদ।