ভারতে ইলিশ রফতানির শেষ দিন ছিল শনিবার (১২ অক্টোবর)। এদিন ৩৬ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে। আর এই দফায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে সর্বমোট ইলিশ গেছে ৫৩২ মেট্রিক টন। যেখানে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।
দেশে ইলিশ সংকট আর দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ রফতানি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এদিকে ইলিশ রফতানিতে সময় বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের ৪৯ রফতানিকারককে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছিল। সেদিন থেকে শুরু হয়ে ইলিশ রফতানি চলে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত।
জানা যায়, দুর্গাপূজার সময় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের তালিকায় ইলিশ রাখেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রফতানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও, উৎপাদন সংকটের কারণে ২০১২ সালে এই মাছ রফতানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজার সময় ইলিশ রফতানির সুযোগ দেয়।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যেই ভারতের ব্যবসায়ীরা দুর্গাপূজায় ইলিশ আমদানির সুযোগ দিতে অনুরোধ জানান। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পরে বিদেশে ইলিশ রফতানি হবে বলে জানায় বর্তমান সরকার। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে দেড় মাসের মাথায় ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয়া হয়। রফতানি বন্ধে হাইকোর্টে রিটও করেন সুপ্রিম কোটের এক আইনজীবী। তবে সব বাধা কাটিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ভারতে ইলিশ রফতানি।
গত বছর ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বিপরীতে রফতানি হয়েছিল মাত্র ৬৬৩ মেট্রিক টন। এ বছর ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে দেশে ইলিশ সংকট ও চড়া দামের কারণে রফতানিকারকরা তাদের অনুমোদিত ইলিশ পাঠাতে পারেননি। এর মধ্যে শেষ হয়ে যায় রফতানির সময়।
বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ৬ লাখ টন ইলিশ ধরেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়। এর পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন ইলিশ রফতানি হয়। অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন ইলিশ রফতানি হয়। সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়। গত ৫ বছরে ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয় ভারতে।
বেনাপোল স্থলবন্দর মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর আসাওয়াদুল ইসলাম জানান, পূজার ছুটির মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রফতানি চালু ছিল। ১২ অক্টোবর ইলিশ রফতানির শেষ দিন পর্যন্ত মোট ৫৩২ মেট্রিক টন ইলিশ গেছে ভারতে।
ইলিশ রফতানিকারক বেনাপোলের সততা ফিসের রেজাউল করিম জানান, দেশে ইলিশ সংকট আর বেশি দামের কারণে চাহিদামতো রফতানি করা যায়নি। সময় বাড়ালে হয়তো আরও কিছু রফতানি সম্ভব।