Islami Andolan logo
সংবিধান সংস্কার ও অন্যান্য সংস্কার
যদি সকলে একমত হয় তবে ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালিত হবে। কোরআন, সুন্নাহ ও ফতওয়ায়ে আলমগীরী অনুযায়ী দেশ শাসন চলবে।এটা খেলাফত শাসন। নতুবা নিম্নলিখিত ভাবে সংস্কার করা হোক-
১. নতুন করে সংবিধান রচনা করতে হবে। '৭২-এর ৪ নভেম্বরের গৃহীত সংবিধান অবৈধ। কেননা তা পাকিস্তানের ১৯৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত এমএনএ/এমপিএ যারা পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ম্যান্ডেট নিয়েছিল তাদের দ্বারা রচিত বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ম্যান্ডেট ছিল না। এলএফও না মানলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হয়তো অংশ নিত না অথবা অংশ নিলেও সংখ্যাগরিষ্ট ভোট পেত না । তাই বর্তমানে বিপ্লবী সরকারের পুরাতন সংবিধান অনুসরণের দরকার নেই।
২. সংবিধানের প্রারম্ভে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' লেখা থাকা দরকার।
৩. দেশের ৯২% লোক মুসলমানগণের প্রাণপ্রিয় ধর্ম ইসলামকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় সকল কাজ পরিচালিত হবে মর্মে সংবিধানে ধারা লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।
৪. দু'কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট থাকবে। প্রথম নিম্ন কক্ষ ৩৫০ আসন বিশিষ্ট। দ্বিতীয় উচ্চ কক্ষ ১৫০ আসন বিশিষ্ট। সরাসরি নির্বাচিত হবে নিম্ন কক্ষ পার্লামেন্ট। উচ্চকক্ষ ১৫০ আসন নিম্নলিখিতভাবে নির্বাচিত হবে।
ক) সেনাবাহিনী হতে ৪০ জন, সেনা প্রধানের মনোনীত।
খ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (সরকারি ও বেসরকারি) ২০ জন।
গ) মহিলাদের মধ্য হতে সরাসরি নির্বাচিত হবে ৩৫ জন ।
ঘ) প্রাক্তণ প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান বিচারপতি- ১৫ জন।
ঙ) জার্নালিস্ট ও প্রধান সংবাদ পত্রের সম্পাদক/সাংবাদিক ১০ জন।
চ) বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী ও ক্রীড়াবিদ (জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত) ১০ জন।
ছ) প্রখ্যাত আলেম, পীর সাহেব ও জাতীয় মসজিদের খতিব- ৫ জন।
জ) হিন্দু ৪ জন।
ঝ) বৌদ্ধ- ১ জন।
ঞ) খ্রিস্টান -১জন।
ট) নৃ-গোষ্ঠী- ১ জন।
ঠ) জুলাই আগস্ট ২৪ বিপ্লবে আহত ৩ জন। ( যারা কমপক্ষে ডিগ্রি পাশ হতে হবে ) ।
ঢ) দেশে বসবাসকারী, বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ, বৈজ্ঞানিক ও আবিস্কারক ৫ জন।
৫. নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পার্লামেন্টের মেয়াদ হবে ৫ বৎসর।
৬. তিন বারের বেশী কেউ পার্লামেন্টের সদস্য হতে পারবেন না।
৭. দেশে একজন প্রেসিডেন্ট থাকবেন যিনি সরাসরি গণভোটে নির্বাচিত হবেন।
৮. ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে।
৯. সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন একত্রে হবে, প্রত্যেকেই একটি করে ভোট দিতে পারবে।
১০. সরকারের প্রতি অনাস্থা ২/৩ ভাগ ভোটে।
১১. সরকারের প্রতি অনাস্থার জন্য প্রস্তাব কমপক্ষে ৭৫ জন পার্লামেন্ট সদস্যের লিখিত প্রস্তাবে আনতে হবে।
১২. সংবিধান সংশোধন গণভোটের মাধ্যমে সংশোধন করা হবে।
১৩. সব সদস্যই যে কোনো প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য রাখতে পারবে।
১৪. শুধুমাত্র সরকারের অনাস্থা প্রস্তাবে ও অর্থ বিলে দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার সদস্য পদ বাতিল হবে।
১৫. খএইঞছ রা পার্লামেন্টে সদস্য হতে পারবে না। নির্বাচিত হলেও যখনই প্রমাণ হবে কোন সদস্য খএইঞছ বিশ্বাসী সাথে সাথে তার সদস্য পদ বাতিল হবে।
১৬. মহিলারা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
১৭. মহিলারা উপদেষ্টা থাকতে পারবে। ৫% মন্ত্রি অনির্বাচিত হতে পারবে।
১৮. ঘুষ, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকতে হবে। অন্তত ৩ বারের জন্য এ ধারা বলবৎ থাকবে। স্পেশাল ট্রাইবুনালে তাদের দ্রুত বিচার করা হবে।
১৯.ক) যার যার ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বিবাহ করতে পারবে। খ) যার যার ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সম্পদ বণ্টন হবে। পারিবারিক আদর্শ থাকবে স্ব স্ব ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিচার হবে।
২০. তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার নেই।
২১. নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করে পরস্পর আস্থার ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন কঠোরভাবে নিরপেক্ষ থাকবে। ১৮ ধারা তাদের জন্য প্রযোজ্য।
২২. পার্লামেন্ট সদস্যের জন্য গাড়ী, প্লট বিতরণ রহিত করতে হবে।
২৩. বিভিন্ন পার্লামেন্টারী কমিটি থাকবে।
২৪. ১০ সদস্য বিশিষ্ট রাষ্ট্রীয় জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল থাকতে হবে। দেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তণ সেনাবাহিনীর প্রধান, প্রধান বিচারপতি ও বিশিষ্ট নাগরিকরা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। তাদের সিদ্ধান্ত ব্যতীত কোনো বৈদেশিক চুক্তি করা যাবে না। তারা কোন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিলে তা বাস্তবায়ন করতে সরকার বাধ্য। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ঝুকিপূর্ণ হলে তাকে বহিষ্কার করিতে পারিবে। নিরাপত্তা কাউন্সিলের অনুমতি ব্যতিত যুদ্ধ ও জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা যাবে না।
২৫. বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলবৎ হবে। গণতন্ত্র ,ইসলাম , সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার রাষ্ট্রীয় আদর্শ হবে।
২৬. গণতন্ত্র প্রথমে নিজের দলের মধ্যে কায়েম করতে হবে। দলের কেন্দ্র থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকল কমিটি ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ভোটে ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে। দলের সকল কমিটি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হলে, সে দল জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
২৭. দলে শৃংখলা কমিটি প্রত্যেক সদস্যের অন্যায়, অপকর্ম, চুরি, অর্থ আত্মসাৎ, অবিচার ও হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের প্রথমে দলীয় ফোরামে বিচার এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা। দু’পক্ষের বিরোধে দলীয় নিষ্পত্তি না মানলে দেশের বিচারালয়ে বিচারের জন্য সোপর্দ করবে।
২৮. বিপ্লব পূর্ব পর্যন্ত রাজনৈতিক দলীয় নেতাদের, মন্ত্রীদের, আমলাদের ও অসাধু মূল্যবৃদ্ধিকারী, ভেজালকারী ব্যবসায়ীদের কৃত অপরাধ ও ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ, পাচারের বিচার কেউ করেনি। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
২৯. সামরিক ট্রেনিং সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩০. শিক্ষায় নৈতিক শিক্ষা,দেশপ্রেম,সকল জ্ঞান আহরন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামরিক অস্ত্র নির্মাণ, মিসাইল টেকনোলজি ও পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ কৌশল সংযুক্ত করতে হবে।
৩১. প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক। সর্বশেষ আল্লাহর বাণী আসমানী গ্রন্থ কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা প্রত্যেক (প্রথম শ্রেণি হতে মাস্টার্স পর্যন্ত) শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে ।
৩২. ব্লাসফেমী ধরণের আইন করা। বিশেষ করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স:), আল্লাহ (সুব:) ও পবিত্র কোরআনের অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা। কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
লেখক : ইসলামী চিন্তুক ও স্কলার। ফোন : ০১৯১১৩৫৫৮২৫