News update
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     
  • China calls for implementation roadmap for new finance goal     |     
  • New gas reserve found in old well at Sylhet Kailashtila field     |     
  • Revenue earnings shortfall widens in October     |     

ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই কেন নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে দলগুলো?

বিবিসি নিউজ বাংলা রাজনীতি 2025-04-18, 6:57pm

5463636-859a4d639df0c3343f4b9366c130284d1744981027.jpg




নির্বাচন কবে হবে, এই প্রশ্নে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে।

কিন্তু ডিসেম্বর বা জানুয়ারির পরের মাসগুলোতে রমজান, ঈদ কিংবা বর্ষা মৌসুমে নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটা সম্ভব-এই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ দল।

বাংলাদেশে নির্বাচন হয় সাধারণত শীতকালে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি -এই সময়ের মধ্যে। দেশটিতে নির্বাচন একটা উৎসবের মতো। আর সেটা সম্ভব হয়েছে নির্বাচনের উপযোগী আবহাওয়ার কারণে।

শীতে হিমেল হাওয়ায় চায়ের আড্ডা জমে ওঠে, নির্বাচনি মিছিল, ক্যাম্পেইন একটানা চলতে থাকে। প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে থাকেন। সবশেষে ভোটের দিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন সাধারণ মানুষ। গ্রহণযোগ্য সবগুলো নির্বাচনে এমনটাই দেখা গেছে।

কিন্তু গরমকালে নির্বাচন হলে আবহাওয়া অনেকটাই প্রতিকূলে থাকে।

এপ্রিল, মে, জুন, জুলাইয়ে বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরম মিলিয়ে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন নির্বাচনি মিছিল, ক্যাম্পেইন, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া এমনকি নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বপালন -সবকিছুই কঠিন হয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু গরমকালে নির্বাচনের প্রশ্ন কেন আসছে?

এই প্রশ্ন আসছে কারণ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গত বুধবার বিএনপির বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আবারও বিএনপিকে জানিয়েছেন, নির্বাচন হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন -এই সময়ের মধ্যে।

সুতরাং এটা স্পষ্ট নির্বাচন যদি ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির শুরুতে না হয় তাহলে সেটা তীব্র গরমের মধ্যেই অনুষ্ঠিত করতে হবে।

কিন্তু সেটা কতটা বাস্তবসম্মত?

ডিসেম্বর-জানুয়ারির পরে নির্বাচনে সমস্যা কোথায়?

বাংলাদেশে মূলত শীতকালে নির্বাচন হলেও গ্রীষ্মকালে যে নির্বাচন হয়নি তেমনটা নয়। তবে এর উদাহারণ আছে মাত্র দুটি। একটি ১৯৮৬ সালে, আরেকটি ১৯৯৬ সালে।

এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচন হয়েছিলো এর কয়েকমাস আগে ১৫ই ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ভেঙে দেয়ার কারণে।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং সদ্য সাবেক নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনে গ্রীষ্মের মধ্যেও নির্বাচনের নজির আছে। কিন্তু শীতকাল হচ্ছে 'আদর্শ সময়'।

"একটা ইলেকশন করতে গেলে অনেককিছু বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত, স্কুল ফ্রি পাবো কি-না, শিক্ষকরা ফ্রি থাকবেন কি-না। কারণ ভোটগ্রহণের জন্য কেন্দ্র হিসেবে স্কুল এবং কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষক লাগে। ফলে ক্লাস-পরীক্ষার সময় ভোট হলে এটা শিক্ষার জন্য সহজ হবে না।"

"দ্বিতীয়ত, বড় ধরনের কোনো উৎসব আছে কি-না। যেমন, রমজান কিংবা ঈদ থাকলে সেটা বিবেচনা করতে হয়। তৃতীয়ত, আবহাওয়া দেখতে হয়। বৃষ্টিতে হাওর এলাকা তলিয়ে যায়, বন্যা কিংবা বৃষ্টির কারণে প্রচারণা তখন কঠিন। আবার গরমেও ভোটারদের সমস্যা," বলেন জেসমিন টুলী।

তবে তার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বা দলগুলো কী চায়। গরমে যে 'নির্বাচন করাই যাবে না' তেমনটাও নয়।

রাজনৈতিক দল বিশেষত, বিএনপির তরফে ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন পিছিয়ে গ্রীষ্মকালে না নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে সরকারের কাছে।

ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস: রমজান, ঈদ, পরীক্ষার মধ্যে ভোট কীভাবে হবে?

বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। কারণ এরপরে নির্বাচনের যে কথা বলা হয়, বিএনপি সেটাকে মনে করে তাদের ভাষায় 'নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র'।

ফলে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দলটি আবারও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। জবাবে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে ডিসেম্বর থেকে জুন -পুরোনো এই সময়সীমার কথা।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন নেয়ার কোনো যুক্তিই নেই।

"ডিসেম্বরের পরে নিয়ে গেলে তো আবহাওয়া অবশ্যই নির্বাচনের উপযোগী নয়। গরমের মধ্যে কীভাবে প্রচারণা হবে, মানুষ অংশ নেবে কীভাবে? মানুষের মৃত্যুও তো হতে পারে। তাছাড়া ভোটের দিন যদি প্রবল বৃষ্টি হয়, তাহলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে তো যাবে না। এখানে আবহাওয়া একটা বিষয়। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে, আমরা দ্রুত গণতন্ত্রে ফিরতে চাই। সেখানে নির্বাচন কেন পেছাবে?"

তবে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে গেলে আরও কিছু জটিলতা আছে।

কারণ আগামী বছর রমজান শুরু হবে মধ্য ফেব্রুয়ারির পরে। রমজান চলবে মধ্য মার্চ পর্যন্ত। এরপর কয়েকদিন ঈদুল ফিতরের ছুটি।

এপ্রিল মাসে হওয়ার কথা এসএসসি পরীক্ষা। এই সময় নির্বাচন হলে পরীক্ষা পেছাতে হবে। ব্যহত হবে শিক্ষা কার্যক্রম।

এপ্রিলের পর মে মাসে আবার ঈদুল আজহা। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ঈদে কোরবানির হাটকেন্দ্রিক ব্যস্ততা এবং এরপরে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা আছে।

ফলে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত টানা যে দুই থেকে তিন মাসের সময় প্রয়োজন হবে, সেটা বের করা সম্ভব নয়।

এমন বাস্তবতায় নতুন বছরের শুরুতেই ভোট না হলে পরে সেটা আরও বিলম্বিত হয়ে জুনের পরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের হঠাৎ 'রমজান প্রস্তাব'

ডিসেম্বর-জানুয়ারি এমনকি মধ্য ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন না হলে সেটা জুনের পরে চলে যাওয়ার যে আশঙ্কা, সেই বাস্তবতায় জামায়াতে ইসলামী আগামী রমজানের আগে ভোটের প্রস্তাব দিচ্ছে সরকারকে।

আগামী বছর রমজান শুরু হবে ১৭ কিংবা ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে। জামায়াত এখন সেই রমজান শুরুর আগেই ভোট অনুষ্ঠানের কথা বলছে।

গত বুধবার জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচন রমজানের আগেই হওয়া দরকার।

শফিকুর রহমানআরও বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। তার কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন, আমরা সেটা দেখতে চাই।"

"আর আমাদের মত হচ্ছে, এটা রমজানের আগেই শেষ হয়ে যাওয়া দরকার। ওই জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তখন বর্ষা, ঝড়-ঝাপ্টাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে তখন আবার ইলেকশনটা অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।"

নির্বাচনের সময় নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই

বিএনপি ডিসেম্বরে আর জামায়াত রমজান তথা মধ্য ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন চায়।

অন্যদিকে ছাত্রদের আলোচিত দল এনসিপি প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বর থেকে জুন এই সময়সীমাকে সমর্থন করলেও সংস্কার এবং বিচার ছাড়া নির্বাচনের বিরোধী অবস্থানে আছে।

এরমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায় আগামী দুই মাসের মধ্যেই সংস্কারের এজেন্ডা চূড়ান্ত করে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় যেতে।

কিন্তু সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার যে কার্যক্রম, সেখানে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই বলে মনে করছে বিএনপি।

দলটির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "বলা হচ্ছে যে ঐকমত্যের বাইরে কিছু করা যাবে না, ঐকমত্যের মধ্যেই হবে। তো ঐকমত্যের কাজ তো আগামী এক/দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না, সেগুলোর জন্য তো দেরি করার কোনো সুযোগ নাই। তারপর নির্বাচন কমিশন তো রেডি। সুতরাং আপনি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন।"

"প্রত্যেক দলের যে এখানে ভিন্নতা তাকবে সেটা তো স্বাভাবিক। এটাই গণতন্ত্র। আমরা তো বাকশাল করছি না এখানে। মাঝে মাঝে তো আমার কাছে এই প্রক্রিয়াকে একটা বাকশালের মতো প্রক্রিয়া মনে হয়। তো এখানে তো বাকশাল হবে না। যার যার ভিন্ন প্রস্তাব আছে, সেটা নিয়ে তারা জনগনের কাছে যাবে। জনগন ভোটের মাধ্যমে তার মতামত দেবে। কিন্তু এগুলো নিয়ে সময়ক্ষেপণের তো কোনও প্রয়োজন নেই," বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তবে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর এক ব্রিফংয়ে সরকারের আইন উপদেষ্টা অবশ্য জানিয়েছেন, নির্বাচন পেছানোর বা বিলম্ব করার কোনো ইচ্ছা নেই সরকারের।

"বিএনপি বলেছে যে, সংস্কারের ঐক্য যদি হয়ে যায় তাহলে এতো দেরি করার মানে কী? আমরা সেখানে বুঝিয়েছি যে, জুলাই সনদ প্রণীত হয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় আইনগত ও নীতিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মাঝে মাঝে সময় লাগে। যেমন ডিজিটাল সুরক্ষা আইন। এটা আমাদের ২৩ বার সংশোধন করতে হয়েছে, বেশ কয়েকমাস সময় লেগেছে," বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

তিনি এ-ও বলেন, "আমরা বলেছি যে নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না। ... ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের যে সময়সীমা দেয়া আছে, তার মানে এটা না যে আমরা ইচ্ছা করেই দেরি করে মে বা জুন মাসে ইলেকশন করবো তেমনটা না। যদি ডিসেম্বরে সম্ভব হয় তাহলে ডিসেম্বরে (নির্বাচন), না হলে জানুয়ারিতে। মানে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব।"

সরকারের ওপর আস্থা রাখতে বলা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে না হলে সেটা যে রমজান, ঈদ আর গরমের কারণে পরবর্তী মাসগুলোতেও বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে, সেটা স্পষ্ট।

সেক্ষেত্রে জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে লক্ষ্য, সেটা কতটা ঠিক রাখা যাবে- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।