News update
  • Govt decides to withdraw over 10,000 ‘political’ cases     |     
  • Banks can repay depositors from recovered embezzled money: Gov     |     
  • Elon Musc’s Starlink begins operations in Bangladesh     |     
  • Seafood Without Transparency is a Recipe for Disaster     |     
  • Govt Moves to Drop Over 10,000 Political Cases     |     

মেয়র পদে শপথ ইস্যুতে ইশরাক হোসেন-আসিফ মাহমুদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

বিবিসি বাংলা রাজনীতি 2025-05-20, 7:19am

img_20250520_072008-3a2efe26424d786e005181deed44d9b81747704023.png




ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা আন্দোলনের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মেয়র পদপ্রত্যাশী, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

সোমবার নগর ভবনের সামনে "ঢাকাবাসী" ব্যানারে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় আবারো তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয় ভবনটির মূল ফটকে। দাবি না মানলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

দুপুরে এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। যেখানে তিনি দাবি করেন, "যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গাঁয়ের জোরে দাবি আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি এই আন্দোলন চালাচ্ছে"।

এরপরই নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পাল্টা পোস্ট দেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

যেখানে তিনি লেখেন, "অন্তর্বর্তী সরকারের কারো কারো মনে ক্ষমতার লোভ জন্ম নিয়েছে। নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে যারা একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করছে তাদের অবিলম্বে পদত‍্যাগ করতে হবে" বলেও পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

২০২০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটে পরাজিত করেন।

তবে চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন।

পরবর্তীতে গেল ২৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদের পাঠানো একটি লিগ্যাল নোটিশে আলোচিত রায় ও শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়।

নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে সোমবার দুপুরের পর একটি পোস্ট শেয়ার করেন বিএনপি নেতা ও মেয়র পদপ্রত্যাশী ইশরাক হোসেন।

যেখানে তিনি দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশের মধ্যে "ক্ষমতার লোভ" জন্ম নিয়েছে।

নিরপেক্ষতা বজায় না রেখে তারা "একটি দলের প্রতিনিধির" কাজ করেছে অভিযোগ করে সরকার থেকে তাদের পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছেন মি. হোসেন।

"যারা নিরপেক্ষতা শুধু বিসর্জন দিয়েছে-তাই নয়; বরঞ্চ একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের অবিলম্বে পদত‍্যাগ করতে হবে। এরা হাসিনার মতোই বিচারকদের হুমকি দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছে। উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করেছে। আমলাতন্ত্র হাসিনার দোসরদের সাথে নিয়ে লম্বা কুচক্র পরিকল্পনা করছে। একদিন এদের সবার নাম পরিচয় প্রকাশ পাবে," ফেসবুক পেইজে লিখেছেন ইশরাক হোসেন।

এমন একটি সময় ইশরাক হোসেন এমন দাবি জানালেন, যখন তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা ছয় দিন বিক্ষোভ করছেন তার সমর্থকরা।

পোস্টে তিনি লেখেন, "মেয়র ফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় বাক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য"

"এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটার অধিকারের স্বার্থে। সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কি ভূমিকা পালন করবে- তা ক্লিন কাট বুঝিয়ে দিল," বলেন মি. হোসেন।

এর আগে, সোমবার সকাল দশটার দিকে ঢাকার দক্ষিণের মেয়র ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা।

তাদের অভিযোগ, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কারণে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

যেখানে তিনি দাবি করেন, "যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গায়ের জোরে আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি এই আন্দোলন চালাচ্ছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হওয়াসহ জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে"।

তিনি জানিয়েছেন যে, বেশকিছু জটিলতার কারণে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

"প্রথমত, আর্জি সংশোধন অবৈধ মর্মে হাইকোর্টের রায় ভায়োলেট করে নির্বাচন কমিশন ট্রাইবুনাল এই রায় প্রদান করেছে।

দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশগ্রহণ না করায় একপাক্ষিক রায় হয়েছে এবং পরবর্তীতে কমিশন আপিলও করেনি," ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন উপদেষ্টা মি. ভূঁইয়া।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, "নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে "কোনপ্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ" এর কথা বলা হয়েছে। স্পষ্টতই বিতর্কিত রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোন নির্দেশনা না থাকা, লিগ্যাল নোটিশ এবং রিট পিটিশন বিচারাধীন থাকা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা রয়েছে।"

"উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং এসব জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয়"। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন মি. ভূঁইয়া।

একই প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি'র (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও।

"যারা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি, তারাই যদি বিগত অবৈধ নির্বাচন গুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নিজেদের সক্ষমতার অপব্যবহার করে তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় ঐতিহাসিক দায় তৈরি করবে। ইশরাক ভাই সেই দায় সারাজীবনের জন্য বহন করবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে," সোমবার বিকেলে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন মি. আলম।

তিনি লেখেন, ''বিএনপি তাদের জায়গা থেকে অসংখ্য বার বলেছে এবং এটাই সত্য যে বিগত তিনটা জাতীয় নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনগুলো ছিল একপাক্ষিক, প্রশ্নবিদ্ধ এবং অবৈধ। যে নির্বাচন অবৈধ, সেই নির্বাচনের মেয়র আমি কিভাবে হতে চাই? সেটা কিভাবে বৈধ হয়? তাহলে তো সেই নির্বাচনকে আমি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছি।''

''তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে শুধু ইশরাক ভাই কেন, সকল জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, ওয়ার্ড এবং সংসদীয় আসনে সবাইকে তাদের জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত" ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন মি. আলম।

এরপর ২২ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়ে গেজেট প্রকাশ করে।

মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের আগে এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শও চেয়েছিল ইসি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় তাদের মতামত দেয়ার আগে রোববার রাতেই গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষা না করেই গেজেট প্রকাশ করার পরদিন এ নিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, "আমাদের মতামত চাইলেও, মতামত দেওয়ার অপেক্ষা না করেই গেজেট নোটিফিকেশন করেছেন, আমাদের জন্য অপেক্ষা করে নাই। এখানে আমাদের বলার কিছু নাই"।

সে সময় কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, "আদালত থেকে আমাদের কাছে নির্দেশনা ছিল, আমরা সেই নির্দেশনা মেনেই গেজেট প্রকাশ করেছি"।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।

পরবর্তীতে ২৮শে এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদের পাঠানো একটি লিগ্যাল নোটিশে আলোচিত রায় ও শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করে নির্বাচন কমিশনের ২৭শে এপ্রিলের সংশোধিত গেজেট ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় চ্যালেঞ্জ করেন।

রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা এবং নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ১৪ই মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। দাবি আদায়ে তারা নগর ভবনের সামনে 'ব্লকেড' কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

সোমবার টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তার সমর্থকরা।

সকাল দশটার দিকে নগর ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে সড়কে অবস্থান নেন তারা। এতে সড়কটিতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

তবে দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

"এখন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি। এরপরও যদি দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে ঢাকাবাসীকে সাথে করে নিয়ে ঢাকা শহর অচল করে দেওয়া হবে," বলছিলেন একজন বিক্ষোভকারী।

শপথ নিলে মেয়াদ কতদিন?

ভোটের এক মাসের মাথায় ২০২০ সালের তেসরা মার্চ নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে মামলা করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৯শে অগাস্ট ঢাকার দুই সিটিসহ সারা দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

২৭শে মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রেক্ষিতে গেজেটে ইসি শেখ ফজলে নূর তাপসের পরিবর্তে ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

সেই হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। যে পদে দায়িত্ব পালন করছেন একজন প্রশাসক।

শূন্য পদের বিপরীতে উপ-নির্বাচন না দিয়ে কাউকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে ইসির গেজেটের পর প্রশ্ন উঠেছে এই পদে ইশরাক হোসেন কতদিন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

আইন অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদের মেয়াদ ছিল গত ১৫ই মে পর্যন্ত। ইসির গেজেটের পর এই পদে শপথ নিলে তার মেয়াদকাল কতদিন হবে সেটি নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।