আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিতে আগামীকাল (রোববার) ২৮ সেপ্টেম্বর গাজার উদ্দেশে ইতালি রওনা দিচ্ছেন।
রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম গাজাতে ইনফরমেশন/মিডিয়া ব্ল্যাকআউট ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে আয়োজিত ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়লিশন কর্মসূচীর লক্ষ্যে ও ফিলিস্তিনের সংগ্রামরত জনগণের প্রতি তার সংহতি বার্তা উপস্থাপন করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ কোয়ালিশনে যোগ দিতে গাজার উদ্দেশে ইতালি রওনা দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নৃবিজ্ঞানী, লেখক ও দৃকের পরিচালক রেহনুমা আহমেদ, দৃকের জেনারেল ম্যানেজার ও কিউরেটর এএসএম রেজাউর রহমান, দৃকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. কামাল হোসেন এবং সাংবাদিক, গবেষক ও দৃকের পরিচালক সায়দিয়া গুলরুখ।
সায়দিয়া গুলরুখ বলেন, ‘ফিলিস্তিন মুক্তির সংগ্রামের এক ক্রান্তিলগ্নে আমরা আজকে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন যে ৭৭ বছরের ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের নৃশংসতম অধ্যায় শুরু হয়েছে দুই বছর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখ । সারা পৃথিবীর মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে গাজাকে বহুকাল ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজায় মানুষ নির্বিচার গণহত্যার শিকার, চলছে ইজরায়েল-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অবরোধ ভাঙ্গার লক্ষ্যে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে ৩০ অগাস্ট ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্ত থেকে প্রায় ৫০০জন নাগরিক গাজার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। ফ্লোটিলাতে ইতিমধ্যে দুইবার আক্রমণ করেছে ইজরাইল, এই মুহূর্তে নৌবহরটি গাজার পথে ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিপজ্জনক জোনে প্রবেশ করেছে। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম গ্লোবাল মিডিয়া ফ্লোটিলাতে যোগ দেবার জন্য আগামীকাল ইতালি হয়ে গাজার উদ্দেশ্য রওনা দেবেন।’
গ্লোবাল মিডিয়া ফ্লোটিলাতে যোগদান প্রসঙ্গে শহিদুল আলম বলেন, ‘এই মুহূর্তেই গনহত্যা চলছে। ইসরাইল এবং আমেরিকা একসাথে ফিলিস্তিনে, গাজায় মানুষকে খুন করছে। তার সাথে পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশ যুক্ত, তারাও সহযোগিতা করছে, এবং তারাও এতে অংশীদার। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক মানুষ – সারা পৃথিবীর মানুষ এর প্রতিবাদও করছে। এবং এই প্রতিবাদের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে আমি আগামীকাল মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিতে যাচ্ছি। আমি যাচ্ছি বাংলাদেশের প্রথম একজন, কিন্তু আমি মনে করি বাংলাদেশের সকল মানুষের ভালবাসা আমি সাথে নিয়ে যাচ্ছি। এবং এই সংগ্রামে শুধু আমাদের থাকতে হবে না, এতে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে মানবজাতি পরাজিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতদূর জানি এর আগে কোনো বাংলাদেশি এই ফ্লোটিলায় যান নি। এই মিডিয়া ফ্লোটিলাতে কারা কারা আছে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আমার জানামতে, সম্ভবত এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করা হচ্ছে।’
শহিদুল আলম আরও জানান, ‘দৃক বহুবছর ধরেই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে বাংলাদেশ থেকে সংহতি বজায় রেখেছে। ফিলিস্তিনের ওপর ক্রমাগত আক্রমণকে আমাদের ওপরেই আক্রমন মনে করেছি। একটা সমষ্টিগত আন্দোলনের জায়গা থেকে আমরা আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ফিলিস্তিন ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে অ্যাক্টিভিজম জারি রেখেছি।’
রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘ইসরাইলের গণহত্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সম্ভব হতো না। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ-সমর্থিত গণহত্যার বিরুদ্ধে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রতীক। একমাত্র ইয়েমেন বাদে, আরব দেশের নেতারা মেরুদণ্ডহীন। ফ্লোটিলাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ থাকছে, এতে আমরা গর্বিত।’