
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। গুলিবর্ষণের শিকার হয়ে এখন হাসপাতালে ‘লাইফ সাপোর্টে’ রয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন হাদি। এবার তার ওপর গুলির ঘটনা আবারও তাকে ঘিরে নতুন করে আলোচনায় ব্যস্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন শরীফ ওসমান বিন হাদি। হাদির জন্ম ঝালকাঠির নলছিটিতে। তার বাবা ছিলেন মাদরাসার শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদরাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু, পরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে হাদি সবার ছোট।
ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টার সাইফুরস–এ একসময় শিক্ষকতা করেন হাদি। সর্বশেষ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অব স্কলার্স নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান, স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ—একে সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত নভেম্বর মাসে হাদি নিজের ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাকে ফোন এবং মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, তার বাড়িতে আগুন দেওয়া ও তার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকরা তাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখছে। ‘জীবননাশের আশঙ্কা’ সত্ত্বেও তিনি ‘ইনসাফের লড়াই’ থেকে পিছিয়ে যাবেন না।
শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। পরে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে স্থানান্তর করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।
এদিকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওসমান হাদির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, মাথায় গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বুলেট হাদির মস্তিষ্কের কাণ্ড বা ব্রেন স্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচিত। আগামী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ অবস্থায় কোনো ধরনের নতুন ইন্টারভেনশন করা হবে না।