News update
  • Dhaka-Beijing partnership to advance peace, prosperity: Yunus     |     
  • Banks in Bangladesh slash CSR; spending hits 10-year low     |     
  • Law approved to equip EC to punish neglect of polls duty     |     
  • Expats must register thru mobile app to vote in BD polls     |     
  • US Faces Pressure as UN Votes on Gaza Ceasefire     |     

কিংবদন্তী বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১৪তম প্রয়াণ দিবস আজ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক শিল্প-কারুশিল্প 2023-09-12, 2:47pm

image-106040-1694500875-14555df38acdc6b414e4bfc16ec625701694508474.jpg




একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তী বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১৪তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন।

দিবসটি উপলক্ষে শাহ আবদুল করিম পরিষদের আয়োজনে বাউল সম্রাটের নিজ বাড়ি দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে দোয়া ও করিম গীতি আসরের আয়োজন করা হয়েছে। দিনব্যাপি এই অনুষ্ঠানে সকলের দোয়া ও উপস্থিতি কামনা করেছেন বাউলের একমাত্র সন্তান শাহ নুরজালাল।

মানব প্রেমের মধ্য দিয়ে জগৎ সংসারকে আলোকিত আর সমাজের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তির স্বাদ দিতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। আবদুল করিমের গানে সাম্যবাদী ধারার সুর ফুটে উঠেছে। নির্যাতিত মানুষের শোকগাথা, শোষণ-বঞ্চনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, শাসিত ও শোষক গোষ্ঠীর কথাই বেশি রয়েছে। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান এই কিংবদন্তি বাউল। 

কালজয়ী বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্ম ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের হতদরিদ্র গৃহস্থ পরিবারে। গ্রামের অন্যদশটা পরিবারের মতো ছিল না তার পরিবার। সংসারের অভাব-অনটন, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থার মধ্যে বেড়ে ওঠেন করিম। পিতা ইব্রাহিম আলী ছিলেন কৃষক আর মাতা নাইওরজান বিবি ছিলেন সাদামাটা গ্রাম্য বধূ। ইব্রাহিম আলীর ছয় সন্তানের মধ্যে করিম ছিলেন একমাত্র ছেলে, বাকি পাঁচজন মেয়ে।

পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি আব্দুল করিমের। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও করিম ছিলেন স্বশিক্ষিত। প্রতিদিনের জীবনের জাগতিক সুখ দুঃখ প্রেম ভালোবাসাকে আপন মহিমায় তুলে ধরেছেন তার বাউল গানে। গানে গানে স্মরণ করেছেন স্রষ্টা ও সৃষ্টিকুলকে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন স্বাধীকার আন্দোলনে বাউল সম্রাটের গান বাঙালীকে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। মরমী গান আর হৃদয় ছোয়া সুর তাকে হাওরের রাখাল বালক থেকে বাউল স¤্রাটের আসনে আসীন করেছে। 

শাহ আব্দুল করিমের জনপিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে'’, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না, রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না, তুমি রাখ কিবা মার ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুুরপংখী নাও, তোমরা কুঞ্জ সাজাও গোসহ বহু গান রচনা করেছেন। 

বাউল শাহ আব্দুল করিমের এ পর্যন্ত ৭টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে তার রচনাসমগ্র (অমনিবাস)-এর মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়াও সুমনকুমার দাশ সম্পাদিত শাহ আব্দুল করিম স্মারকগ্রন্থ (অন্বেষা প্রকাশন) তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। এর আগে-পরে শাহ আব্দুল করিমকে নিয়ে সুমনকুমার দাশের ‘বাংলা মায়ের ছেলে : শাহ আবদুল করিম জীবনী’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘সাক্ষাৎকথায় শাহ আব্দুল করিম’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘শাহ আবদুল করিম’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম’ (উৎস প্রকাশন), ‘গণগীতিকার শাহ আবুল করিম’ (উৎস প্রকাশন) প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয় সুমনকুমার দশের ‘শাহ আব্দুল করিম : জীবন ও গান’ বইটি। বইটিতে করিমের নির্বাচিত বেশ কিছু গানও সংকলিত হয়েছে। শাহ আব্দুল করিমের জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস সাইমন জাকারিয়া রচিত ‘কূলহারা কলঙ্কিনী’ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালে। বইয়ের তালিকা আফতাব সঙ্গীত (১৩৫৫ বাংলা; আনুমানিক ১৯৪৮), গণসঙ্গীত (১৯৫৭) কালনীর ঢেউ (১৩৮৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন; ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর), ধলমেলা (১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন; ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি), ভাটির চিঠি (১১ বৈশাখ ১৪০৫; ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮), কালনীর কূলে (নভেম্বর ২০০১), শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র (সংকলন ও গ্রন্থন: শুভেন্দু ইমাম, ২২ মে ২০০৯) বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বাংলা একাডেমি তার দশটি গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ভাটির পুরুষ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এছাড়াও সুবচন নাট্য সংসদ তাকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা মহাজনের নাও নাটকের ৮৮টি প্রদর্শনী করেছে। তাকে একুশে পদক (২০০১) কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক (২০০০) রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০) লেবাক এ্যাওয়ার্ড (২০০৩) মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০০৪) সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা (২০০৫) বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬) খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা (২০০৮) হাতিল এ্যাওয়ার্ড (২০০৯) এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা (২০০৯) প্রদান করা হয়েছে। বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। দ্বিতীয় সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে এই বাউল সম্রাটকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। ২০০০ সালে কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক পান। 

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে ‘জীবন্ত কিংবদন্তী : বাউল শাহ আবদুল করিম’ নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২ টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে।

স্বল্পশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূবাদিত হয়েছে। শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। সাম্প্রতিককালে এ সময়ের বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কিংবদন্তী বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পর  দিরাই উপজেলার উজানদল গ্রামের নিজ বসত বাড়ির আঙ্গীনায় বাউলকে চির সমাহিত করা হয়। বাসস