News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কি পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-02-06, 11:25am

akjhakduioa-7ae10f0a09fc7f171fa49c53f9f318131707197126.jpg




মিয়ানমারের জান্তা সরকার সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর ধারণা করা হচ্ছে যে, এই মুহুর্তে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পার করছে তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই উত্তেজনা চলতে থাকলেও এতোটা কোনঠাসা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে এর আগে আর পড়তে হয়নি।

গত অক্টোবরে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক টহল চৌকি, অস্ত্রাগার ও বেশ কিছু শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিদ্রোহীদের হাতে।

সবশেষ ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের ৯৫জন সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের অনেকেই আহত।

শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী আরো দুটি দেশ চীন ও ভারতেও মিয়ানমারের সেনারা এর আগে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

এ ধরনের জয় বিদ্রোহী অন্য গোষ্ঠীগুলোকেও সামরিক বাহিনীর উপর আক্রমণে উৎসাহিত করেছে।

বিদ্রোহীদের শক্তি কতটা?

ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরোধী সশস্ত্র দলে জাতিগত ২০টি গোষ্ঠীর এক লাখ ৩৫ হাজার সদস্য, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি এর আওতায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের ৬৫ হাজার সদস্য, এবং সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্ট মুভমেন্ট-এর অধীনে প্রায় দুই লাখের মতো কর্মী রয়েছে।

এনইউজি-র আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক উপমন্ত্রী ডেভিড গাম অং এর আগে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, "স্বায়ত্ব শাসনের জন্য লড়ছে এমন কয়েকটি জাতিগত গোষ্ঠীর সাথে ২০২২ সালে জোট গঠন করেছে এনইউজি। এদের এর প্রায় দুই লাখ সেনার একটি বাহিনী রয়েছে যা আরো বাড়তে থাকবে। এটি জেনারেল মিন অং লাইংয়ের বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট।"

অন্য দিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে প্রায় চার লাখ সেনা রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট ফর পিস-এর তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে প্রায় দেড় লাখের মতো সেনা রয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বা 'কমব্যাট রেডি' ৭০ হাজার সেনাও অন্তর্ভুক্ত।

মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের একটি দল যারা 'স্পেশাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার' নামে পরিচিত, তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জান্তা সরকারের “পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ” রয়েছে মাত্র ১৭% ভূখণ্ডের উপর, ২৩% শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের দখলে রয়েছে ৫২ শতাংশের মতো ভূখণ্ড। তবে এ তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক আয় থু সান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আলোচিত 'অপারেশন ১০২৭' শুরুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত তারা দেশটির ৩০টি শহরের দখল নিয়েছে।

আর সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত তিন বছরে দেশের অনেক স্থানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বর্তমানে সামরিক বাহিনী এমন সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে যা এর আগে মিয়ানমারের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।

সামরিক বাহিনীর মধ্যেও নজিরবিহীন আত্মসমর্পণের ঘটনা দেখা গেছে। সামরিক বাহিনীর নেতারা সামরিক পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছেন।

মিয়ানমারের থিংকট্যাঙ্ক 'ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি এন্ড পলিসি' বা আইএসপি-র চালানো জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মোট ভূখণ্ডের ৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে সামরিক কাউন্সিল।

এখন কেন শক্তিশালী বিদ্রোহীরা?

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট অব পিস তাদের মূল্যায়নে বলছে, মিয়ানমারে বর্তমানে কর্তৃত্ববাদ বিরোধী যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে তা এখনও পর্যন্ত সফল বলেই মনে হচ্ছে।

দেশটিতে এর আগের গণতন্ত্র-পন্থী আন্দোলনের তুলনায় বর্তমানে চলমান প্রতিরোধ আন্দোলন জাতীয় অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে এবং এটি বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে যারা জান্তা সরকারকে উৎখাতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি।

প্রতিরোধ আন্দোলন সফল করার জন্য এটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং কাঠামোগত বাধা ও তেমন কোনও আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়াই এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সংস্থাটি বলছে, টানা দুই বছর ধরে ছোট ছোট সফলতা পাওয়ার পর এই আন্দোলন ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে সুসংগঠিতভাবে দেশ জুড়ে সামরিক অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে, যা এখন আসলেই জান্তা সরকারের শাসনকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

গত অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি জান্তা সেনা নিহত হয়েছে বা আটক হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রয়েছেন। প্রতিরোধ বাহিনী ৩০টির বেশি শহর দখলে নিয়েছে।

সব মিলিয়ে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখনো পর্যন্ত জান্তা সরকার ত্রিশ হাজারের মতো সেনা হারিয়েছে। যেখানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে সেনার সংখ্যা মাত্র দেড় লাখ।

সামরিক বাহিনী প্রতিদিনই পরাজয়ের মুখে পড়ছে এবং তারা দখল হয়ে যাওয়া ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এমন অবস্থায় সামরিক বাহিনী দ্রুত জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে।

বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণকে আরো বেশি উস্কে দেয়া ছাড়া কোন কাজে আসছে না।

অলটারনেটিভ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন বার্মা নামে একটি সংস্থার সমন্বয়ক ডেবি স্টথার্ড বিবিসি বাংলাকে বলেন, ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের সময়ও দেশটির অনেক অঞ্চল বিদ্রোহীদের দখলে ছিল। যাদেরকে বলা হতো জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

"এদের সাথে পরে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স, যারা মূলত নতুন গঠিত শহরভিত্তিক গোষ্ঠী যারা জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিতে প্রস্তুত ছিল, তারাও যোগ দেয়। কারণ বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে জান্তা সরকারের অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল", জানাচ্ছেন তিনি।

নাগরিকরা কী ভাবছেন?

গত তিন বছরে দেশটির ২৬ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হতে বাধ্য হয়েছেন।

দেশান্তরে থাকা মিয়ানমারের সাবেক রাজনীতিবিদদের সংগঠন অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে এখনও পর্যন্ত ৪৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ হাজার মানুষকে।

অন্য দিকে সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৬৬০০জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের অর্থনীতিও টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। গত বছর অন্তত তিন দফায় জ্বালানি সংকট হয়েছে এবং পণ্যের দামও তিন দফায় বেড়েছে।

অভ্যুত্থানের আগের তুলনায় বর্তমানে গ্যাসোলিনের দাম বেড়ে কমপক্ষে তিনগুণ হয়েছে। ৭০০ কিয়াত প্রতি লিটারের গ্যাসোলিনের বর্তমান দাম ২৮০০ কিয়াত প্রতি লিটার।

পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমারই বর্তমানে একমাত্র দেশ যেখানে এখনও কোভিডকালীন বিধিনিষেধ চালু আছে।

বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসের সাংবাদিক আয় থু সান বলেন, এমন অবস্থায় সামরিক বাহিনীর অনেক সমর্থকের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সামরিক বাহিনী কিছু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরও যদি বর্তমান সমস্যার সমাধানে নমনীয় হয়, তাহলে তারা সেনাপ্রধানকে সমর্থন দেবে বলে মনে হচ্ছে না।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরাবতী পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর বাজেটে সামরিক ব্যয় বাড়লেও গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণের কারণে জান্তা সরকার কয়েক ডজন শহর, কয়েকশ টহল চৌকি, পুরো একটি অস্ত্রাগারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

এমন পরাজয়ের কারণে সামরিক শাসনের কট্টর সমর্থকরাও সেনাপ্রধান মিন অং লাইংয়ের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। কারণ এসব পরাজয় সামরিক বাহিনীর জন্য লজ্জাজনক হিসেবে মনে করছে তারা।

গত ৩১শে জানুয়ারি মিয়ানমারে পঞ্চম দফায় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর পর স্থানীয় বাসিন্দারা সেনাপ্রধানকে বার্মিজ ভাষায় ‘টো’ বা ‘নবায়ন’ নামে ডাকতে শুরু করেছে।

কারণ মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটিতে সাময়িকভাবে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায় এবং পরে সর্বোচ্চ দুই বার ছয় মাস করে মেয়াদ বাড়ানো যায়।

মিন অং লাইং এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে পঞ্চমবারের মতো জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করে প্রতিশ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জরুরি অবস্থা বাড়ানো দরকার।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে?

মিয়ানমার ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যালায়েন্স-এমএনডিএএ, আরাকান আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি যারা যৌথভাবে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত, তারা জানুয়ারিতে উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্য থেকে সামরিক বাহিনীকে বিতাড়িত করেছে।

ধারণা করা হয়েছিল যে, এর পাল্টা অভিযান চালানো হবে। কিন্তু সেটি এখনো হয়নি।

এই রাজ্যে বেশ কয়েকজন জেনারেল-সহ সেনারা আত্মসমর্পণ করেছে এবং বর্তমানে একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি চলছে।

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর জন্য এটা শুধু এখন একটি পরাজয় নয়, বরং এটা ইঙ্গিত যে, জনপ্রিয়তা হারিয়ে সামরিক বাহিনীর দিন ফুরিয়ে আসছে।

থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক থিটিনান পংসুধিরাক বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, “মিয়ানমারের এই গৃহযুদ্ধ মিয়ানমারের জান্তা সরকারের জন্য জেতা অসম্ভব হয়ে পড়েছে এবং এতে পরাজয় এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।”

তিনি বলেন, “সংখ্যার দিক থেকে দেখতে গেলেও এটা বোঝা যায়। তারা প্রতিদিন সেনা হারাচ্ছে, কিন্তু নতুন সেনা ভর্তি হচ্ছে না, শক্তিবৃদ্ধি করা হচ্ছে না, রসদ পুনঃসরবরাহ করা হচ্ছে না, কোনও সেনা আর টহল দিতেও ইচ্ছুক নয় এবং প্রতিনিয়ত তারা আক্রমণের মুখে পড়ছে।”

যুদ্ধে টিকে থাকতে তারা বিমান হামলার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনি সেনাবাহিনীর পরাজয় সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না। কারণ শান রাজ্যে সমস্যার মুখে পড়লেও অন্যান্য স্থানে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সামরিক বাহিনী।

মানবাধিকার সংস্থা ফ্রি বার্মা রেঞ্জার্স গত সপ্তাহে কারেন রাজ্যের যে চিত্র তুলে এনেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, বিদ্রোহীদের সেখানে সামরিক বাহিনীর কাছে মূল্য দিতে হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে সেখানে সাতজন নিহত হয়েছে এবং ৪০ জন বিদ্রোহী আহত হয়েছে।

মিয়ানমারের একটি ক্রাইসিস গ্রুপের অ্যাডভাইজার রিচার্ড হরসি বলেন, “মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা জান্তা সরকারের জন্য পরাজয় অনিবার্য নয়। তবে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।”

“তারা জানে যে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র পথ হচ্ছে লড়াই চালিয়ে যাওয়া। আর তারা সেটাই করবে। তাই পরাজয় অবশ্যম্ভাবী নয়। তবে এটি গত বেশ কয়েক দশকের তুলনায় এখন কিছুটা বেশি সম্ভাবনাময় বলে মনে হচ্ছে।”

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব:) এমদাদুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে গেছে ভাবলে ভুল হবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে যদি সিত্ত্বে বা নেপিদোতে বা রেঙ্গুনের আশেপাশে বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ হতো তাহলে আশঙ্কা করা যেতো যে তারা দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু সেটি দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডিফেন্সের সাথে আরাকান আর্মির তেমন কোন যোগসূত্র নাই। তাদের যোগসূত্র আছে কাচিন ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মি, শান, তাং বা ওয়া আর্মির সাথে। এরা আবার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সাথে তেমনভাবে সংশ্লিষ্ট নয়।

বরং বর্তমানে নর্দান অ্যালায়েন্স বা ফ্রেন্ডশিপ অ্যালায়েন্স চীনের আশির্বাদপুষ্ট। এখানে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী আবার চীনের আশির্বাদপুষ্ট। বরং এটা চীনের একটি সুনিপুন কৌশল বলে মনে করেন তিনি। আরাকানে ভূ-রাজনৈতিক কৌশল ও ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ক বিপুল স্বার্থ রয়েছে চীন ও ভারতের। সেটার উপর পারস্পরিক আঘাত হানার প্রচেষ্টা থেকে এই যুদ্ধ চলছে বলে তিনি মনে করেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ভূমিকা পালন করছে?

মিয়ানমারের চলমান উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা প্রতিবেশীসহ আঞ্চলিক হুমকি সৃষ্টি করলেও প্রতিবেশী দেশগুলো এখনো কোনও ধরণের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসেনি।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু নতুন থাই সরকার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে তার ঐতিহ্যগত সম্পর্ক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে যার কারণে এই এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে আসছে মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য।

যুদ্ধক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অস্বাভাবিক পরাজয় এবং শক্তিশালী প্রতিরোধ বাহিনীর সামনে টিকতে না পেরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের কারণে এ নিয়ে কিছুটা কঠোর হয়েছে ভারত। সম্প্রতি তারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর বিকল্প নিয়েও চিন্তা করছে।

মিয়ানমারের সাথে ভারতের ১৬৪৩ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। একই সাথে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন ভারত সরকার মিয়ানমারের সাথে সই করা ছয় বছর মেয়াদী উন্মুক্ত চলাচল বিষয়ক একটি চুক্তিও বাতিল করার বিষয়ে ভাবছে।

এই চুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমার ও ভারতের বাসিন্দারা কোনও ভিসা ছাড়াই পরস্পরের সীমানার ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে চলাচল করতে পারে।

চীনের সাথে জান্তা সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিও আবার পুনর্বিবেচনার মুখে পড়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জেনারেলদের প্রশ্রয়ে এবং চীনের নাগরিকদের টার্গেট করে পরিচালিত প্রতারণা চক্রকে উৎখাতের বিষয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিশেষ করে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সকে সমর্থন দিয়েছে বেইজিং।

এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী চীন-মিয়ানমার সীমান্তের শান রাজ্যে থাকা কোকাং বর্ডার গার্ড ফোর্স, যারা ওই এলাকায় ২০০টির মতো প্রতারক সিন্ডিকেট পরিচালনার সাথে যুক্ত, তাদেরকে পরাস্ত করেছে।

এই পরিবর্তন দেশ জুড়ে জান্তা বাহিনীর উপর অন্য জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সর্বাত্মক হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যাতে করে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চৌকি দখলে নিয়ে প্রথমবারের মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের প্রতিরোধ লড়াইকে শহরের গন্ডি পর্যন্ত নিয়ে আসে।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। বিবিসি নিউজ