News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

পশ্চিমবঙ্গে নারীদের যৌন হেনস্থার অভিযোগ কি ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচেষ্টা?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-02-17, 9:24am

oiausdiaod-2ba70ac95528f602c6f0a69e651717ed1708140326.jpg




পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করছে সুন্দরবন অঞ্চলের দ্বীপ এলাকা সন্দেশখালিতে একাধিক নারী তাদের ওপরে যৌন নির্যাতনের যে অভিযোগ তুলেছেন, সেই ঘটনাকে ধর্মীয় মেরুকরণের জন্য ব্যবহার করছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।

সন্দেশখালির স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শাহজাহান শেখ ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সেখানকার অনেক নারী।

মি. শাহজাহান ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠছে যে তারা জবরদস্তি করে গ্রামের মানুষদের চাষের জমি দখল করে নিত। মি. শাহজাহান শেখ জানুয়ারি মাসের গোড়া থেকে আলোচনায় উঠে আসেন।

জানুয়ারির গোড়ার দিকে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কথিত রেশন দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে মি. শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যায়। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির সদস্যদের ব্যাপক মারধর করে তাড়িয়ে দেয় মি. শাহজাহানের দলবল। বাড়ি থেকে পালিয়ে যান মি. শাহজাহান।

এরপরে হঠাৎ করেই সপ্তাহ খানেক আগে একদল নারী মি. শাহজাহানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

যদিও কোন নারী মি. শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেননি বলে জানাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ।

ওই ঘটনা নিয়ে বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করছে বলে শুক্রবার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির নেতা-নেত্রীরা

এর আগে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও বিধানসভায় মন্তব্য করেছিলেন যে ওই সন্দেশখালি এলাকায় হিন্দু পুণরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের সংগঠন আছে।

তবে আরএসএস বলছে ওই এলাকায় যদি তাদের জোরদার সংগঠন থাকত তাহলে এই ‘অমানবিক কাজ’ হতই না।

মিম তৈরি করে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ

ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের আনুষ্ঠানিক এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি মিম পোস্ট করেছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে মিল আছে, এবং বাঙালী হিন্দুদের অনেকের কাছে সম্মাননীয় ও রামকৃষ্ণ পত্নী সারদা দেবীর খুবই পরিচিত একটি ছবির আদলে এক নারীর দুটি ছবি রয়েছে।প্রথম ছবিটিতে লেখা হয়েছে আমি মদনেরও মা হাকিমেরও মা। তার নিচে বড় করে লাল রঙে লেখা ‘মিথ্যা’।

একই মিমের দ্বিতীয় ছবিটিতে লেখা হয়েছে : “কিন্তু ভোটের জন্য আমি অন্য দিকে তাকাই, যখন মদনের স্ত্রী হাকিম দ্বারা ধর্ষিত হয়।“ এর নিচে বড় করে লাল দিয়ে লেখা হয়েছে ‘সত্যি’।

ঘটনাচক্রে মদন মিত্র এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম তৃণমূল কংগ্রেসের অতি পরিচিত নেতা।

আর এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে ‘সারদা মা’এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মদন মিত্র।

তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলছিলেন, “বিজেপি কতটা নীচে নামতে পারে ধর্মের মেরুকরণ করতে সেটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।

“মা সারদা দেবীকে নিয়ে যে টুইট করেছে, তা আমাদের অবাক করে দিয়েছে। মা সারদাকে নিয়ে সঙ্গে আমাদের নেতাদের নাম নিয়ে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, এসব আর কতদিন চলবে? নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মা সারদাকেও তারা ছাড়বে না? ছি: ছি:, ধিক্কার জানাবার ভাষা নেই,” বলছিলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

সন্দেশখালি এলাকার নারী-পুরুষদের একাংশ হঠাৎই গত সপ্তাহের শেষ দিকে লাঠি সোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শাহজাহান শেখ আর তার কয়েকজন সঙ্গীর বিরুদ্ধে। তারা বলছেন শাহজাহান শেখ ও তার দলবল নিয়মিতভাবে যৌন নির্যাতন চালিয়েছে এলাকার নারীদের ওপরে, চাষের জমি দখল করে নিয়েছে।

মি. শেখ অবশ্য জানুয়ারি মাসের গোড়ায় তার বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তল্লাশির সময় থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।

পুলিশ বলছে তাদের কাছে কেউ যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের অভিযোগ জানান নি।

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন ওই অঞ্চলে তদন্তে গিয়েও কোনও যৌন নির্যাতনের ঘটনা খুঁজে পান নি বলে জানিয়েছেন।

তবে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে ওই এলাকার কয়েকজন নারী পরিচয় গোপন করে জানিয়েছেন কীভাবে যৌন নির্যাতন চালাতেন শাহজাহান শেখ ও তার সঙ্গীরা।

“ওরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেত মাঝ রাতে। কারও শরীর খারাপ থাকলেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কাজ করাতো,” জানিয়েছেন একজন নারী।

আরেক জন নারী এএনআইকে বলেছেন, “আমরা কি সম্মান ফিরে পাব? আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে শুনতে পেতাম মাঝরাতে তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে সকালবেলা ফেরত দিয়ে যেত। রাত বারোটায় নাকি মিটিং ডাকত। আমাকে অবশ্য ডেকে নিয়ে যায় নি। কিন্তু পার্টি অফিস পরিষ্কার করা, স্কুল পরিষ্কার করানোর কাজ করাতো।“

নারীদের মারধর করে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে শাহজাহান শেখের দল, এমন অভিযোগও করেছেন সন্দেশখালির ওই নারীরা।

একজন নারী এএনআইকে বলেছেন, “ধর্ষণের প্রমাণ দিতে আমাদের কাছে মেডিক্যাল রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। গ্রামের নারীরা কী করে এগিয়ে এসে বলবে যে তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে? আমি ধর্ষিতা হই নি, কিন্তু অন্য নারীদের সঙ্গে এসব করা হয়েছে।“

আবার জোর করে চাষের জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে বলেও অনেক নারী পুরুষ অভিযোগ করেছেন।

ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে শাহজাহান শেখের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য আসেনি।

আরএসএস যোগ

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস এই নারীদের দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তুলিয়ে বিক্ষোভ সংগঠিত করছে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

তিনি বিধানসভায় বলেছেন, “ওই এলাকায় আরএসএসের সংগঠন আছে। ওখানে সাত-আট বছর আগে দাঙ্গাও হয়েছিল। ওই জায়গাটা দাঙ্গার জন্য সংবেদনশীল। সরস্বতী পুজোর দিন আমরা কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলিয়েছি না হলে অন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল"।

সন্দেশখালির যে অঞ্চলে নারীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, সেখানে আরএসএসের সংগঠন বেশ জোরদার, এমনটাই জানাচ্ছেন অন্তত তিনজন স্থানীয় সাংবাদিক।

তবে মুখ্যমন্ত্রী গোটা ঘটনার পিছনে যে আরএসএস যোগ থাকার কথা বলছেন, সেই ব্যাপারে আরএসএসের মুখপাত্র ড. জিষ্ণু বসু পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “ওখানে যদি সঙ্ঘের খুব শক্তিশালী সংগঠন থাকত তাহলে কী এই অমানবিক কাজ করতে পারত?

“যে ঘটনার বর্ণনা উঠে আসছে, সেটা কোনও মানুষের সমাজে হওয়া উচিত?কোনও সভ্য সমাজে এরকম ঘটনা ঘটে? এই নারীরা নিজেদের সম্মান, পরিবারের সম্মান বিসর্জন দিয়ে যেসব ঘটনার কথা বলছেন আজকে, সেই ঘটনা যে সত্যি, সেটা তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও বলছে,” বলছিলেন ড. বসু।

তিনি অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর তোলা অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার, অথবা স্বীকার কোনওটাই করেন নি।

শুক্রবার সকালে সন্দেশখালির ঘটনা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ ছয় সদস্যের বিজেপির প্রতিনিধি দল। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি আছে, এই বলে বিজেপির প্রতিনিধি দলটিকে এলাকায় ঢুকতেই দেয় নি পুলিশ।

সেখানে ঘণ্টা দুয়েক ধর্না দেওয়ার পরে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, চার সংসদ সদস্য সহ বিজেপির প্রতিনিধি দলটি কলকাতায় ফিরে যায়। তারা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখাও করেন।

বিজেপির প্রতিনিধি দলটিকে সন্দেশখালির অনেকটা আগে আটকিয়ে দেওয়ার পরে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীও সন্দেশখালিতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাকে এবং কংগ্রেস কর্মীদেরও আটকিয়ে দেয় পুলিশ। বিবিসি বাংলা