News update
  • One detained with 90,000 undeclared Dirham at Ctg airport     |     
  • Severe heatwave in Khulna      |     
  • US unveils new Patriot missiles for Ukraine in $6 bn aid package     |     
  • Son kills mother in Chandpur for 'refusing to get him married'     |     
  • Dhaka’s air quality sixth worst in the world Saturday morning     |     

বাল্টিমোরে ভেঙে পড়া সেতু আর ধাক্কা মারা জাহাজটি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-03-28, 8:11am

ajhdjkajd-5b78c4ea14dad495a21de427fe9c06b21711592034.png




যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরের কাছে মঙ্গলবার ভোরে কন্টেইনারবাহী একটি জাহাজ ফ্রান্সিস স্কট কি সেতুতে আঘাত করলে সেতুটি নদীতে ভেঙ্গে পড়ে। এ ঘটনায় ওই সময় অনেকগুলো যানবাহন পাটাপস্কো নদীতে পড়ে যায়।

এর কয়েক ঘণ্টা পর কোস্ট গার্ড ছয় জনের মৃত্যু হতে পারে বলে জানায়।

মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং এরপর থেকে বাল্টিমোর বন্দর জাহাজ চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে সেতুটি পুননির্মাণ ও বন্দর খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ব্রিজটি সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

দ্য বাল্টিমোর ব্রিজ, সাধারণ মানুষের মুখে মুখে অবশ্য এটি পরিচিত ছিল 'দ্য কি ব্রিজ' নামে। এটি মেরিল্যান্ডের উনিশ শতকের কবি ফ্রান্সিস স্কট কি-র সম্মানে ১৯৭৭ সালে খুলে দেওয়া হয়। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা।

পাটাপস্কো নদী ও বাল্টিমোর বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত এই সেতুটি ১ দশমিক ৬ মাইল (২ দশমিক ৬ কি.মি.) লম্বা। এ নদী গিয়ে পড়েছে চেসাপিক উপসাগরে। এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মোহনা।

এ সেতুকে ‘কন্টিনিউয়াস ট্রাস ব্রিজ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, অর্থাৎ এর উপরের কাঠামোই হলো লোড বহনকারী অংশ এবং এটি একে অপরের সাথে সংযুক্ত ।

এর প্রধান স্প্যানটি ১২শ ফুট লম্বা, যা এ ধরনের যত ব্রিজ আছে দুনিয়ায় তার মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম।

দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে কন্টেইনার জাহাজ ডালি সেতুটির একটি পিলারে আঘাত করার পর তাৎক্ষনিকভাবেই সেতুটি ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে।

মঙ্গলবার দিনের শুরুতে স্থানীয় সময় রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছিলেন এমন আটজনকে তখন সেতুর ওপর দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে দুজন গুয়েতেমালার নাগরিক বলে মেরিল্যান্ডে সে দেশের কনস্যুলেট থেকে জানানো হয়েছে।

সেতুটি ধ্বসে পড়ার পর এই দুজনকে পানি থেকে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হলেও আরেকজনের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কিন্তু বাকি ছয় জন সম্ভবত প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পানিতে কয়েক ঘণ্টা থাকার কারণে প্রাণ হারাতে পারেন বলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ই জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

দিনভর তল্লাশি চালানোর পর অনুসন্ধান কার্যক্রম স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

এখন সংস্থাটি মৃতদেহ খোঁজ করা এবং হতাহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে শুরুতে উদ্ধারকর্মীরা বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করেছে। কারণ কিছু কার্গোসহ আরও কিছু জিনিস সেতুতে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলো। আবার পানিতেও বিপজ্জনক ধ্বংসাবশেষ ছিলো।

বন্দরের পানির তাপমাত্রা ছিলো ৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ৪৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো।

মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে আসলে হাইফোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। (মানবশরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মতো)।

বাল্টিমোর অগ্নিনির্বাপণ কর্মকর্তারা বলছেন সোনার বা শব্দ সংকেত ব্যবহার করে যানবাহনগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে।

জাহাজটি সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী কন্টেইনার জাহাজ 'ডালি' গ্রিসের ওশানবাল্কের জন্য তৈরি করেছিলো হুন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ।

এখন এটিকে পরিচালিত করছিল চার্টার ভেসেল কোম্পানি সিনার্জি গ্রুপ এবং সাময়িকভাবে এটি লিজ নিয়েছিলো সুপরিচিত শিপিং কোম্পানি মায়েরস্ক। কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

তারা জানিয়েছে তাদের গ্রাহকদের জন্য কার্গো বহন করছিল, তবে কোম্পানির কেউ দুর্ঘটনার সময় জাহাজে ছিল না।

শ্রীলংকার কলম্বোর উদ্দেশ্যে স্থানীয় সময় রাত বারটা চব্বিশ মিনিটে বাল্টিমোর সিগার্ট মেরিন টার্মিনাল ছেড়েছিল জাহাজটি।

ধারাবাহিকভাবে এর গতি বাড়ছিল এবং এটি পাটাপস্কো নদীতে একটি রুট ধরে সোজা চলছিলো।

রাত একটা পঁচিশের মেরিন ট্রাফিক ডেটা অনুযায়ী জাহাজটি হুট করে সোজা পথ থেকে সরে যায় ও গতি কমতে শুরু করে।

এই সময়ে ভিডিওতে দেখা যায় জাহাজটির বাইরের দিকের সব আলো বন্ধ হয়ে যায় এবং জাহাজের ফানেল থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে।

এর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাজটি সেতুতে আঘাত করে।

শিপটি যখন সেতুর দিকে এগুচ্ছিল তখন একটি 'মে ডে সিগন্যাল' পাঠানো হয়েছিল জাহাজ থেকে।

এটি কর্তৃপক্ষকে সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে এবং ‘জীবন বাঁচাতে’ সহায়তা করেছিল বলে উল্লেখ করেছেন গভর্নর মুর।

তিনি বলেন জাহাজটি দ্রুত এগুচ্ছিল, ঘণ্টায় প্রায় নয় মাইল বা ঘণ্টায় পনের কিলোমিটার গতিতে।

ইউএস সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার এজেন্সি একটি আনক্লাসিফায়েড মেমো পেয়েছে, যার ভিত্তিতে বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রর পার্টনার সিবিসি বলছে ডালি ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল’।

সিনার্জি বলেছে জাহাজটির ক্রু-রা ছিল ভারতীয় নাগরিক আর দুই পাইলট ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের আহত হবার কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

কোম্পানিটি বলছে দুর্ঘটনার অনেকগুলো সম্ভাব্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে, তবে দুই পাইলট থাকার পরেও এ ধরনের সংঘর্ষ ‘অস্বাভাবিক’।

একজন শিপিং বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন যে ইঞ্জিন ফেইলিওর, স্টিয়ারিং কাজ না করা কিংবা জেনারেটর ব্ল্যাকআউটের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে দুর্ঘটনায় এবারই ডালি প্রথম পড়েনি।

২০১৬ সালে বেলজিয়ামের অ্যান্টোয়ার্প বন্দর ছাড়ার সময়ে দুর্ঘটনায় এর কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেবারও কারও আহত হবার ঘটনা ঘটেনি।

সিঙ্গাপুরের মেরিটাইম ও বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ২০১৬ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী হয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে ডালি।

জাহাজের কাঠামো ও কার্যকারিতা বিষয়ক সনদ এখনো বহাল আছে বলেও জানিয়েছে ওই কর্তৃপক্ষ।

২০২৩ সালের জুন ও সেপ্টেম্বরে দুটি বিদেশী বন্দরে পরীক্ষায় এই জাহাজটি উত্তীর্ণ হয়েছে।

অবশ্য জুনের ইন্সপেকশনের সময় বন্দর ছাড়ার আগে ফুয়েল প্রেশারের জন্য থাকা মনিটর গেজের ত্রুটি সারানো হয়েছিল।

সেতু ধ্বসের প্রভাব কী হবে

কি ব্রিজটির লোকেশন এমন জায়গায় যে এখন এটি না থাকায় সড়কের যান চলাচল আগামী কয়েক মাস কিংবা বছর ধরেও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বাল্টিমোর বন্দরের কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে।

বাল্টিমোর শহর ঘিরে যে ‘৬৯৫ অরবিটাল হাইওয়ে’ বা জাতীয় সড়ক রয়েছে, এই সেতুটি ছিল তারই অংশ।

এই সড়ক ‘বাল্টিমোর বেল্টওয়ে’ হিসেবেও পরিচিত। প্রতি বছর অন্তত এক কোটি পনের লাখ যানবাহন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে।

শহরের কাছেই একটি টানেল দিয়ে এখন বাল্টিমোর হারবার অতিক্রম করা সম্ভব। কিন্তু দুর্ঘটনার পর ট্রাফিক সমস্যা বাড়তে পারে বলে মনে করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ‘মেজর ট্রাফিক এলার্ট’ ঘোষণা করেছে।

আবার ঝুঁকিপূর্ণ মালামাল পরিবহন করে যেসব লরি তাদের জন্যও বড় সমস্যা হতে পারে। এসব মালামাল নিয়ে লরি টানেল দিয়ে চলাচলের অনুমতি পায় না। শিপিংয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা কম হবে না।

পরিবহন মন্ত্রী পিট বুটিগ বন্দর বন্ধের কথা বলেননি। তবে বলেছেন পণ্য সরবরাহ চেইনে প্রভাব পড়বে।

কন্টেইনার শিপিং বিশেষজ্ঞ লার্স জানসেন বলেছেন ‘বড় দুর্যোগে’র ঘটনা ঘটে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ও রফতানিকারকদের জন্য উল্লেখযোগ্য সমস্যা তৈরি করবে।

তিনি বলেছেন অনেকগুলো বাণিজ্যিক জাহাজ বাল্টিমোর মন্দরে আটকা পড়বে। সেগুলো বাল্ক ক্যারিয়ার।

২০২৩ সালে এই বন্দর দিয়ে রেকর্ড তের লাখ টন কার্গো পরিবহন হয়েছে।

মি. জানসেন বলছেন এরপরেও এখন কিছু বিলম্ব হবে ও খরচ বাড়বে, তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ দুর্ঘটনা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। বিবিসি বাংলা