News update
  • Young disabled people of BD vow to advocate for peace     |     
  • World Leaders Urged to Defend Human Rights and Justice     |     
  • Vegetable prices remain high, people buy in small quantities     |     
  • Off-season watermelon brings bumper crop to Narail farmers     |     
  • Climate Change Drives Deadly Floods, Storms, and Water Crises     |     

ভারতের 'কচ্ছথিভুর দাবি' নিয়ে শ্রীলঙ্কায় কড়া প্রতিক্রিয়া

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-04-03, 7:04pm

6d0d2990-f19e-11ee-a9f7-4d961743aa47-f7a2f3bd3de9721dde1a3ca17f1222a61712149522.jpg




কচ্ছথিভু দ্বীপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি ও কংগ্রেসের অভিযোগ – পাল্টা অভিযোগের পরে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেওয়া না হলেও সেখানকার গণমাধ্যম এ বিষয়ে বেশ কড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

তবে শ্রীলঙ্কা সরকারের একজন মন্ত্রী জীবন থোন্ডামান ভারতের ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে এই বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে তাদের কোনও আলোচনা হয়নি।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে সেদেশের সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে যে, তারা যেন ভারত সরকারের কাছে বিষয়টি জোরালো ভাবে উত্থাপন করে।

শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর, ডেইলি ফিনান্সিয়াল টাইমস, ডেইলি নিউজের মতো ইংরেজি পত্রিকা এ বিষয়ে সংবাদ ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।

বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার ডেইলি মিররে প্রকাশিত প্রথম সম্পাদকীয়টির শিরোনাম ছিল ‘মোদী কচ্ছথিভু চান, তামিলনাডুতে এখন ভোটের সময়’।

ডেইলি মিরর লিখেছে, “উত্তর প্রদেশের মিরাটে (চেন্নাই থেকে ২২৩২ কিলোমিটার দূরে) বিজেপির এক সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করেই ইন্দিরা গান্ধীর সই করা সেই চুক্তিটিতে সমস্যা দেখতে পান, যার মাধ্যমে কচ্ছথিভু দ্বীপের ওপর থেকে তিনি ভারতের দাবি তুলে নিয়েছিলেন।

“হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন, এখন ভারতে নির্বাচনের সময় এবং ভারতের সুদূর দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে বিজেপি কখনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না,” লেখা হয়েছে ওই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে।

ওই সম্পাদকীয়তে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করেরও নিন্দা করা হয়েছে।

সেখানে লেখা হয়েছে, "কচ্ছথিভু দ্বীপ ইস্যুতে কংগ্রেস ও ক্ষমতাসীন (তামিলনাডুতে) ডিএমকে-র তীব্র সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এমনিতে খুবই শান্তশিষ্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো আগ বাড়িয়ে এটাও বলে দিয়েছেন যে কচ্ছথিভু দ্বীপ শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেওয়ার সময়ে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের আটক করে তাদের নৌকাগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।''

''মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারতীয় তামিল মৎস্যজীবীদের হেনস্থার কথা বলে তামিলনাডুতে শ্রীলঙ্কা বিরোধী মনোভাব উসকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।''

"ভারতীয় নেতাদের কাছে শ্রীলঙ্কার মানুষের অনেক উচ্চাশা আছে এবং সেদেশের শীর্ষ নেতাদের সুবিধাবাদী নেতা হিসাবে না দেখে রাজনীতিক হিসাবেই দেখে থাকেন তারা।''

''মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, ইন্দিরা গান্ধী এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মতো বিখ্যাত নামগুলি মনে এলেও দুঃখের বিষয় যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তার সমস্ত রাজনৈতিক কৌশলের দেখনদারি ছেড়ে দিয়ে তামিলনাডুতে কিছু ভোট পাওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক আবেগ জাগিয়ে তুলতে তার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন,” লেখা হয়েছে ওই পত্রিকায়।

যদিও শ্রীলঙ্কার প্রতিটি কঠিন সময়ে ভারত তার পাশে থেকেছে। শ্রীলঙ্কা যখনই অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে, ভারত তাদের সাহায্য করেছে।

'শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ'

শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্র ডেইলি মিরর এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, যে সময়টায় এক দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ চলছিল, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তখন থেকেই প্রায় তিন দশক ধরে ভারত শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে।

পত্রিকাটি আরও লিখেছে, “আমরা আশা করি, ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের রাজনৈতিক সমস্যার মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে টেনে আনবে না আর শ্রীলঙ্কা চায় তারা যে অবস্থায় আছে, সেভাবেই তাদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।''

ওই ডেইলি মিরর পত্রিকাতেই আরেকটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে, যার শিরোনাম 'কচ্ছথিভুর ওপরে শ্রীলঙ্কার সার্বভৌম অধিকার নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।‘

"অনুর্বর এবং জনবসতি-হীনভাবে পড়ে থাকা দ্বীপটি একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডব্লিউ টি জয়সিঙ্ঘে, যিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের সচিব ছিলেন এবং সমুদ্রসীমা চুক্তি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি এই বিভ্রান্তি দূর করে দিয়েছিলেন যে ভারত সদিচ্ছা দেখিয়ে কচ্ছথিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়েছিল, না কি তারা হস্তান্তর করেছিল।“

‘কচ্ছথিভু: অ্যান্ড দ্য মেরিটাইম বাউন্ডারি অব শ্রীলঙ্কা' নামে একটি বই লিখেছেন মি. জয়সিঙ্ঘে। ওই বইতে কচ্ছথিভুর বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে।

ডেইলি মিরর-এর ওই নিবন্ধে লেখা হয়েছে, "কচ্ছথিভুর ওপরে শ্রীলঙ্কার সার্বভৌম অধিকার নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না এবং প্রকৃতপক্ষে কচ্ছথিভুর ইস্যুকে কেন্দ্র করেই শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি হয়। ওই বইটিতেই লেখা হয়েছে যে কীভাবে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা অবৈধভাবে শ্রীলঙ্কার জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরত, তবে আইন প্রণয়ন হয়ে যাওয়ার পরে দুই দেশের সীমান্তের ভেতরে মাছ ধরার এলাকা চিহ্নিত হয়ে যায়।“

‘উস্কানি দেওয়ার পরিণতি ভয়ানক হতে পারে’

শ্রীলঙ্কার আরেকটি প্রধান বাণিজ্যিক পত্রিকা ডেইলি ফিনান্সিয়াল টাইমসও এই বিষয়ে সম্পাদকীয় প্রবন্ধ ছেপেছে। ওই নিবন্ধের শিরোনাম করা হয়েছে – ‘কচ্ছথিভু তো ভারতের কখনও ছিলই না যে তারা দিয়ে দেবে’।

নিবন্ধটিতে লেখা হয়েছে, “কয়েক দশক আগে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া একটি বিষয়কে রাজনৈতিক লাভের জন্য আবারও তুলে আনা হচ্ছে। তথ্য বিকৃত করে পেশ করা আর বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীকে বিনা কারণে উস্কানি দেওয়ার পরিণতি ভয়ানক হতে পারে।''

“ভারতীয় নেতাদের মধ্যে এই কথাটা বেশ চালু রয়েছে যে ভারত সরকার এটি শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়েছে। কিন্তু সত্যটা বেশ কঠিন। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা চলে। পরে, ৭০-এর দশকে এই সমস্যার সমাধান করে শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নেওয়া হয়,” লেখা হয়েছে ওই সম্পাদকীয় নিবন্ধে।

ডেইলি নিউজ সংবাদপত্রে একটা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে, যার শিরোনাম হল ‘কচ্ছথিভুর রাজনীতি’।

সেখানে লেখা হয়েছে যে তামিলনাডুর ডিএমকে এবং এআইএডিএমকের মতো দ্রাবিড় রাজনৈতিক দলগুলি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বড় সড় ভোট ব্যাঙ্কের লাভ পেতে মাঝে মাঝেই ইস্যুটিকে জাগিয়ে তোলে ।

নিবন্ধে লেখা হয়েছে যে “তামিলনাডুর রাজনীতিবিদরা বারে বারেই শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে কচ্ছথিভু ফেরত নেওয়ার দাবি তুলতে থাকেন। এআইএডিএমকে এবং ডিএমকে এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও গেছে, কিন্তু তাদের কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে ওই দ্বীপটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে চুক্তি হয়ে গেছে, যা আর বদলানো সম্ভব নয়।“

ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন থেকে কচ্ছথিভু নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ওই পত্রিকা লিখেছিল যে, ভারত সরকারের ‘উদাসীন মনোভাব’-এর কারণে ১৯৭৪ সালে কচ্ছথিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে চলে যায়।

তামিলনাড়ুর বিজেপি প্রধান কে আন্নামালাইয়ের দায়ের করা তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী আবেদন থেকে বিষয়টি জানা গেছে বলে পত্রিকাটি জানায়।

রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে যেমন বিষয়টি উত্থাপন করেন, তেমনই সেদিনই তিনি এক্স হ্যান্ডেলেও লেখেন।

কচ্ছথিভু একটি ছোট দ্বীপ, দুই বর্গ কিলোমিটারেরও কম আয়তন এর। শ্রীলঙ্কা আর ভারতের মধ্যে পক প্রণালীতে অবস্থিত এই ছোট্ট দ্বীপটি। শ্রীলঙ্কা এবং ভারত দুই দেশই এই দ্বীপটি নিয়ে দাবী-পাল্টা দাবী জানিয়ে আসছিল। অবশেষে, ১৯৭৪ সালে ওই দ্বীপের ওপর থেকে ভারত তার দাবী তুলে নেয়।

এ নিয়ে তামিলনাডুর স্থানীয় রাজনীতি একাধিকবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের বিরোধিতা করতে গিয়ে মি.মোদীই প্রথমবার জাতীয় রাজনীতিতে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এলেন।

সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যাণ্ডেলে ওই ঘটনাকে মি. মোদী ‘চোখ খুলে দেওয়ার মতো’ এবং ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি লিখেছেন, “এটা প্রতিটি ভারতীয়কে রাগিয়ে দিয়েছে এবং মানুষের মনে এ কথা আবারও পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেছে যে কংগ্রেসকে কখনই বিশ্বাস করা যায় না। ভারতের ঐক্যকে দুর্বল করা, ভারতের স্বার্থে আঘাত করাই ৭৫ বছর ধরে কংগ্রেসের কাজের ধরন।”

তারপরে সাংবাদিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও।

সেখানে তিনি বলেন, “ডিএমকে (দ্রাবিঢ় মুনেত্রা কাঝাগম তামিলনাডুর ক্ষমতাসীন দল) আর কংগ্রেস এমন আচরণ করছে যে সবকিছুই কেন্দ্রীয় সরকারের দায় আর তারা যেন কিছুই করে নি। বিষয়টি নিয়ে যেন এখনই শুধু আলোচনা হচ্ছে, এর যেন কোনও ইতিহাস নেই। এটা এখন আলোচনায় এজন্য উঠে এসেছে যে মানুষ জানতে চাইছেন এই বিতর্ক কীভাবে শুরু হয়েছিল? সংসদে একাধিকার এই দ্বীপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।''

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেস আবার তুলে এনেছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের কথা।

মি. মোদীরই পুরনো একটি বিবৃতি তুলে ধরে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, ২০১৫ সালে বাস্তবায়িত “স্থল সীমা চুক্তি শুধু ভূমি পুনর্বিন্যাস ছিল না, সেটা ছিল হৃদয় মিলে মিশে যাওয়ার মতো ঘটনা।“

যদিও ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে যারা আন্দোলন করেছিলেন, তারা বলছেন ছিটমহল বিনিময় আর কচ্ছথিভু দ্বীপের ওপর থেকে ভারতের দাবি প্রত্যাহার করে নেওয়া – এই দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।