News update
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     
  • China calls for implementation roadmap for new finance goal     |     
  • New gas reserve found in old well at Sylhet Kailashtila field     |     
  • Revenue earnings shortfall widens in October     |     

সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে উৎখাত করা বিদ্রোহীরা কারা

বিবিসি বাংলা সংঘাত 2024-12-08, 5:42pm

rfewrwrq-8cb143e7badee5b5b857891335fd42571733658161.jpg




সিরিয়ার বিদ্রোহীরা বলেছে তারা দেশটির রাজধানী দামেস্ক দখল করে নিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমানে করে পালিয়ে গেছেন। তবে তার গন্তব্য জানা যায়নি।

টেলিভিশনে প্রচারিত এক ঘোষণায় তারা বলেছে 'স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা হয়েছে'। "সব সিরিয়ানদের জন্য মুক্ত ও স্বাধীন সিরিয়া দীর্ঘজীবী হও"।

আবু মোহাম্মেদ আল-জাওলানির নেতৃত্বে অভিযান শুরু হওয়ার পর নভেম্বরের শেষ দিকেএই বিদ্রোহীরা হুট করে আলেপ্পো শহর দখল করে নেয়।

এর দু সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটির সরকারের পতন হলো।

অনেকগুলো ঘটনায় দেখা গেছে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর লোকজন হয় তাদের পদ থেকে সরে গেছে কিংবা বিরোধীদের সাথে যোগ দিয়েছে।

যতটুকু জানা গেছে তাতে প্রাথমিক হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।

এ সংগঠনটির সিরিয়ার ইতিহাস ও সংকটে জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কসহ অনেক দেশে এইচটিএস সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত।

হায়াত তাহরির আল-শাম কারা

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এ গোষ্ঠীটির নাম ছিলো জাবাত আল নুসরা, যা ছিলো সরাসরি আল-কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সংযুক্ত।

এর গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কথিত আইএস গ্রুপের নেতা আবু বকর আল বাগদাদী।

এই গোষ্ঠীটিই প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ও প্রাণঘাতী ছিলো বলে অনেকে মনে করেন। তবে, এটি বিপ্লবের চেয়ে জিহাদি আদর্শকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে করা হয়।

ফ্রি সিরিয়া নামে বিদ্রোহীদের যে জোট হয়েছিলো সেখানে তাদের মধ্যে ভিন্নতা দেখা দিয়েছিলো।

২০১৬ সালে এই গোষ্ঠীর নেতা আবু মোহাম্মেদ আল জাওলানি প্রকাশ্যেই আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছেদ করেন এবং জাবাত আল নুসরাকে বিলুপ্ত করে নতুন সংগঠন তৈরি করেন। এর নামই রাখা হয় হায়াত তাহরির আল -শাম এবং পরে এর সাথে আরও কিছু ছোট গোষ্ঠী যোগ হয়।

কিছু সময়ের জন্য এইচটিএস সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশকে ক্ষমতার কেন্দ্র বানিয়েছিল। তারা সেখানে স্থানীয় প্রশাসন চালু করেছিলো। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছিলো, যা তাদের বৈধতা পাওয়ার চেষ্টাকে ম্লান করে দিয়েছে।

এছাড়া অন্য আরও কিছু গোষ্ঠীর সাথে তিক্ত লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিলো তারা।

ইদলিবের বাইরে তাদের উচ্চাভিলাষ সম্পর্কে তখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি।

এমনকি আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক নষ্টের পর তারা খিলাফতের চেয়ে সিরিয়ায় ইসলামি শাসনের চেষ্টা করেছে।

আসাদকে নতুন করে চ্যালেঞ্জ করা কিংবা সিরিয়ায় আবার বড় ধরনের কোন সংঘাতের লক্ষণ তাদের দিক থেকে এ পর্যন্ত কমই প্রকাশ পেয়েছে।

সিরিয়ায় যুদ্ধ কেন

২০১১ সালে গনতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিলো দাররা শহরে। সিরিয়ার সরকার তখন ব্যাপক দমন পীড়ন চালালে সেটি আসাদ সরকারের পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়।

প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং দমন-পীড়ন দুটোই বাড়তে থাকে। বিরোধী সমর্থকরা এক পর্যায়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। মি. আসাদ এর নাম দিয়েছিলেন 'বিদেশী সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ'।

শত শত বিদ্রোহী দল তৈরি হয়, বিদেশী শক্তিরা বিভিন্ন পক্ষ নিতে শুরু করে এবং আইএস ও আল-কায়েদার মতো উগ্রপন্থী জিহাদিরা জড়িয়ে পড়ে।

সহিংসতা দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে এবং দেশটি পুরোপুরি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

এ যুদ্ধে পাঁচ লাখেরও বেশী মানুষ নিহত হয়। প্রায় এক কোটি বিশ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় এবং এর মধ্যে অন্তত পঞ্চাশ লাখ বিদেশে শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে।

বিদ্রোহীদের আক্রমণ যেভাবে হলো

গত চার বছরে মনে হচ্ছিলো সিরিয়া যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে। দেশটির বড় শহরগুলোতে বাশার আল-আসাদের শাসন ছিলো। তবে কিছু অংশ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো।

এর মধ্যে ছিলো পূর্ব দিকে কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো। এগুলো সংঘাতের শুরু থেকেই সিরিয়া রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিলো না।

বিশাল সিরীয় মরুভূমি এলাকায় থাকা দলগুলো নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিলো। আর উত্তর পশ্চিমের ইদলিব প্রদেশ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণেই ছিলো।

এইচটিএস ছিলো ইদলিবের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়। তারাই এবার আলেপ্পোতে হামলা করে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

কয়েক বছর ধরে ইদলিব ছিলো যুদ্ধক্ষেত্র, কারণ সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছিলো।

২০২০ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। আর তুরস্ক বিদ্রোহীদের সমর্থন যুগিয়েছে।

প্রায় চল্লিশ লাখ লোক সেখানে বাস করতো, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন শহর থেকে বাস্তুহারা হয়েছে। আসাদ বাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে।

আলেপ্পো ছিলো আরেকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্র। সেখানেই বিদ্রোহীদের বড় পরাজয় হয়েছিলো।

নিজের জয় নিশ্চিত কর বাশার আল-আসাদ শুধু তার দুর্বল সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভর করেননি। বরং তিনি আস্থা রেখেছিলেন রাশিয়ার বিমানশক্তি আর ইরানের সামরিক সহায়তার ওপর। এর মধ্যে হেজবুল্লাহও ছিলো।

লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণে হেজবুল্লাহর পরিণতি এবং সিরিয়ায় ইরানের সামরিক কমান্ডারদের ওপর ইসরায়েলি হামলাও বিদ্রোহীদের আলেপ্পোর দিকে হঠাৎ যাত্রা শুরু করতে উৎসাহ যুগিয়ে থাকতে পারে।

গত কয়েক মাসে ইসরায়েল ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে। এর ফলে সিরিয়ায় থাকা হেজবুল্লাহ নেটওয়ার্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

এরা না থাকলে আসাদের বাহিনী হয়তো আরও আগেই পরাজিত হতো।