একদিকে অব্যাহত পাল্টাপাল্টি হামলা, অপরদিকে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি আলোচনা। প্রশ্ন হলো, ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসলে কী চান? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, যুদ্ধ বন্ধ করে দুই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান পুতিন। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, যুদ্ধ বন্ধ নয় বরং রাশিয়াকে বিশ্ব রাজনীতির শিখরে নিয়ে যেতে চান সাবেক কেজিবি সদস্য।
এ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।
ট্রাম্প দাবি করে যাচ্ছেন যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি টানতে চান। যদিও, তিন বছর আগে যে এজেন্ডা নিয়ে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া, তা এখনো অপরিবর্তিত আছে। বরং, নিজেদের আদর্শ থেকে সরে এসে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ট্রাম্পই যুদ্ধ থামাতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
যুদ্ধবিরতিতে পুতিনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররাও। এ অবস্থায় পুতিনের কার্যকলাপ ও তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
পুতিনের শাসনামলে রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে তা স্বীকার করতে বাধ্য সংশ্লিষ্টরা। তবে, বৃহত্তর স্বার্থে তা অনেকটাই হুমকির দিকে ঠেলে দিয়েছেন পুতিন। নিজেদের ক্ষতি করে হলেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন কিয়েভে। এবার প্রশ্ন ওঠে, কী সেই বৃহত্তর স্বার্থ?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট পুতিন এবার বিশ্ব-রাজনীতির শিখরে উঠতে চাচ্ছেন। ট্রাম্পের যুদ্ধবন্ধের এই তাড়া, কেবলমাত্র রাশিয়ার পরিকল্পনাকে সহজ করে দিচ্ছে। ইউক্রেনের মালিকানা বিষয়ে এখনো অনঢ় অবস্থানে পুতিন প্রশাসন।
এ অবস্থায় যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সাহায্য করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ সম্পর্কও হুমকির মুখে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় সবদিকেই রাস্তা খোলা রাখছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। সাবেক এই কেজিবি কর্মকর্তা একদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চালিয়ে নিজেদের শর্ত মোতাবেক চুক্তি সাজাচ্ছেন। অপরদিকে হামলা অব্যাহত রেখেছেন ইউক্রেনে।
যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। এতে, যে উদ্দেশ্যে পুতিন এই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তা অনেকটা সফলতার দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কথা ভাবছে রুশ প্রশাসন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে নিজেদের প্রথম সারির নীতিনির্ধারকের টেবিলে জায়গা করে দিতে চান পুতিন। সে উদ্দেশ্যেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।