বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ‘অপারেশন জ্যাকপট’। ১৯৭১ সালে নৌ-সেক্টর কর্তৃক পরিচালিত সেই গেরিলা অভিযানের বীরত্বের গল্প এবার চিত্রায়ণ হবে রুপালি পর্দায়। সিনেমাটি ‘অপারেশন জ্যাকপট’নামেই নির্মিত হচ্ছে।
‘অপারেশন জ্যাকপট’ সিনেমার অর্থায়ন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সিনেমাটির বাজেট ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। তবে সিনেমাটি নির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই তৈরি হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। এমনকি সম্প্রতি সিনেমার টেন্ডার নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিশাল আয়োজন আর বড় বাজেটের সিনেমা ‘অপারেশন জ্যাকপট’নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশের পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও কলকাতার নির্মাতা রাজিব কুমার। ইতোমধ্যে কাশেম আলী দুলালের চিত্রনাট্য ও সংলাপে বিশাল সেট নির্মাণ করে সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছে এফডিসিতে।
অন্যদিকে দেশের এক গণমাধ্যমে নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু জানিয়েছিলেন, সিনেমা নির্মাণ প্রস্তাবের দরপত্রে তার নাম থাকলেও এটি নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে কিছুই জানতেন না তিনি।
এর আগে বিটিভির অর্থায়নে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নির্মাণ করেছিলেন পরিচালক এফ আই মানিক। সেসময় টেলিফিল্মটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১৯ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে মানিক বলেন, প্রথমে শুনেছিলাম গিয়াস উদ্দিন সেলিমসহ বেশ কয়েকজন গুণী নির্মাতা কাজটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের পরিচ্ছন্ন নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পরে জানতে পারলাম কাজটি তারা পাচ্ছেন না। সত্যি বলতে টেন্ডার ডেকে সিনেমা নির্মাণ এ ধারণাটাই আমাকে ভীষণ হতবাক করেছে।
‘অপারেশন জ্যাকপট’ কোনো প্রেমের গল্প নয় জানিয়ে বলেন, সিনেমাটি কোনো প্রেমের গল্প নয়, এটা একটা ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের অংশ। এখানে অনেক গবেষণার বিষয় রয়েছে। উপযুক্ত শিল্পী বাছাই করে প্রচুর গবেষণা আর পর্যাপ্ত ট্রেনিং ছাড়া এ সিনেমাটি নির্মাণ অসম্ভব। বর্তমানে যারা কাজটি পেয়েছেন তারা যদি যথাযথভাবে এগুলো না করে থাকেন তবে সেটা হবে ইতিহাসের সঙ্গে তামাশা। কোনোভাবেই প্রকৃত ঘটনা এড়িয়ে কারো মাহাত্ম্য দেখানো হবে শিখিয়ে দেওয়া বুলির মতো ঘটনা। এ প্রজন্ম খুবই সচেতন, তারা এগুলো লক্ষ্য রাখবে।
জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর আগে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ চলচ্চিত্র তৈরির উদ্যোগ নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেসময় তারা নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমকে চিত্রনাট্য তৈরির দায়িত্ব দেয়। পরবর্তীতে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ তদারকির দায়িত্ব পায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটি পায় ‘কিবরিয়া ফিল্মস’।
এদিকে ‘অপারেশন জ্যাকপট’র জন্য গবেষণাকর্ম ও চিত্রনাট্য তৈরি করেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। পর্যাপ্ত গবেষণা, নির্মাণ প্রক্রিয়ায়, শিল্পী বাছাই গরমিল প্রসঙ্গে কিবরিয়া ফিল্মেসের পুরো প্রক্রিয়াকে ‘অরাজকতার’ সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।
ওই চিত্রনাট্য কমিটির সদস্য মোরশেদুল ইসলাম দুর্নীতির অভিযোগ করে দেশের এক গণমাধ্যমে বলেছিলেন, এখানে যা হয়েছে, সেটা হলো দুর্নীতি। অনেক টাকার কাজ, সেটা দুর্নীতির মাধ্যমে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি আরও বলেছিলেন, আমরা শুরু থেকেই ‘অপারেশন জ্যাকপট’র চিত্রনাট্য কমিটিতে ছিলাম। চারবছর ধরে সেলিমের স্ক্রিপ্ট মূল্যায়ন করেছি। কিন্তু এদের স্ক্রিপ্ট কোন কমিটি মূল্যায়ন করেছে, আদৌ করেছে কি না, সেটা তো আমরা জানি না। এভাবে তো হতে পারে না। টেন্ডারে লোয়েস্ট বিড দিলেই তো হবে না, তাদের স্ক্রিপ্ট কেমন, সেটাও আমি জানি না। কিন্তু ফিল্ম মেকিং তো টেন্ডারের বিষয় না। তাদের স্ক্রিপ্ট তো মূল্যায়ন হতে হবে। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।