News update
  • Google fires 28 workers protesting contract with Israel     |     
  • US vetoes widely backed resolution on Palestine as UN member      |     
  • Dhaka’s air quality remains ‘unhealthy’ Friday morning     |     
  • India starts voting in the world's largest election      |     
  • Iran fires air defense batteries in provinces      |     

হিরো আলমের কণ্ঠে কেন পুলিশের ‘বেড়া’?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সেলিব্রিটি 2022-08-07, 8:23am

80200000-c0a8-0242-3d0a-08da77f299c7_w408_r1_s-3576b101f7c208c50ada049f5d88d62d1659839023.jpg




ফেসবুকের মালিকানাধীন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মেটা কিংবা ইউটিউবের মালিকানাধীন গুগলের ‘সব নীতিমালা অনুসরণ করে’ ভিডিও বানালেও বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের গানে (পুলিশের দাবি 'বিকৃত') রীতিমতো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ রবীন্দ্র এবং নজরুল সঙ্গীতের প্রসঙ্গ তুললেও হিরো আলম ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, ২৭ জুলাই তাকে ‘তুলে নিয়ে’ ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার অন্য গানের বিষয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে। এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, হচ্ছে। বাংলাদেশের নানা সোশ্যাল ইস্যুতে নিয়ে লেখালেখি করা মানুষদের অনেকে তাদের ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ‘শ্রেণি এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্য’ তুলে ধরলেও হিরো আলম ভয়েস অফ আমেরিকার কাছে দাবি করেছেন, তৃতীয় কোনো পক্ষের কারণে পুলিশ তাকে কাকডাকা ভোরে অফিস থেকে তুলে নিয়ে এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাশাপাশি তিনি ‘তুই-তোকারির’ মতো অসদাচরণের শিকার হওয়ারও অভিযোগ করেছেন।

বিশিষ্টজনদের বড় একটি অংশ আশরাফুল আলম তথা হিরো আলমের ‘মানবাধিকার’ রক্ষায় সরব হলেও শিল্পীদের খুব একটা পাশে পাচ্ছেন না তিনি। শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কয়েকজন এ বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার কাছে মন্তব্যই করতে চাননি। তবে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সারফুদ্দিন আহমেদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং চিকিৎসক আব্দুন নূর তুষারের মতো মানুষেরা এই ঘটনায় ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’, ‘দুর্বলের প্রতি সবলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা’ এবং ‘সমাজে ভয়ের বার্তা’ খুঁজে পাচ্ছেন। তারা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এই ধরনের পদক্ষেপ সমর্থন করে না।

কারা সেই তৃতীয়পক্ষ

২০১৬ সালের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'হাস্যরসের' ঝড় তোলা ডিশ ব্যবসায়ী হিরো আলম বগুড়ার এরুলিয়া গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় এসে অনেক প্রতিকূলতার মোকাবিলা করেছেন। সেই সময়ে দেশের অনেকেই যখন ফেসবুক, ইউটিউবের আয়ের বিষয়ে বুঝতেন না, তখন থেকেই তিনি এই পেশায় নেমে পড়েন। একের পর এক বানাতে থাকেন ডিজিটাল কনটেন্ট। মানুষ তার কাজে আনন্দ আর হাসির রসদ খুঁজে পেলেও আলম নিজেকে কৌতুকাভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি। তাই নামের আগে নিজেই ‘হিরো’ জুড়ে দেন। পরে নিজের টাকায় একটি সিনেমাও বানান।


তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, "ঢাকায় আসার পর কেউ আমার বন্ধু হয়েছে, কেউ হয়েছে শত্রু। আমার বিরুদ্ধে বড় একটি চক্র কাজ করছে। আমার অভিনয় জীবনে এত বাধা...কোনো আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করতে চাইলে, কোনো একদল মানা করবে। আমি সিনেমা বানাতে চাইলে, বড় বড় আর্টিস্টকে কাজ করতে দেয়া হয় না। মানবসেবার কাজ করতে গেলেও বাধা দেয়া হয়। একটু ভালো লেভেলে যেতে চাইলে আমাকে বাধা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জানি না, সেই তৃতীয়পক্ষটা কে। বাংলাদেশে এত লোক থাকতে, কেন তারা হিরো আলমকে টার্গেট করছে, জানি না।"


নিজের জীবন এখন শঙ্কায় আছে-এমন অভিযোগ তুলে হিরো আলম তৃতীয়পক্ষের নাম উচ্চারণ করতে চাননি। তবে তার ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, "হিরো আলম গত কয়েক মাসে পারিবারিকভাবে অনেক সমস্যার ভেতর দিয়ে গেছেন। সেখানে তার একটা প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে। এছাড়া শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময় অনেকের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়েছে। দুই জায়গার বিবাদই চরম আকার ধারণ করেছিল। তারা হিরো আলমকে শায়েস্তা করারও হুমকি দিয়েছিল।"

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

২৭ জুলাই ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুণ অর রশিদ সাংবাদিকদের এভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন, "হিরো আলমকে তো আমরা চিনি। তার বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমে অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে ডেকেছিল। সে এসেছিল। তার বিরুদ্ধে অজস্র কমপ্লেইন। আসলে ওর কথা আর কী বলবো..আমাদের পুলিশের যে ড্রেস, পুলিশের যে প্যাটার্ন ডিআইজি বা এসপিরা ইউস করেন। সে কনস্টেবলের ড্রেস পরে তাদের ভূমিকায় অভিনয় করে। সে কোনো অনুমতিও নেয় না। শিল্পী সমিতিতে বলা হয়েছে, পুলিশের ড্রেস পরতে হলে অনুমতি নিতে হবে। সে শিল্পী সমিতির সদস্যও না, আর যেসব পদের অভিনয় করে সে তা জানেও না।"

হারুণ অর রশিদ বলেন, "সে যে গান করে, সেগুলো আমাদের বাঙালির যে কৃষ্টি-কালচার আছে, আমরা রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি, নজরুল সঙ্গীত শুনি, যারা গানটি গায়...তাদের চেয়ে সে টোটালি চেঞ্জ করে দিয়েছে।"

কী মুচলেকা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে হারুণ সাংবাদিকদের বলেন,

"তিনি নজরুল বা রবীন্দ্র সংগীতসহ কোনো গান বিকৃতভাবে গাইবেন না, অনুমতি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পোশাক পরে অভিনয় করবেন না। বিতর্কিত হয় এমন কোনো অভিনয়, মন্তব্য, গান গাইবেন না, এ ধরনের মুচলেকা দিয়েছেন।"
কারা এই অভিযোগকারী?

হিরো আলমের অভিনয় কিংবা গান অনেকেরই পছন্দ হয় না। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছে। দিনরাত অনেকেই তার ভিডিওতে রিপোর্টও করেন। সেই রিপোর্ট ফেসবুক-ইউটিউব থেকে যাচাই-বাছাই করা হয়। হিরো আলমের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার কনটেন্ট ফেসবুক-ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মে রেখে দেয়। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, "কনটেন্ট খারাপ হলে ফেসবুক-ইউটিউব ডিলিট করে দিত।"

এখন প্রশ্ন হলো তাহলে ডিবির কাছে অভিযোগ করলো কারা?

ফেসবুকের নীতিমালার বাইরে ভার্চুয়াল মাধ্যমের সুরক্ষায় দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের ‘বিতর্কিত’ একটি আইন রয়েছে। কিন্তু হিরো আলমকে কোন আইনে ডাকা হলো সে বিষয়ে পুলিশ এখনো কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। হিরো আলম ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে পাঁচটি ইস্যু তোলা হয়েছে।

তার ভাষায়, "আমাকে ইস্যু ধরছে পাঁচটা। এক নম্বর বলতেছে: রবীন্দ্র সঙ্গীত তুই কেন গাইলি। দুই নম্বর বলছে: পিয়াসা, মৌ এবং ডাক্তার মুরাদ হাসানকে নিয়ে কেন গান করলি। পিয়াসা, ডাক্তার মুরাদ হাসানকে নিয়ে যখন গ্যাঞ্জাম (সমস্যা) হয়, তখন কত লোকই তো গান করছে। তাদের তো আটকালো না। আমাকে কেন আটকালো। এই যাদের নিয়ে গান করেছি তারা নাকি অভিযোগ করেছেন। আর কারো নাম আমাকে বলা হয়নি। তিন নম্বরে: পুলিশের পোশাক নিয়ে কথা বলছে। আমি কনস্টেবলের পোশাক পরে বড় পদের অভিনয় করেছি। কথা হলো, পুলিশের পোশাকের কনটেন্টটা করছি চার বছর আগে। ওনারা এতদিন কেন ধরলো না, আজ কেন ধরলো। আরেকটা কথা বলছে: আমি কোনো ডিরেক্টর-প্রডিউসার না। পাঁচ নম্বরে বলছে: নামের আগে হিরো কেন লাগালি। আমার নাম নিয়ে কেন তারা ইস্যু ধরলো।"

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

হিরো আলমের সঙ্গে যা হয়েছে সেটি ‘ঠিক নয়’ মন্তব্য করে কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, "এটা ঠিক না। অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। চেহারা তো কারো হাতে নেই। গান করাও সবার অধিকারের ভেতর পড়ে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এই ঘটনাকে সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন উল্লেখ করে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, "এটা গুরুতরভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন। আমাদের সংবিধানের আর্টিক্যাল থার্টি ফাইভে বলা আছে, আপনি কারো সঙ্গে মানসিক পীড়নও যদি করেন, মানসিকভাবে লাঞ্ছনা করেন সেটা নির্যাতনের সমতুল্য। একটা মানুষের গায়ের কালার নিয়ে, তার চেহারা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তুই তোকারি করা-এর চেয়ে বড় মানসিক লাঞ্ছনা হতে পারে না। এর চেয়ে বড় অপমান আর হতে পারে না। এটা অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘন। এটা আমাদের পেনাল কোডেরও লঙ্ঘন। আমাদের পেনাল কোড অনুযায়ী আপনি কারো প্রতি মানহানিকর কিংবা অবমাননাকর কোনো বক্তব্য প্রদান করতে পারেন না।"

তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি যে পুলিশের একটা ব্যাপক সেনসিটাইজেশন প্রয়োজন। পুলিশকে বুঝতে হবে তারা রাষ্ট্রের বাহিনী, ক্ষমতাশালী সরকারের বাহিনী বা একজন-দুজন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, বিত্তশালী রবীন্দ্র এলিটিজম যারা করে তাদের ভৃত্য না। এটা তাদের অনুধাবন করতে হবে।"

গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

এই ঘটনার পর অনেক গণমাধ্যমে হিরো আলমকে ‘নেতিবাচকভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক সারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, "ভুঁইফোড় গণমাধ্যমের কথা বাদ দিলাম। যারা নিজেদের মূল ধারার গণমাধ্যম বলে দাবি করে বা সমাজে স্বীকৃত হয়ে গেছে, তারা হিরো আলমকে নিয়ে যে কাজ করেছে, যেভাবে উপস্থাপন করেছে-এটা আমাকে খুবই বিব্রত করেছে। গণমাধ্যমের এই কাজ একধরনের কমেন্ট্রির ভেতর দিয়ে যায়, পড়লে মনে হয় হিরো আলম যা করছে সেই অধিকার তার নাই।"

হিরো আলম যেভাবে, যে ভাষায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তার প্রশংসা করে সারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, "হিরো আলম পড়াশোনা করেনি। কিন্তু স্বশিক্ষা দিয়ে, নিজস্ব জ্ঞান দিয়ে, কথা দিয়ে, খুব গুছিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। এই সামর্থ্য অনেকেরই নেই।"

হিরো আলমের সঙ্গে যা হয়েছে, তাতে ‘সুস্পষ্ট অন্যায়’ দেখছেন এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, "এটা হিরো আলমের প্রতি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সুস্পষ্ট অন্যায়। এটা বোঝার জন্য আমার আইন জানার দরকার নাই। এটুক বুঝি যে, নিজস্ব ফেসবুক পেজে যা তিনি করেছেন, সেটা সাবলীল ভঙ্গিমায় করেছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত বিকৃত করেননি। তার সক্ষমতাই অতটুকু। একটা মানুষ ওইভাবেই গাইতে পারেন। এমন না ইচ্ছা করে রবীন্দ্র সঙ্গীত বিকৃত করেছেন। তিনি যা পারেন, সেটা আমার রুচির সঙ্গে নাও যেতে পারে। আমি পছন্দ নাও করতে পারি। কিন্তু দেখলাম তিনি খুব আন্তরিকভাবে গাইছেন। তার মতো করে গাইছেন।"

সংশোধন বনাম শাস্তি দেয়ার প্রবণতা

বাংলাদেশে পুলিশের তহবিলের টাকায় সিনেমা তৈরির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আব্দুন নূর তুষার বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে পুলিশের ফান্ডে সিনেমা তৈরি হয়। সেই সিনেমাতেও প্রচুর আজগুবি বিষয় থাকে। ঢাকা অ্যাটাক নামে একটা ছবি হয়েছিল। সেখানে এমন কিছু দৃশ্য ছিল, যা বাস্তবে বেমানান। আমার মনে হয় "আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে’-এই নিয়মটা পালন করলে ভালো হতো।’’

"তবে পুলিশের পোশাকের বিষয়ে আমি একমত। কিন্তু সেক্ষেত্রে একা হিরো আলমকে না ডেকে একটা গণনোটিশ জারি করা যেত। পুলিশের পোশাকের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া যেত।"
হিরো আলমের সঙ্গে পুলিশের এই ব্যবহারে সমাজ ভয় পেতে শিখেছে বলে মনে করন আব্দুন নূর তুষার, "সমাজ ভয় পেতে শিখেছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে, আমি বেসুরো গান গাইতে পারবো না। সমাজ শুধুমাত্র হিরো আলমদের মতো দুর্বল কিংবা কম ক্ষমতাবান মানুষদের ওপর তার ক্ষমতা দেখায়। সমাজ এটা বুঝতে পেরেছে যে আমাদের এখানে বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক না, সামাজিক বৈষম্যও আছে। এখানে ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। যদি সত্যিই তাকে সংশোধন করা হতো তাহলে আমি খুশি হতাম। রবীন্দ্র সঙ্গীত বা নজরুল সঙ্গীত যারা গান, এমন কেউ তাকে গান শেখানোর জন্য প্রস্তাব দিতে পারতেন। তিনি যদি সেটা প্রত্যাখ্যান করতেন, তখন আমরা বুঝতাম আসলে গান শিখতে চান না, ইচ্ছাকৃত বেসুরো গান করেন। কিন্তু কেউ সেটা করেনি। আমাদের সমাজে সংশোধনের চাইতে শাস্তি দেয়ার প্রবণতাটা অনেক বেশি। যারা এই শাস্তি দেন তারা নিজেদের দিকে কখনো তাকান না।"

সীমানা কোথায়

দেশের অনেক রিয়েলিটি শো’তে এমন প্রতিযোগীদের দেখা যায়, সুরের ওপর যাদের তেমন দখল নেই। কিন্তু তাদের গানও টিভিতে দেখানো হয়। অনেকে নিজের ফেসবুকে এমন গান পোস্ট করেন, সুরের বিতর্কে যাকে ‘বেসুরো’ বলা হয়। সমাজে নামীদামী হিসেবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিকেও এমনভাবে গান করতে দেখা যায়। ভারতের প্রয়াত লোকসঙ্গীত-গবেষক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য তার জীবদ্দশায় নানা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "গানের কোনো ধর্ম নেই। গান সার্বজনীন।" এখন প্রশ্ন হলো তাহলে গানের কি সক্ষমতা বিষয়ক কোনো সীমানা আছে?

এ বিষয়ে সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার এবং সুরকার বাপ্পা মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, "আমি কখনো কাউকে জোর করতে পারি না যে তুমি গান করতে পারবে না। অভিনয় করবে না। তুমি লিখবে না। এটা আমি বলতে পারি না। আমার সেই অধিকার নেই।"

বাপ্পা মজুমদার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও একটা বোধের সীমারেখার কথা উল্লেখ করেছেন, "আমার বক্তব্য খুব পরিষ্কার। আমি যদি জানি, আমি অভিনয় পারি না; তাহলে আমার অভিনয় করা উচিত না। একইভাবে আমি যদি জানি, আমি গান গাইতে পারি না, তাহলে গান গাওয়া উচিত না। এটা খুব সহজ কথা। এই সীমানাটা আমাদের বুঝতে হবে। সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। বোঝার এই জায়গায় সবচেয়ে বড় গলদ তৈরি হচ্ছে।"
"আমরা যেসব অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে থাকি, সেখানে জাজমেন্টের একটা বিষয় থাকে। বাছাই করা হয়। সেই প্রক্রিয়াটাই টিভিতে দেখানো হয়। এই বাছাই প্রক্রিয়া থেকে আমরা ফিল্টার করি। কাকে দিয়ে হবে, চর্চা করলে কাকে দিয়ে পাঁচ বছর পরে হবে, সেটা দেখি। এখানে আমরা কিন্তু বাছাই প্রক্রিয়াটা দেখাই, তাদের প্রমোট করি না।’

সমাজের অনেক বিত্তবানও গান করেন, যাদের নিয়ে সমালোচনা আছে, তাদের পুলিশ কিছু বলছে না-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাপ্পা মজুমদার বলেন, "কেন বলা হলো না, কেন বলা হলো-এখানে বড় একটা বিতর্ক আছে। কথা বলতে গেলে প্রসঙ্গ অনেক লম্বা হয়ে যাবে। আমি শুধু বলতে চাই, আমরা যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি, আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্বপূর্ণ আচরণ দেখাতে হবে। অন্যথায় আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার যোগ্য নই।"

"আমি কারো নাম বলছি না। আমি মনে করি, আমি যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কনটেন্ট আপলোড করবো, তখন সেটা কিন্তু আর প্রাইভেট থাকছে না। সেটা কিন্তু সবাই দেখছে। এখানে সবার দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করা উচিত। এখন আমরা যে কনটেন্টগুলো দেখতে পাচ্ছি, সেগুলো আমাদের বোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সমাজে তার প্রভাব পড়ছে।" তথ্য সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।